প্রায় ছুঁয়েছে মোদীর বয়স, টাকা কি ছাড়াবে সনিয়াকে
সঙ্কট ঘিরে রঙ্গ, মার্কিন-শরণে চিদম্বরম
র্থ মন্ত্রকের অলিন্দে জোর রসিকতা চলছে। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ আমেরিকা রওনা হয়েছেন। সেখানে গিয়েই তিনি নাকি প্রথমে মার্কিন ফেডেরাল ব্যাঙ্কের প্রধান বেন বার্নানকে-র দ্বারস্থ হবেন। কারণ মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প চালু রয়েছে, বার্নানকে তা গুটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দেওয়ার পরেই এ দেশে টাকার দাম হু-হু করে নামতে শুরু করেছে। গত কাল ডলারে টাকার দাম ৬১-র নীচে নেমে গিয়েছে। আজ টাকার দামে খুব সামান্য (৪৭ পয়সা) উন্নতি হলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ আসলে ‘কানার মধ্যে ঝাপসা’। টাকার দাম আরও নেমে ৭০-এর ঘরে গিয়ে পৌঁছতে পারে। টাকার দামের পতন রুখতে তাই চিদম্বরম আমেরিকা পৌঁছেই বার্নানকে-র কাছে ছুটবেন বলে জল্পনা চলছে। আপাত ভাবে রসিকতা, তবে চিদম্বরম-বার্নানকে বৈঠক নিয়ে এই জল্পনাই কিন্তু মনমোহন সরকারের হাত-পা বাঁধা করুণ দশার ছবি।
রাজধানীতে রাজনীতিকদের মধ্যে এখন চালু রসিকতা হল, টাকার দাম নরেন্দ্র মোদীর বয়স অর্থাৎ প্রায় বাষট্টি ছুঁতে চলেছে। এ বার তা সনিয়া গাঁধীর বয়সও ছুঁয়ে ফেলবে। অর্থাৎ ছেষট্টি ছাড়াবে। আগামিকাল বার্নানকে ফের ফেডেরাল ব্যাঙ্কের নীতি নিয়ে মুখ খুলবেন। এর পরে টাকার দামে আর এক দফা পতনের আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর সরকারি সফরসূচিতে অবশ্য বার্নানকে-র সঙ্গে বৈঠকের কথা নেই। বলা হয়েছে ওয়াশিংটনে চিদম্বরম বক্তৃতা দেবেন ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদের সভায়। ভারতে বিদেশি লগ্নি টানতে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও বৈঠকে বসার কথা। কিন্তু টাকার দাম নামছে দেখে বিদেশি সংস্থাগুলি যখন লগ্নি তুলে নিচ্ছে এ দেশ থেকে, মনে করছে আমেরিকায় বিনিয়োগ করাটাই বেশি লাভজনক হবে, তখন মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চিদম্বরমের বৈঠক কার্যত উলু বনে মুক্তো ছড়ানো হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, টাকার পতন রোখার কাজটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। সরকারের এ বিষয়ে বিশেষ কিছু করার নেই। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দায়ী আসলে সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব। কাল হয়েছে বিদেশি লগ্নির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও। তবে উভয় পক্ষই মানছেন যে, টাকার দামে পড়ে যাওয়ার ধাক্কাটা গিয়ে লাগবে আম জনতার পকেটেও। অশোধিত তেলের আমদানির খরচ বাড়বে। যার জেরে ফের বাড়াতে হবে ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম, পরিবহণের বাড়তি খরচ দাম বাড়াবে প্রায় সমস্ত খাদ্যপণ্যেরই। অধিকাংশ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার আঁচ পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের দামে। বিদেশে পড়াশোনার খরচ বা বিমান ভাড়ার বৃদ্ধি তো আছেই।
টাকার দামের পতন নিয়ে গত কালই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সি রঙ্গরাজন, যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের সঙ্গেও কথা বলেন।
মার্কিন ফেডেরাল ব্যাঙ্কের প্রধান
বেন বার্নানকে কী ঘোষণা করবেন আজ?
আরও পড়বে টাকা? চিন্তায় ভারত।
সুচিতে নেই। দিল্লিতে চলছে রসিকতা,
চিদম্বরম আমেরিকা পৌঁছেই বার্নানকে-র
দ্বারস্থ হবেন টাকার ঝাঁপ ঠেকাতে।
এর আগে টাকার দাম ষাটের নীচে নেমে যাওয়ার পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করায় টাকার দামে সামান্য উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার শিকড় যে অনেক গভীরে, টাকার অব্যাহত অধোগতিই তার প্রমাণ। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা সেবি-র হস্তক্ষেপে টাকার দামের পতন সাময়িক ভাবে রোখা গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে কোনও লাভ হবে না। কারণ টাকার দামের পতনের পিছনে রয়েছে বিদেশি লগ্নির বিদায় ও চলতি খাতে লেনদেনে ঘাটতি বা বৈদেশিক মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ফারাক। এবং এই সব ক্ষেত্রে কোনও বদল হচ্ছে না। মনমোহন সরকারের নীতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তাও দূর হচ্ছে না লগ্নিকারীদের মধ্যে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অনেকটাই দুষ্টচক্রের মতো পরিস্থিতি। ভারতীয় অর্থনীতির যে সব সমস্যার কারণে টাকার দাম কমছে, টাকার দাম কমার ফলে সেই সমস্যাগুলি আরও বড় হবে। এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত টাকার দাম প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে চলতি খাতে লেনদেনের ঘাটতি ফের বাড়বে। কারণ, আমদানির খরচ বাড়ছে। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি আরও লগ্নি তুলে নিতে পারে। ডলার-টাকার বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত নতুন লগ্নি আসবে না। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারে টান পড়বে। যে সব সংস্থা বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েছে, ডলার দামি হয়ে যাওয়ায় তাদের ঋণের বোঝা বাড়বে। আমদানি করা কাঁচামালের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কর্পোরেট সংস্থাগুলির লাভের অঙ্ক কমবে। সরকারের ভর্তুকির বোঝা বাড়বে। সমস্ত জিনিসপত্রেরই দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা কমবে।
নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা এবং টাকার দামের পতনের ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষেও সুদ কমানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যার ফলে সুলভে ঋণের ব্যবস্থা করে মনমোহন-চিদম্বরম যে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে চাঙ্গা করার স্বপ্ন দেখছিলেন, তা দিবাস্বপ্নই থেকে যাবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.