|
|
|
|
পুরী-ফেরত যাত্রীরা আতান্তরে |
|
অবরোধের ধাক্কায় মাঝপথেই
বাতিল জনশতাব্দী
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
বিক্ষোভ-অবরোধে সাধারণত ট্রেন বাতিল হয় টার্মিনাল বা প্রান্তিক স্টেশন থেকে। এ বার দূরপাল্লার ট্রেন প্রান্তিক স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করার পরে মাঝপথে বাতিল হয়ে গেল অবরোধের জেরে। তা-ও আবার জনশতাব্দীর মতো ট্রেন!
সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে পুরী-হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে। ভোরে পুরী থেকে সময়মতোই ছেড়েছিল হাওড়ামুখী ট্রেনটি। কিন্তু দু’টি স্টেশন যেতে না-যেতেই সেটি দাঁড়িয়ে পড়ে বীরশিবপুর-সত্যমপুর স্টেশনে। আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা নয়। অন্য একটি স্টেশনে বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে ট্রেনটিকে টানা প্রায় সাত ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। কিন্তু আরও দুর্ভোগ অপেক্ষা করছিল তাঁদের জন্য। তার পরে ট্রেনটি যদিও বা ছাড়ল, খুরদা রোড স্টেশনে পৌঁছে নট নড়নচড়ন! সেখানেও দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে যাত্রীরা জানতে পারেন, দেলঙ্গা স্টেশনে বিক্ষোভের দরুন ট্রেনটিকে মাঝপথেই বাতিল করে দিয়েছে পূর্ব উপকূল রেল। ট্রেন-ভরা যাত্রী কে কী ভাবে গন্তব্যে পৌঁছবেন, বুঝতে না-পেরে দিশাহারা হয়ে পড়েন।
পূর্ব উপকূল রেলের বাতানুকূল হাওড়া-পুরী জনশতাব্দী এক্সপ্রেস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন। দীর্ঘদিন আগে টিকিট কেটে যাত্রীরা সোমবার তাতে উঠেছিলেন। মাঝপথে নামিয়ে দেওয়ায় তাঁরা খুরদা রোড স্টেশনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর হস্তক্ষেপে ধৌলি এক্সপ্রেসে দু’টি সাধারণ কামরা জুড়ে কিছু যাত্রীর কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। কিছু যাত্রী পুরী ফিরে যান।
রেল সূত্রের খবর, বন্ধ বা দুর্ঘটনা ছাড়া মাঝপথে শতাব্দী, জনশতাব্দীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। প্রশ্ন উঠেছে, পূর্ব উপকূল রেল এমন সিদ্ধান্ত নিল কেন? পূর্ব উপকূল রেলের কর্তাদের বক্তব্য, এমনিতেই ট্রেনটিকে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছিল। তার পরে সেটিকে হাওড়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে হলে আরও দেরি হয়ে যেত। এক দিন ৮-৯ ঘণ্টা দেরির জন্য আগামী সাত দিন ট্রেনটির দেরি হতেই থাকত। যাত্রীদের কথা ভাবা হল না কেন? পূর্ব উপকূল রেলের কর্তারা জানান, ওই ট্রেনের পিছনে আরও ট্রেন ছিল। সেগুলিতে উঠে যাত্রীরা হাওড়ায় পৌঁছতে পারেন। তাই ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছে।
এ ভাবে ট্রেন বাতিল হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে অধীরবাবু বলেন, “এটা মোটেই ঠিক হয়নি। কেন এটা করা হল, ওই রেলের কাছে তার কারণ জানতে চেয়েছি। তদন্তও করতে বলেছি।”
দেলঙ্গা স্টেশনে বিক্ষোভ কেন?
রেলের খবর, দেলঙ্গা একটি ‘রোড সাইড স্টেশন’। বেশির ভাগ ট্রেন সেখানে থামে না। তাই বিভিন্ন ট্রেন থামানোর দাবি তুলে শ’দেড়েক লোক সকাল ৬টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। হাওড়া-পুরী জনশতাব্দীর যাত্রীদের অভিযোগ, সাত ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলা সত্ত্বেও রেল বা স্থানীয় প্রশাসন কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, ওই ডিভিশনের ডিআরএম-কে ঘটনাস্থলে আসতে হবে।
যাত্রীদের বক্তব্য, ডিআরএম আসেন বেলা ২টোয়। তত ক্ষণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। অনেক যাত্রী ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানান। বাসনা চট্টোপাধ্যায় নামে কলকাতার এক যাত্রী বলেন, “যাত্রীদের জানানো দূরের কথা, ট্রেন ছাড়বে কি না জানতে চাওয়ায় রেলের লোকজন খারাপ ব্যবহার করেন। ভোর থেকে খাওয়াদাওয়া নেই। দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকার পরে রেলের লোকজন এসে বলে দিলেন, ‘নেমে যান’।” একই অভিযোগ মানিকলাল পোদ্দার, ললিত মুঙ্গা-সহ অনেক যাত্রীরই।
ট্রেনটি এ দিন হাওড়ায় না-আসায় হাওড়া থেকেও জনশতাব্দী এক্সপ্রেস বাতিল হয়ে যায়। ফলে হাওড়া স্টেশনেও যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, অন্তত ৫৭০ জন যাত্রী এসেছিলেন ওই ট্রেন ধরতে। আচমকা ট্রেন বাতিল হওয়ায় তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। রেলকর্তারা স্টেশনে গিয়ে কোনও মতে যাত্রীদের শান্ত করেন। ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “ট্রেন দিতে না-পারায় আমরা দুঃখিত। টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।”
সামনেই রথ। পূর্ব উপকূল রেল পাঁচ দিন আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রথযাত্রায় বিশেষ পরিষেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। বহু পুণ্যার্থী ইতিমধ্যেই পুরী রওনা হয়েছেন। যাত্রীদের প্রশ্ন, উৎসব শুরুর আগেই যদি পরিষেবার এই হাল হয়, আসল সময়ে রেল-কর্তৃপক্ষ কী করবেন? |
|
|
|
|
|