নির্দল হয়েই লড়ছেন বিক্ষুব্ধেরা
কোন তৃণমূল জিতবে, ফলের অপেক্ষায় কসবা
সিপিএম নয়। এমনকী কংগ্রেস-বিজেপিও নয়। এখানে তৃণমূলের লড়াই তৃণমূলেরই সঙ্গে। আরও স্পষ্ট করে বললে এখানে লড়াই ‘তৃণমূল’ বনাম ‘নির্দল-তৃণমূলে’।
কসবা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাই তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই শিরোনামে। কোথাও দেওয়াল লিখনে, কোথাও প্রচারে তা প্রকাশ্যে হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীকে নিয়ে ফলাও করে দেওয়াল লিখন করছে এক গোষ্ঠী, তো ঠিক তারই পাশে দেখা যাচ্ছে দলের প্রতীক না পাওয়া নির্দল প্রার্থীর নামে ভোটে জয়ী করার আবেদন করছে ‘তৃণমূলই’। দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর অনুগামীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই তোপ দাগছেন বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা। যার জেরে ঘোর অস্বস্তিতে বীরভূমের তৃণমূল নেতৃত্ব।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বোলপুর মহকুমায় শাসক দল ছাড়া আর প্রায় কোনও দলই নিজেদের প্রার্থী দিতে পারেনি। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের সন্ত্রাসেই তাঁরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেননি। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ কখনই মানেনি। ফলে বোলপুরের বেশির ভাগ পঞ্চায়েতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তবে কসবা পঞ্চায়েতের চিত্রটা একটু আলাদা। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই কোনও বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। তৃণমূলের দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়াই করা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ওই পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূলেরই ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠী। ফলে মুখোমুখি লড়তে দেখা যাচ্ছে লক্ষ্মী বাগদি ও পার্বতী বাগদিদের। কসবা পঞ্চায়েতের উত্তর সংসদের বাসিন্দা না হয়েও দলীয় প্রতীক ছাড়াই লড়ছেন দলের জেলা সভাপতি-গোষ্ঠীর প্রার্থী লক্ষ্মীদেবী। আবার তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই হচ্ছে দলীয় প্রতীক পাওয়া গদাধর-গোষ্ঠীর প্রার্থী পার্বতীদেবীর। একই ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন দুই তৃণমূল কর্মী শেখ বিরাজুল ও লুৎফার রহমানও।

‘নির্দল-তৃণমূল’ ও ‘তৃণমূলে’র দেওয়াল লিখন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েতের মোট ১২টি আসনে দলেরই ২৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে দলের জেলা সভাপতি গোষ্ঠীর ১১ জন দলীয় প্রতীক পেয়ে লড়ছেন। অনুব্রত বিরোধী নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরার অনুগামীরাও প্রতিটি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছেন। তাঁদের একজন দলীয় প্রতীক পেলেও বাকিরা কিন্তু ‘নির্দল’ হয়েই ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন। বাকি দুই প্রার্থীও তৃণমূলেরই ‘ডামি প্রার্থী’ বলে খবর। দু’পক্ষই পঞ্চায়েত ভোটে দলের জেলা পর্যবেক্ষকের (রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক) কাছে থেকে দলীয় প্রতীক পেয়েছিলেন বলে দাবি। যে প্রার্থী আগে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন তাঁকেই দলের প্রতীক দিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলায় অনুব্রতবাবুর প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত নানুরের তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরা। তাঁর অনুগামীরা এলাকায় যথেষ্ট সক্রিয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে মাঠে নেমে নির্বাচনী প্রচারে জেলা সভাপতি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেও দেখা গিয়েছে তাঁদের বহু বরিষ্ঠ নেতাকর্মীকেই। ওই অঞ্চলে দলের প্রাক্তন যুব সভাপতি তথা বোলপুর ব্লক তৃণমূল কমিটির সদস্য উদয় ঘোষের ক্ষোভ, “এলাকায় ১৯৯৮ সাল থেকে যাঁরা তৃণমূল করছেন, দল তাঁদের কথা ভাবলই না। তাই ওই পঞ্চায়েতে ১২টি আসনেই আমাদের কর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন দলের প্রতীক পেলেও বাকি ১১ জন দলের প্রতীক পাননি।” তাঁর দাবি, “মনোনয়পত্র জমা দিতে একদিন দেরি হয়ে যাওয়ায় ১১টি আসনে ওরা (অনুব্রত-গোষ্ঠী) দলীয় প্রতীক পেয়ে যায়।” একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল ওই গোষ্ঠীর অঞ্চল সভাপতি নিখিল পালের মুখেও। তাঁর কথায়, “জোর করে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের মনোনীত প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। দলের প্রতীক না পেলেও আমাদের সব প্রার্থীই জিতবেন।”
তাঁদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়ছেন অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত দলের সাত্তোর অঞ্চলের সম্পাদক তথা সদ্য ওই সংসদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী শেখ মুস্তফাও। তিনি বলেন, “ওরা তোলাবাজ, এলাকায় সন্ত্রাস করে। তৃণমূলের নাম ভাঁড়িয়ে প্রচার করছে। মানুষ ব্যালটে তার জবাব দেবেন।” তাঁরও দাবি, “আমরাই আসল তৃণমূল। ওখানকার ভোটারেরা আমাদের প্রার্থীদেরই জেতাবেন।” সিপিএম-কংগ্রেসহীন ভোটের বাজারে দুই তৃণমূলের এমন লড়াইয়ে ভ্রু কুঁচকেছে এলাকাবাসীরও। তাঁরা একটু আশঙ্কিতও বটে। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর ঘোষ, রাজেশ পাল, মানোয়ারা বিবি, আব্দুল হামিদরা বলছেন, “দু’ পক্ষই তৃণমূলের। তাদের মধ্যেই আবার গণ্ডগোল! আমরা শান্তিকামী মানুষ, শান্তি চাই।”
উদয়বাবুরা কিন্তু বলছেন, “এলাকায় কান পাতলেই শুনতে পাবেন, কারা লুঠপাট চালায়, সন্ত্রাস করে। ভোটের ময়দানেই আসল বিচার হবে। দলীয় প্রতীক নয়, মানুষই শেষ কথা বলবেন। তাঁরাই জানেন কারা প্রকৃত তৃণমূল। আমরাই জয়ী হব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.