কেন্দ্র চায় তালমিল, উল্টো সুর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের
র্থ মন্ত্রক চাইছে এক রকম নীতি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হাঁটছে অন্য পথে। অর্থ মন্ত্রক চাইছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করুক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উল্টে অর্থ মন্ত্রকের নীতিরই সমালোচনা করছেন। লোকসভা নির্বাচনের বছরখানেক আগে অর্থনীতিকে যতটা সম্ভব চাঙ্গা করতে এ বার তাই দিল্লির নর্থ ব্লক ও মুম্বইয়ের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে দূরত্ব কমাতে চাইছে মনমোহন সরকার।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বর্তমান গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর। তাঁর উত্তরসূরি খোঁজার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। নর্থ ব্লকের আমলারা বলছেন, এ বার এমন কাউকে নির্বাচন করা হবে, যিনি মনমোহন সিংহ, পি চিদম্বরমের নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবেন। সেই অনুযায়ী পরবর্তী গভর্নর হওয়ার দৌড়ে যে তিন জন এগিয়ে আছেন, তাঁরা হলেন রঘুরাম রাজন, অরবিন্দ মায়ারাম এবং সৌমিত্র চৌধুরী। রঘুরাম ও অরবিন্দ অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের ‘কোর টিম’-এর সদস্য। প্রথম জন অর্থমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। দ্বিতীয় জন অর্থ বিষয়ক সচিব। প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর চিদম্বরম অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই দু’জন নর্থ ব্লকে পা রেখেছেন। দৌড়ে রয়েছেন যোজনা কমিশনের সদস্য, অর্থনীতিবিদ সৌমিত্র চৌধুরীও। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সুব্বারাও
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, অর্থনীতির হাল যখন মোটেই ভাল নয়, ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়তে পড়তে আজ ৬১ টাকার ঘরে ছুঁয়ে ফেলেছে, তখন দেশের মুদ্রা বা ঋণ নীতির হঠাৎ করে পরিবর্তন হওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সে ক্ষেত্রে সুব্বারাওকেই আরও এক বছর গভর্নরের পদে রেখে দেওয়া উচিত। কিন্তু সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা এই যুক্তি মানবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরদের মেয়াদ হয় ৫ বছর। সুব্বারাওকে প্রথমে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে তাঁর মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ানো হয়।
শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, তা অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার পরেই ঠিক হবে। রঘুরাম আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০০৮ সালের বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার ভবিষ্যৎবাণী তিনিই প্রথম করেছিলেন। কিন্তু তিনি বেশির ভাগ সময়টাই ভারতের বাইরে কাটিয়েছেন, এই যুক্তিও রয়েছে তাঁর বিপক্ষে। অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্র আবার বলছে, রঘুরামকে নিয়েই আসা হয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে বসানোর জন্যই। সুব্বারাওয়ের মেয়াদ শেষের অপেক্ষা পর্যন্ত তাঁকে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অরবিন্দ মায়ারাম আবার অর্থ মন্ত্রকের যুগ্মসচিবের পদ থেকে কাজ শুরু করে এখন অর্থ বিষয়ক সচিবের দায়িত্বে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস আবার তাঁর পক্ষে। সুব্বারাও এবং তাঁর পূর্বসূরি ওয়াই ভি রেড্ডি, দু’জনেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ আমলা হিসেবে কাজ করেছেন। সৌমিত্রবাবুর পক্ষে যুক্তি, যোজনা কমিশনের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য দেশের অর্থনীতির সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত।
অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্র বলছে, শুধু সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে নীতির সমন্বয় নয়, শিল্প মহলের সঙ্গেও ভোটের আগে বোঝাপড়া বাড়াতে চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রী তাই আগামী ২৯ জুলাই দেশের তাবড় শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কথা হবে চালু খাতায় লেনদেনের ঘাটতি ও টাকার পতনের ফলে শিল্পমহলের সমস্যা, উৎপাদনকে চাঙ্গা করার উপায় এবং দিল্লি-মুম্বই, অমৃতসর-কলকাতা ও চেন্নাই-বেঙ্গালুরু শিল্প করিডর নিয়ে। খাদ্য সুরক্ষা আইন করে আম-আদমিকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা হলেও তাতে যে শিল্পমহলের মন জয় করা যাবে না, সরকার তা জানে। বিশেষ করে খাদ্য সুরক্ষা কার্যকর করতে গিয়ে ফের কোষাগারে ঘাটতি মাথাচাড়া দেবে কি না, তা নিয়েও শিল্পমহলের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শিল্পমহলের হতাশা রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রক্ষণশীল নীতি নিয়েও। এই বিষয়েও তাদের আশ্বস্ত করতে চান মনমোহন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.