দাম কম, কাশির ওষুধেই নেশা
হেরোইনের দাম বেশি, তা-ই কাশির ওই ওষুধেই মাদকের ‘স্বাদ’ নিচ্ছে মিজোরামের কিশোর-তরুণদের অনেকে!
চাহিদা তা-ই দিনদিন বাড়ছে ‘মেথ’-এর। পুরো নাম ‘মেথামফেটানিন’। আমেরিকা, কানাডায় যার ব্যবহার চর্বি কমানোর ওষুধ, স্নায়ুরোগ, ঘুমের ওষুধ তৈরিতে। উত্তর-পূর্বে সেটাই বদলেছে মাদকদ্রব্যে। নিরাপত্তাবাহিনীর নজর এড়িয়ে মিজোরামে ওই ‘ওষুধ’ ঢুকছে চিন, মায়ানমারের সীমান্ত হয়ে। পরে ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যে উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যগুলিতে।
মিজোরামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের প্রভাব রুখতে মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে চাঞ্চল্যকর ওই তথ্য উঠে এসেছে। মাদকের হাত থেকে পড়ুয়াদের বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ করার ছক কষছে রাজ্য সরকার। চলতি বছর জানুয়ারিতে ‘মাদক’ কাফ-সিরাপ খেয়ে ১৩ জন পড়ুয়ার মৃত্যুর জেরে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মাদকের ব্যবহার রুখতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেটির প্রধান হন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে মিজোরামের মাদক এবং শুল্ক বিভাগের কমিশনার লালবিয়াকমাওইয়া খিয়াংগতে জানান, চিন থেকে প্রচুর পরিমাণ ‘মেথ’ ঢুকেছে মিজোরামে। ১২ বছর আগেই রাজ্য শুল্ক দফতর ৬৭০টি মেথ ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করেছিল। এখন তার পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে বলে আশঙ্কা। পুলিশ জেনেছে, রাজ্যে অল্পবয়সী মাদকাসক্তরা ‘তি চিন’ নামে মেথ ট্যাবলেট ব্যবহার করছে। ওই মাদকের ক্রমাগত ব্যবহারে অনেকেরই ক্ষিদে কমে যাওয়া, স্নায়ু দৌর্বল্য, ঘাম হওয়া, অসময়ে দাঁত পড়ে যাওয়া, উত্তেজনা বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা, হতাশা, হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
‘সেন্ট্রাল ড্রাগ্স স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’-এর নিয়ম অনুযায়ী, কেটামিন, এফেড্রিন, সিউডোএফেড্রিন এবং মেথামফেটামিন এখনও পর্যন্ত নিষিদ্ধ মাদকের তালিকাভুক্ত নয়। এ দেশে বছরে কয়েক’শো মেট্রিক টন এফেড্রিন, কেটামিন ও সিউডোএফেড্রিন উৎপাদন করা হয়। যার অধিকাংশ বিভিন্ন ওষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নানা দেশে রফতানিও করা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কেটামিন থেকে ঘুমের ওষুধ তৈরি হয়। এফেড্রিন, সিউডোএফেড্রিন ব্যবহার হয় কাশির ওষুধ তৈরিতে। এই দু’টির মিশ্রণ থেকে সহজেই মেথামফেটামিন তৈরি করা যায়। নিষিদ্ধ না হওয়ায় ওই ওষুধ সহজে কেনাবেচাও করা হয়। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত হয়ে তা পাড়ি দেয় মায়ানমার, চিনে। পুলিশ জানিয়েছে, গত মাসেই মিজোরামে সাড়ে ১৩ কিলোগ্রাম এফেড্রিন উদ্ধার করা হয়। আজ ১০ কিলোগ্রাম এফেড্রিন-সহ গুয়াহাটিতে এম রাজু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২ জুলাই চাম্পাই সীমান্তে প্রচুর সিউডোএফেড্রিন-সহ ধরা পড়ে এক সিআইডি অফিসার।
মিজোরামের মাদক ও শুল্ক বিভাগ সূত্রে খবর, সীমান্তের কাছেই তৈরি হয়েছে মাদক তৈরির কারখানা। সেখানে কাশির ওষুধ থেকে মাদক তৈরি হচ্ছে। পরে তা ফের ঢুকছে ভারতে। টাকার লোভে মণিপুর ও মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে এফেড্রিন পাচার করতে গিয়ে সেনাকর্তা, বিধায়কপুত্র, বিমানকর্মী, পুলিশ অফিসার, জওয়ানও গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু, মিজোরামের অরক্ষিত সীমান্ত এখনও মাদক পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য।
মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, “এ সব ওষুধ এখনও এ দেশে প্রচুর রোগের নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। তা-ই এই মুহূর্তে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। সতর্ক থাকা ছাড়া তা-ই কোনও উপায় নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.