বোলপুরের গ্রামে বোমাবাজি, নামল র্যাফ
জ্যোতি বসুর জন্মদিন পালনে বাধা দেওয়ার নালিশ
প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর শততম জন্মদিনের অনুষ্ঠান বানচাল করতে গ্রামে ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও বোমাবাজিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল বোলপুরের দুর্গাপুর গ্রাম।
গ্রামে ঢুকতে গেলে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ করেও বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বোলপুর থানার আইসি দেবকুমার রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী, র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স এলাকায় যায়। ঘটনায় উভয় পক্ষের ৯ জন জখম হয়েছেন বলে খবর। এ দিকে হামলা রুখতে লাঠি, বল্লম, টাঙ্গি, তির-ধনুক নিয়ে সিপিএম প্রভাবিত ওই আদিবাসী গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন এলাকার প্রমীলাবাহিনী। ওই ঘটনায় তৃণমূল সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে।
এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।” আটক হওয়া ব্যক্তিরা এলাকায় তৃণমূলকর্মী বলেই পরিচিত বলে ওই গ্রামবাসীদের দাবি।
গ্রামে পুলিশি টহল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বোলপুরের সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত দুর্গাপুর গ্রাম বরাবরই সিপিএমের দখলে। আশপাশের গ্রামগুলিতে তৃণমূলের প্রাধান্য রয়েছে। তবে পরিবর্তনের পরেও ওই গ্রামে সিপিএমের প্রভাব আছে যথেষ্টই। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল থেকেই প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের জন্য তাঁরা উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। গ্রামবাসী মুন্নি মাড্ডি, মালতি কিস্কু, বাহমনি বাস্কিদের অভিযোগ, “সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আচমকা বড় শিমুলিয়া এলাকার শতাধিক তৃণমূলের লোক গ্রামে ঢুকে আমাদের শাসাতে শুরু করে। নিজেদের দলীয় পতাকা ঝোলাতে শুরু করে।” তাঁদের দাবি, পরে কেন তাদের দলীয় পতাকা মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তৃণমূলের লোকজন পাঁচ গ্রামবাসীকে মারধর করে। ওই মারধরের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফের তারা ওই গ্রামে হামলা করেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, দ্বিতীয় বারেই বেশি লোকজন নিয়ে এসে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গ্রামে বোমাবাজি ও লুঠপাট শুরু করে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এরপরেই তাঁরা মিলিত ভাবে গ্রাম দখল রুখতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এমনকী ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামে পুলিশ এলে তাদের লক্ষ্য করেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা করে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। পুলিশ অবশ্য তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। এ দিন ঘটনার পরে জ্যোতিবাবুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয় গ্রামবাসীদের।
দুর্গাপুর গ্রামে প্রতিরোধে নেমেছেন প্রমীলা বাহিনী।
এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, স্থানীয় সিধো-কানহু লোকসংস্কৃতি কেন্দ্রের অদূরে মুখ্য রাস্তায় ব্যাপক বোমাবাজির ছাপ স্পষ্ট। ওই কেন্দ্রের পাশে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়কে ঘিরে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রের সামনে তৃণমূলের লাগিয়ে যাওয়া দলীয় পতাকা তখনও পোঁতা। কিছুটা এগিয়েই দুর্গাপুর গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় ঢোকার মুখে পথ আগলে বসে অনেকে। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে টাঙ্গি। রয়েছে বল্লম, তির-ধনুকও। তাঁরা বললেন, “পুলিশ চলে গেলেই ওরা গ্রাম দখল করবে বলে শাসিয়েছে। আমরা তাই আত্মরক্ষার চেষ্টা করছি।”
এ দিকে বড় শিমুলিয়ার তৃণমূল নেতা শেখ আব্দুল হাসিম দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ওরাই আমাদের দলীয় পতাকা নামিয়ে মাটিতে ফেলেছে। প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি, সিপিএমের মনসা হাঁসদার নেতৃত্বে ওই আদিবাসীরা আমাদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ করেছে। ঘটনায় আমাদের তিন জন জখম হয়েছেন।” যদিও বোলপুরের বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্যের পাল্টা অভিযোগ, “এ দিন ওই এলাকায় আমাদের দলীয় কার্যালয়ে জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালনের কথা ছিল। তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে ওই অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। এখন তারা মনগড়া কথা বলছে।” তাঁর আরও দাবি, “মনসাবাবু মেয়ের অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে রয়েছেন। এই অবস্থায় তৃণমূল ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।”

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.