উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী সাফল্য অর্জনের জন্য ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতা রুদ্ধশ্বাস। লোকসভায় যে রাজ্যের সর্বাধিক আসন, সেখানে এমন অগ্রিম তৎপরতা অস্বাভাবিক নয়, অভূতপূর্ব তো নয়ই। সর্বাগ্রে মাঠে নামিয়া পড়িয়াছে বিজেপি এবং মায়াবতীর দল বহুজনসমাজ পার্টি। কংগ্রেস যথারীতি এখনও প্যাড পরিতে পারে নাই। বিজেপির জাতীয় প্রচার কমিটির নবনিযুক্ত সভাপতি নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশে দলের তরফে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করিয়াছেন তাঁহার ঘনিষ্ঠ বলিয়া পরিচিত অমিত শাহকে, যিনি অযোধ্যার রামমন্দিরে গিয়া প্রার্থনা করিয়াছেন রামলালার জন্য একটি বিশাল মন্দির নির্মাণের। সেই সঙ্গে গোরক্ষপুরের যোগী অদ্বৈতনাথ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহন্ত অবৈদ্যনাথের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছেন তিনি। অন্য দিকে মায়াবতী শুরু করিয়াছেন তাঁহার ব্রাহ্মণ সম্মেলন বহুজন হইতে সর্বজনে উত্তরণের নির্বাচনী রণকৌশল।
এই কৌশল এক বার বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতীকে সুফল দিয়াছে, উত্তরপ্রদেশের তখ্তে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা লইয়া তাঁহার দল ক্ষমতাসীনও হয়। কিন্তু তাহার পরেই সর্বজন দূরস্থান, বহুজনও বিস্মৃত হয়, রাজ্য জুড়িয়া মুখ্যমন্ত্রী, তাঁহার রাজনৈতিক গুরু কাঁসি রাম এবং কোথাও কোথাও অম্বেডকর, রমাবাই, পেরিয়ার প্রমুখের বিপুলাকার মর্মরমূর্তি স্থাপনেই সরকারি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়। পশ্চিমবঙ্গে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখচ্ছবি না দেখিয়া বাড়ির বাহিরে পা বাড়ানো কিংবা বাড়িতে ফেরা সম্ভব নয়, মায়াবতী-শাসিত উত্তরপ্রদেশেও তেমনই তাঁহার মূর্তি-সন্দর্শন না করিয়া পথে-ঘাটে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না। দলিত অন্ত্যোদয় কিংবা সর্বজনের হিতের জন্য কর্মসূচি রূপায়ণে তাঁহার অরুচিই তাঁহাকে কালক্রমে গদিচ্যুত করে। এখন তিনি নূতন করিয়া সর্বজনের প্রতিনিধিত্ব হাসিল করিতে উদ্যোগী। ব্রাহ্মণ সম্মেলন করিয়া সেই সম্মেলন-মঞ্চ হইতে উচ্চবর্ণের প্রার্থীদের টিকিট দিবার ঘোষণা তাহারই ইঙ্গিত। রাজ্যের বর্তমান শাসক দল মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টি অবশ্য আরও আগেই টিকিট-বণ্টন পর্ব সারিয়া ফেলিয়াছে। বিজেপি ময়দানে নামিয়া রাজ্যের অন্তত অর্ধেক আসনে জয়ের লক্ষ্যে অগ্রসর হইতেছে। অমিত শাহের উদ্যোগ তাহারই অঙ্গ।
পাছে রামমন্দির প্রশ্নটি আবার বৃহত্তর ভোটারগোষ্ঠীকে বিরূপ করিয়া তোলে, তাই দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ আবার রামমন্দির একটি ধর্মীয় বিষয়, রাজনৈতিক প্রশ্ন নয়, উপরন্তু ইহা বর্তমানে শীর্ষ আদালতের বিচারাধীন, ইত্যাদি বলিয়া ভারসাম্য রক্ষায় সচেষ্ট। রাজনাথ সিংহ স্পষ্টতই ঘর-পোড়া গরুর প্রবচনটি জানেন। তবে সংখ্যালঘুরা এমনিতেই বিজেপির ভোটের ঝুলি ভরিয়া দিতে উন্মুখ নহে। তাই এ বিষয়ে এখনই দলের মাথাব্যথার হয়তো তেমন প্রয়োজন নাই। আগামী কয়েক মাস বলিয়া দিবে, সাবেক আর্যাবর্তের হৃদয়পুর উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী হাওয়া কোন দিকে বহিবে। আপাতত বাতাসে উত্তাপ বাড়িতেছে। |