সম্পাদকীয় ২...
(অ)ভাবমূর্তি
শরাত জাহান সন্ত্রাসবাদী বা সন্ত্রাসবাদীদের সহিত জড়িত ছিলেন কি না, তিনি এবং তাঁহার সঙ্গীরা নয় বছর আগে ভুয়া সংঘর্ষে নিহত হইয়াছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের সদুত্তর তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু এই উপলক্ষে একটি মৌলিক সত্য স্মরণ করা প্রয়োজন, কারণ সত্যটি অনেক সময়েই বিস্মৃত হয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোনও সন্ত্রাসবাদীকেও ভুয়া বা সাজানো সংঘর্ষে হত্যা করিতে পারে না। যত বড় অপরাধীই হউক না কেন, প্রত্যেককে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাইয়া যথাবিহিত বিচারের আয়োজন করাই সেই রাষ্ট্রের কর্তব্য। এই কারণেই আজমল কসাবের মতো সন্ত্রাসীকেও সেই বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়া লইয়া যাইতে হয়, তাহার পক্ষে সওয়াল করিবার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করিতে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হইতে হয়। অনেক অপরাধে অভিযুক্তের বিচারের ক্ষেত্রেই প্রশ্ন ওঠে, সমস্ত বিধি ঠিক ঠিক অনুসৃত হইয়াছে কি না। কেবল এ দেশে নয়, পশ্চিম দুনিয়াতেও এই প্রশ্ন সুলভ। সুবিচার কেবল অপরাধীর পক্ষে জরুরি নয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আপনার পক্ষেও জরুরি। সাজানো সংঘর্ষে অভিযুক্তকে হত্যা করিয়া ‘দ্রুত বিচার’ নিষ্পন্ন করিবার কোনও অধিকার কখনও প্রশাসনের থাকিতে পারে না, তাহা কেবল ভয়ঙ্কর অবিচার নয়, তাহা ঠান্ডা মাথায় হত্যা। এই ধরনের ঘটনা প্রশাসনের পক্ষে দুরপনেয় কলঙ্ক, তাহা রাজ্যের প্রশাসনই হউক, কেন্দ্রের প্রশাসনই হউক। ইশরাত জাহান ও তাঁহার সঙ্গীদের মৃত্যুর ঘটনা সেই কারণেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই তাহার যথার্থ তদন্ত অত্যাবশ্যক।
এই তদন্তপ্রক্রিয়ার সূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রশাসনের যে মূর্তি বিজ্ঞাপিত হইয়াছে, তাহা গৌরবের নয়, চরম লজ্জার। দুইটি কেন্দ্রীয় সরকারি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান তথা বিভাগ, সি বি আই এবং আই বি এই ‘ভুয়া সংঘর্ষ’ লইয়া যে ভাবে পারস্পরিক দ্বৈরথে অবতীর্ণ হইয়াছে, তাহা কেবল অভূতপূর্ব নহে, অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই দ্বৈরথের পিছনে দলীয় রাজনীতির ভূমিকা কতখানি, কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধান শাসক দল কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীকে সমস্যায় ফেলিবার জন্য সি বি আইকে (অপ)ব্যবহার করিতেছেন কি না, সেই চেষ্টার পরিণামে শেষ অবধি মোদীই উপকৃত হইবেন কি না, সে সকল প্রশ্ন অনিবার্য, হয়তো ফলিত রাজনীতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু নীতির প্রশ্নে সে সকলই নিতান্ত গৌণ। সি বি আই এবং আই বি’র এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ঘটিতে দেওয়াই অত্যন্ত অনুচিত। বস্তুত, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান যখন এই ভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তখন বুঝিতে হয় গণ্ডগোল অনেক গভীরে। প্রধানমন্ত্রী ইহাতে মনে মনে ক্ষুব্ধ কি না, তাহা লইয়া জল্পনা অবান্তর। এই সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত ঘটনার নৈতিক দায় তাঁহাকেই স্বীকার করিতে হইবে, কারণ তিনি সরকারের প্রধান। ইউ পি এ জমানার দ্বিতীয় দফায় মনমোহন সিংহের ভাবমূর্তি বলিয়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। অতঃপর তাহাও রহিল না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.