মাত্র ১০ কাঠা জমির অভাবে আটকে যাচ্ছে জামুরিয়ায় শ্যাম গোষ্ঠীর ইস্পাত প্রকল্প।
লগ্নিকারী সংস্থার অভিযোগ, জমি নিয়ে ফাটকাবাজি চলছে। ওইটুকু জমি না-মেলায় কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহণের জন্য রেললাইন পাতার কাজও সম্পূর্ণ হচ্ছে না। ফলে পরিকাঠামোর অভাবে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।
রাজ্য শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধী। সে ক্ষেত্রে শিল্পকে সরাসরি জমি কিনতে হলে ফাটকাবাজি ও দালালদের দাপট বাড়বে বলে গোড়া থেকেই আশঙ্কা ছিল শিল্পমহলের। অভিযোগ, রাজ্য প্রয়োজনে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও তা কার্যত সোনার পাথর -বাটি। শ্যাম গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা ওই আশঙ্কাকেই সত্যি প্রমাণ করছে, দাবি শিল্পমহলের। এ রাজ্যে নিজেরা জমি কিনে শিল্প গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে টাটা মেটালিক্স ও ভূষণ স্টিলও। ট্র্যাক্টর্স ইন্ডিয়া এখনও চাঙ্গুয়ালে তাদের কারখানার জন্য একলপ্তে জমি কিনে উঠতে পারেনি।
২০০৮-এ জামুরিয়ায় ইস্পাত কারখানা ও নিজস্ব ব্যবহারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দিতে গিয়ে শ্যাম গোষ্ঠী জানিয়েছিল তারাই জমি কিনবে। ৪০০ একরের মতো কিনে কারখানার প্রথম পর্যায় চালু করলেও পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা যায়নি। ৯,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই লগ্নি হয়েছে প্রায় ১,০০০ কোটি। সংস্থার অভিযোগ, পরিবহণ খরচ কমাতে রেলের নিকটবর্তী সাইডিং থেকে কারখানা পর্যন্ত ২ কিমি নিজস্ব রেললাইন পাতার কথা ছিল। কিন্তু মাঝে মাত্র ৩০ মিটার সংযোগ করা যাচ্ছে না ওই ১০ কাঠা জমি না-মেলায়।
৪০০ একর কিনতে পারলেও কেন ওইটুকু জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে? এখানেই ফাটকাবাজির অভিযোগ সংস্থার। তাদের দাবি, সংস্থা বাজারের চেয়ে কিছুটা বাড়তি দাম দিতে রাজি হলেও দর চাওয়া হচ্ছে ২০-২৫ গুণ বেশি। পণ্য পরিবহণের ঠিকাদারি বেশি দরে বিশেষ গোষ্ঠীকে দিতেও চাপ আসছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে কর্মীদের কাজে আসার সময়েও। সংস্থার মুখপাত্রের অভিযোগ, জমি জটের জন্য বকলমে দায়ী স্থানীয় কয়লা মাফিয়াদের একাংশ। তাদের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ রয়েছে বলে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে গোষ্ঠী।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও দ্বারস্থ হয়েছেন গোষ্ঠীর কর্তারা। মন্ত্রী জানান, স্থানীয় বিধায়ক ও পুলিশকে এর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাঁর প্রশ্ন, “ব্যক্তিগত জমি কেনাবেচায় রাজ্য কতটা কী করতে পারে?” অবশ্য অন্য কোনও কারণে শিল্পের যাতে সমস্যা না-হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
বছর তিনেকে আরেও ৩,০০০ কোটি টাকা লগ্নির পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার। তবে সংস্থার কর্তা ভূষণ অগ্রবাল বলেন, “দ্রুত সমস্যার সমাধান না-হলে নতুন লগ্নি করা মুশকিল হবে।”
|