বন্ধ পড়ে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, সমস্যায় পুরসভা
দু’মাস ধরে বেতন না পেয়ে এক দিকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা। অন্য দিকে , বিল বাকি থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দিয়েছেন দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। তার জেরে ২৮ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে দুর্গাপুরের কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি। পুরসভা আবর্জনা ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। শহরের বিভিন্ন জায়গায় জঞ্জালের স্তুপের বহর বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহেরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দে ও একটি বেসরকারি সংস্থার লগ্নিতে ২০১০ সালে দুর্গাপুরের শঙ্করপুরে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সে বছরের ৩ অক্টোবর কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। আগে পুরসভা বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের কাছাকাছি একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফেলত। দুর্গন্ধে এলাকা দিয়ে যাওয়া যেত না। শঙ্করপুরে ওই কেন্দ্রটি গড়ে ওঠার পরে পরিস্থিতি বদলায়। শহরের সব বর্জ্য নিয়ে গিয়ে জড়ো করা হয় সেখানে। তা প্রক্রিয়াকরণ করে সার বা বিশেষ ধরনের ইট তৈরির ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। কিন্তু প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় কোথায় আবর্জনা ফেলা হবে, তা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
কারখানার ভিতরে ডাঁই হয়ে রয়েছে শহরের আবর্জনা। —নিজস্ব চিত্র।
ওই কেন্দ্রে একটি বেসরকারি সংস্থার ৪৫ জন শ্রমিক এবং ১১২ জন ঠিকা শ্রমিক কাজ করেন। কর্মীদের অভিযোগ, বছর তিনেক তাঁরা এখানে কাজ করছেন। কোনও মাসেই নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পান না। গড়ে দু’মাস পিছিয়ে বেতন দেওয়া হয়। নিয়মিত পিএফ কাটা হলেও তা জমা করা হয় না বলে অভিযোগ। হৃষিকেশ দাস নামে এক কর্মী বলেন, “আমার এক সহকর্মী ইনসান মিঞা ব্যক্তিগত দরকারে পিএফ থেকে ‘অ্যাডভ্যান্স’ নিতে গিয়ে দেখেন, গত ৬ মাস টাকা জমা পড়েনি।” কর্মীদের আরও অভিযোগ, ৮ ঘন্টার জায়গায় গড়ে ১২ ঘণ্টা তাঁদের কাজ করতে হয়। সেজন্য অতিরিক্ত অর্থও তাঁদের দেওয়া হয় না। এখনও গত পুজোর বোনাস দেওয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় ইতিমধ্যে ৬ জুলাই থেকে ওই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছে বলে ডিপিএল সূত্রে খবর। ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ এর লাইনের ‘আইসোলেটর সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। বিল মিটিয়ে দিলে সিল খুলে দিলেই ওই কেন্দ্রে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ডিপিএলের এক আধিকারিক। কারখানার ভিতরে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই বেশ কিছু কর্মীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় জল নেই, ক্যান্টিন বন্ধ। তাঁদেরই একজন বলেন, “আমরা ৩৫ জন কারখানার ভিতরে থাকি। চারদিকে পোকা, মাছি ভনভন করছে। দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। দিনে বাইরে বাইরে কাটাচ্ছি। কিন্তু কী করে যে রাত কাটছে, তা কেবল আমরাই জানি!”
তবে কর্মীদের অভিযোগ বা বাকি থাকা বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য অন্যতম লগ্নিকারী এবং পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার এজিএম কায়ুম আনসারি। তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। যা বলার এমডি বলবেন।” এমডি নাদিম ফার্নিচারওয়ালার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।
এ দিকে, কেন্দ্র বন্ধ থাকায় শহরের আবর্জনা কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলা হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, আবর্জনা বোঝাই লরি শহরের নির্জন কোনও স্থানে নিয়ে গিয়ে মর্জিমাফিক খালি করে দিচ্ছেন পুরসভার সাফাই কর্মীরা। তা নিয়ে বচসা বাধছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সাফাই কর্মীদের। এমনকি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডিসিএল কলোনির কাছে বাসিন্দাদের হাতে কয়েকজন সাফাইকর্মী প্রহৃতও হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই সংস্থার কাজকর্মে আমরা হতাশ। বাধ্য হয়ে শনিবার দুর্গাপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.