শাসকদলের ঘর ভাঙছে কংগ্রেস
তৃণমূলই এখানে কংগ্রেসকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এতটাই যে, কংগ্রেস ভোট কেটে তৃণমূলকে কতটা বেগ দেবে, তার উপরে নির্ভর করছে সিপিএমের রাজনৈতিক ভাগ্য। চিত্রটা পুরুলিয়ার সবচেয়ে বড় ব্লক কাশীপুরের। বিধানসভা ভোটের পরে এই অঞ্চলের স্কুল-কলেজ, সমবায় সমিতির নির্বাচনের ফলে স্পষ্ট কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে সিপিএম। যদিও কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার দাবি, “নির্বাচনে কংগ্রেস কোনও ফ্যাক্টরই হবে না!”
পুরুলিয়ার উত্তর অংশে কংগ্রেস কখনওই শক্তিশালী নয়। কাশীপুরের ছবিটা অবশ্য এ বার কিছুটা আলাদা। এখানে কংগ্রেস সংগঠন গড়েছে তৃণমূলকে ভেঙেই। বর্তমান ব্লক কংগ্রেস সভাপতি কার্তিক মালাকার আগে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলেন। দলের বেশিরভাগ নেতাই তৃণমূল থেকে আসা। তার উপরে রয়েছে সম্প্রতি বেকো, সিমলা ধানাড়া, কালীদহ অঞ্চলে তৃণমূল থেকে বিক্ষুব্ধদের একটা অংশ কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ঘটনা। এ বার ব্লকের মোট ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ৯৫টিতে। বাকিগুলিতে জেএমএম এবং জেডিপি-র সঙ্গে জোটে লড়ছে তারা। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৩টির মধ্যে কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছেন ২৯টিতে। জেলা পরিষদের দু’টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। গত কুড়ি বছরে কাশীপুরে এই সংখ্যায় প্রার্থী কংগ্রেস দিতে পারেনি।
একান্ত আলাপচারিতায় কংগ্রেস নেতারা মানছেন, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের পাশে না পেলে এই সংখ্যায় প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হত না। যেমন বেকো গ্রাম পঞ্চায়েত। এখানে বরাবর হাতে গোনা প্রার্থী দিতে পারা কংগ্রেস পঞ্চায়তের ১৫টি আসনের মধ্যে মধ্যে দশটিতে প্রার্থী দিয়েছে। সৌজন্যে ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সাধন চৌধুরী। যিনি সদ্য অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেসে ঢুকেছেন। সাধনবাবু নিজে কংগ্রেসের টিকিটি কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থীও হয়েছেন। একই চিত্র সিমলা, ধানাড়, কালীদহ এলাকাতেও। সেখানকার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি (আদি তৃণমূ হিসাবে পরিচিত) প্রেমচাঁদ মাহাতো, হরেন্দ্রনাথ মাহাতোরা বিক্ষুব্ধ হয়ে অনুগামীদের নিয়ে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। ওই এলাকাগুলিতে তৃণমূল ছেড়ে আসা ব্যক্তিদের প্রার্থী করে তৃণমূলের ভোটে ভাগ বসানোর বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী কংগ্রেস।
দলের মধ্যে এই বিদ্রোহ সমস্যায় ফেলেছে তৃণমূলকেও। বড়রা অঞ্চলে এ বার টিকিট পাননি আগের পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা বরুণ বাউরি। বিক্ষুব্ধ তিনিও। সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের পুরনো অনেক নেতা-কর্মীই সামিল হয়েছেন ‘অঞ্চল উন্নয়ন জোটে’। গতবার এসইউসি, জেএমএম এবং তৃণমূলের জোট সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েত দখল করেছিল। তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য সহদেব মাহাতোর অভিযোগ, “বিধায়কের কাছে আমাদের প্রস্তাব ছিল, এ বারও জোট গড়ে লড়াই করে পঞ্চায়েতের দখল বজায় রাখা হোক। কিন্তু, উনি প্রার্থী দিয়েছেন। এলাকার মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না বলেই আমরা অঞ্চল উন্নয়ন জেোটে রয়েছি।” ব্লক কংগ্রেস সভাপতি কার্তিকবাবুর ক্ষোভ, “দুর্দিনে তৃণমূলের সাথে থাকা নেতা-কর্মীরা প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেনা। আমরা আগেই প্রতিবাদ করে তৃণমূল ছেড়েছিলাম। এ বার ১৩টি অঞ্চলেই তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী আমাদের সাথে এসেছেন। তার মাসুল তৃণমূলের বিধায়ককে গুনতেই হবে।”
তৃণমূলের এই দ্বন্দ্বে নিজেদের ফায়দা দেখছে সিপিএম। বিধানসভাতে তিন হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা সিপিএমকে উজ্জীবিত করছে তৃণমূল-কংগ্রেসের ভোট কাটার অঙ্ক। হিসাব কষেই সিপিএম দেখাচ্ছে, ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বিধানসভায় চারটিতে ‘লিড’ ছিল তাদের। সোনাইজুড়িতে ব্যবধান ছিল ২০ ভোটেরও কম ভোটে। সিপিএমের কাশীপুর জোনাল কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এ বার তৃণমূল-কংগ্রেস জোট নেই। কংগ্রেস প্রার্থী দিলে তৃণমূলের ফল খারাপ হয়, তার প্রমাণ কলেজ ও স্কুলের ভোটেই হয়েছে। তাই ভাল ফলের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।”
সিপিএমের এই অঙ্ক উড়িয়ে বিধায়ক স্বপনবাবুর দাবি, “বিধানসভা ভোটে আমাকে হারাতে নির্দল দাঁড় করিয়েও কিছুই করতে পারেনি। তাছাড়া কংগ্রেস সিপিএমকে সুবিধা দিতেই প্রার্থী দিচ্ছে, সেটা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। ফলে, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত আমরাই দখল করছি।” কংগ্রেসে যোগ দেওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে বিধায়কের মন্তব্য, “দলে থেকে তোলাবাজি, দুর্নীতি করছিল বলে ওই কর্মীদের আমরা আগেই দল থেকে তাড়িয়েছিলাম!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.