তিন বছর বয়স হাতিটির। কোনও ভাবে দলছুট হয়ে পড়ে যায় চা বাগানের নালায়। চার পা আকাশের দিকে। শরীরটা আটকে রয়েছে ছোট নালায়। চিৎপাত অবস্থা থেকে পাশ ফেরার অনবরত চেষ্টা সফল হচ্ছে না। ক্রমশ নালার কাদার মধ্যে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে শরীরটা। একটানা আর্তনাদ চলছে। যা শুনে গ্রামবাসীরা ছুটে গিয়ে পায়ে গামছা, চাদর বেঁধে প্রায় ২৫ জন মিলে টেনে তুলেছেন। তার পরে এ দিক-ও দিক ছুটে বেড়িয়ে পায়ে গামছা বাঁধা অবস্থায় লাগোয়া জঙ্গলে দলের মধ্যে ফিরে গিয়েছে হাতির বাচ্চাটি। সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে কালচিনি ব্লকের মেচপাড়া চা বাগানের ১৪ নম্বর সেকশনে। হস্তি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, “বাচ্চাটিকে মা-হাতি ফিরিয়ে নেবে। গামছা বাঁধা থাকলে অসুবিধের কিছু নেই। বর্ষার জলে ওটা পচে যাবে।”
হাতির শরীরে মানুষের ছোঁয়া লাগলে দল সাধারণত ফেরত নেয় না। সে কথা বাগানের অনেকেই জানতেন। সে জন্য আলতো করে পায়ে গামছা, চাদর বেঁধে টেনে তুললেও কেউ হস্তিশাবকটিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেননি। যা শোনার পরে ওই বাসিন্দাদের উৎসাহ দিতে সেখানে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। তিনি বলেন, “কর্মীরা পৌঁছনোর আগে শাবকটিকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করেছেন। এটা শুনে ভাল লাগল। বন্যপ্রাণ সপ্তাহে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করব। নিজেও গিয়ে ওঁদের উৎসাহ দেব।” বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি অপূর্ব সেন জানান, সকালে ৫টা নাগাদ হ্যামিল্টনগঞ্জের রেঞ্জ অফিসার মধুর মিলন ঘোষ খবর পান, একটি বছর তিনেকের হস্তি শাবক চা বাগানের নালায় আটকে পড়েছে। তিনি সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘটনাস্থলে যান। তার আগেই গ্রামবাসীরা গামছা ও চাদর বেঁধে হস্তিশাবকটিকে নালা থেকে টেনে ওঠান। জঙ্গলে ফিরলেও হাতির বাচ্চাটিকে মা গ্রহণ করল কি না সে দিকে নজর রাখছেন বনাধিকারিকরা। মেচপাড়া চা বাগানের ট্রাক্টর চালক নারায়ণ ওরাঁও জানান, রাত ১ টা নাগাদ হাতির চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। সেই সময় এলাকার বেশ কিছু লোকও ওই চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু বৃষ্টি ও অন্ধকার থাকায় ফের তাঁরা ঘরে ঢুকে যান। ভোরবেলা ১৪ নম্বর সেকশনে গিয়ে তাঁরা দেখেন, মা হাতিটি দূরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। নালার মধ্যে বাচ্চা হাতিটি চিৎপাত হয়ে পড়ে আছে।
নারায়ণবাবুদের দেখে মা-হাতি জঙ্গলে ঢুকে যায়। সেখানে আরও ৪-৫টি হাতি ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে শতাধিক বাসিন্দা জড়ো হন। নারায়ণবাবু বলেন, “প্রথমে মাটি সরানোর চেষ্টা করি। তাতে লাভ হয়নি। পরে হাতিটির সামনের ডান পায়ে গামছা বাঁধি। আমার সঙ্গে রামু ওরাঁও, রেজাউল আনসারিরা গামছা ধরে ওকে টানার চেষ্টা করে। বাচ্চা হাতি হলে কি হবে, একটু পা নড়াতে তিন জন ছিটকে যাই। আরও লোকজন এগিয়ে আসেন।” তাতেও হাতিটি নড়েনি। তখন পেছনের ডান পায়ে একটি গামছা বাঁধা হয়। ৮ নম্বর লাইনের এক শ্রমিক প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা চাদর হাতিটির সামনের বাঁ পায়ে বাঁধে। ২০-২৫ জন মিলে হাতিটিকে টানতেই হাতিটি সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
চা বাগানের ২ নম্বর লাইনের বাসিন্দা রেজাউল আনসারি বলেন, “বাচ্চাটি উঠে দাঁড়াতেই আমাদের দিকে ধেয়ে আসে। আমরা পালাই। গামছা বাঁধা অবস্থায় হাতির বাচ্চাটি ঘন্টা দেড়েক ঘোরাঘুরি করে ওর মা যে দিকে জঙ্গলে ঢুকে ছিল সেই দিকে চলে যায়।” |