পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের আঞ্চলিক শাখা কলকাতা থেকে সরিয়ে রাঁচি কিংবা গুয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা, তা কেন্দ্রীয় সরকারকে খতিয়ে দেখতে বলল সুপ্রিম কোর্ট।
৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভোপাল, পুণে ও কলকাতায় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের আঞ্চলিক শাখাগুলির কাজ শুরু করতে হবে বলে গত ১৫ মার্চ নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। ভোপাল এবং পুণেতে ট্রাইব্যুনালের কাজ শুরু হলেও কলকাতায় এখনও হয়নি। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেই দায়ী করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জি এস সিংভি এবং বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে আগাগোড়া সহযোগিতা করে এসেছে। রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের ১৫ মার্চের নির্দেশ না-মানায় জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আনেন। তার পরেই এ দিন কেন্দ্রকে নতুন জায়গা খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দু’বার সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। গত মঙ্গলবারই পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশ সম্পর্কে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে অসহযোগিতার কথা বলেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এক বছর আগে আমি উদ্যোগী হয়ে ওই ট্রাইব্যুনাল কলকাতায় আনতে চেয়েছিলাম। রাজারহাটের ফিনান্সিয়াল হাবে আমরা যে অফিস দেখিয়েছিলাম, সেটা ওদের পছন্দও হয়েছিলাম। তার পরেও কেন সুপ্রিম কোর্ট এমন মন্তব্য করল, তা বুঝতে পারছি না।” |
জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল |
• ২০১০ সালের জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী এই আদালত তৈরি হয় |
• পরিবেশ, বন, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করবে এই ট্রাইব্যুনাল |
• ট্রাইব্যুনালের মুখ্য কার্যালয় দিল্লিতে |
• আরও চার শহরে শাখা থাকবে ট্রাইব্যুনালের |
|
সুদর্শনবাবু জানান, বিচারপতিদের থাকার জন্য যে ধরনের বাড়ি জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল-কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, তা রাজ্য সরকার দিতে পারেনি। সরকার তার সামর্থ্য অনুযায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছিল। তাঁর মতে, পরবর্তী কালে হয়তো আরও ভাল আবাসনের ব্যবস্থা করা যেত। মন্ত্রী বলেন, “আমরা এখনও চাই, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ কলকাতায় হোক।” সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির দিন সরকারের তরফে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে বলে রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন।
কলকাতায় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ গড়ার উদ্দেশ্য ছিল দেশের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির পরিবেশ সংক্রান্ত মামলার বিচার করা। সেই বেঞ্চের পরিকাঠামো তৈরি এবং বিচারপতি নিয়োগের কাজ কতটা এগিয়েছে তা জানিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। সেই রিপোর্টে বলা হয়, কলকাতা বেঞ্চের পরিকাঠামো গড়ার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনও রকম সহযোগিতা করছেন না। জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ এ দিন ডিভিশন বেঞ্চকে জানিয়েছেন, কলকাতা বেঞ্চের জন্য ইতিমধ্যেই চার জন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। আরও চার জন বিচারপতি নিয়োগ করা হবে।
পরিকাঠামো সংক্রান্ত রিপোর্ট দেখে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন বলেছে, জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বেঞ্চ এখনও তার কাজই শুরু করতে না পারল না, এই ঘটনা দেশের পক্ষে দুর্ভাগ্যের। কলকাতা থেকে বেঞ্চ সরিয়ে গুয়াহাটি বা রাঁচিতে নিয়ে গেলে পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিবেশ রক্ষার কাজে সুবিধা হবে। |