রাস্তা, সেতু আর খেলার মাঠ। ভোট আসলেই নিত্য প্রয়োজনীয় এই বিষয়গুলির অভাব নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা। কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের ঘুঘুডাঙার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবারই ভোট চাইতে আসা নানা রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের এলাকার এই তিন সমস্যার কথা জানানো হয়। তাঁরা দেদার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু সেখানেই শেষ। স্থানীয়দের দাবি, ভোট মিটে গেলে নেতা কর্মীদের আর টিকিও মেলে না।
গুরজোয়ানি নদীর পাড়ের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামটিতে ঢোকার মূল ভরসা ৪০ ফুট লম্বা একটা বাঁশের সেতু। কিন্তু ফি বছরই দু’তিনবার সেতু ভেঙে পড়ে নদীতে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় সেতু ভেঙে পড়লে পড়ুয়াদের স্কুল যাওয়ার ভরসা নৌকা। এছাড়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই যেহেতু চাষাবাদ নির্ভর, তাই পাট এবং অন্যান্য ফসল নদীর এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে নিয়ে যাওয়াটাও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ফসল পারাপারে ঝুঁকি তো থাকেই তাছাড়া খরচও বেশি হয়। বাসিন্দারাই জানান, বছর ছয়েক আগেও গ্রামের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের নদী পেরিয়ে তারপর দীর্ঘক্ষণ আল পথ ধরে হেঁটে উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হত। |
|
|
মোরাম উঠে যাওয়া রাস্তা। |
বাঁশের সেতু দিয়েই চলছে পারাপার। |
|
ফলে অনেক ছেলেমেয়েরই উচ্চশিক্ষায় অনীহা ছিল। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে নিজেরা পরিশ্রম করে নদীর পাড় থেকে স্কুল পর্যন্ত রাস্তা বানানোয় উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার হার বাড়ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, টানা তিন দশক ধরে পাকা সেতুর আবেদন জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি।
সেতুর মতো ঘুঘুডাঙার রাস্তাও বেহাল। একে সরু, তারপর বেশিরভাগ জায়গাতেই মোরাম উঠে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে রাস্তায়। এছাড়া মূল রাস্তা লাগোয়া যে গলিগুলো রয়েছে তার সবগুলিই কাঁচা। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে চিটচিটে কাদা তৈরি হয়। যাতায়াত মুশকিল হয়ে পড়ে। গ্রামের পিছন দিকে মেদগাছি বাজারের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাতেও বর্ষায় এক হাঁটু কাদা জমে যায় বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
গ্রামের হানিফ শেখ জানান, গ্রামে কোনও মাঠ না থাকায় শিশুরা খেলার সুযোগ পায়না। একমাত্র চাষের জমি ফাঁকা হলে তবেই মাঠে বল নামে বলে জানান তিনি। পেশায় চাষি মোর্শেদ শেখ, তুফান শেখদের কথায়, “এক বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় গুরজোয়ানি নদীও মজে গিয়েছে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই নদীর জল উপচে গ্রামে ঢুকে যায়। আর বৃষ্টি আরও বাড়লে অনেককেই গ্রাম ছেড়ে ভিন গ্রামে আশ্রয় নিতে হয়।” তাই রাস্তা, সেতুর সঙ্গে গ্রামে বন্যা দুর্গতদের জন্য একটা ফ্লাড সেন্টারও জরুরি বলে তাঁদের দাবি।
গ্রামের সমস্যাগুলির কথা জানেন স্থানীয় নেতা বা প্রার্থীরাও। নান্দাই পঞ্চায়েতের এই গ্রামটিতে এক দশক ধরে পঞ্চায়েতে জিতে আসছে কংগ্রেস। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯২ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী। এবার প্রার্থী হয়েছে পরিজান বিবি। তিনি বলেন, “ভোট চাইতে গেলেই মানুষের প্রথম দাবি, বাঁশের সেতু পাকা করার। গত দু’টি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলেও এ বার বেশিরভাগ আসনে দলই প্রার্থী দিয়েছে। দল ক্ষমতায় এলে গ্রামের মানুষের সমস্যার কথা নিশ্চয় জানাব।” পঞ্চায়েতে এ বারের সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়েছেন জিন্নাতন বিবি। তিনি বলেন, “বরাবরই ঘুঘুডাঙা গ্রাম অনুন্নয়নের শিকার। সব থেকে বড় সমস্যা সেতু। মাঝেমধ্যে মাপজোক হতে দেখা গেলেও সেতুর কাজের কাজ কিছুই হয়না। তবে পঞ্চায়েতে দল ক্ষমতায় এলে সমস্যাগুলি নিয়ে সরব হব আমরা।” নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেতা ঈদের আলী মোল্লা বলেন, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের চেষ্টায় নান্দাই, বাঘনাপাড়া, ধাত্রীগ্রাম এলাকার বেশ কয়েকটা গ্রামের উপর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় একটি রাস্তার অনুমোদন মিলেছে। এই রাস্তাটি ঘুঘুডাঙার উপর দিয়েও যাবে। রাস্তা তৈরির সময় গ্রামের বাঁশের সেতুটিও পাকা করা হবে। মন্ত্রী নিজেও রবিবার নান্দাইয়ে একটি জনসভায় জানান, ২০.৭৫ কিলোমিটার ওই রাস্তাটি তৈরিতে প্রায় ১১কোটি টাকা খরচ হবে। তখনই ঘুঘুডাঙার সেতুটিও তৈরি হয়ে যাবে। প্রকল্পটির জন্য নাবার্ড অর্থ বরাদ্দ করেছে বলেও জানান তিনি। তাঁর দাবি, অর্থ দফতরের চিঠিও চলে এসেছে।
ভোটের ময়দানে নেতাদের আশ্বাস তো আগেও মিলেছে, এ বার তাই কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত শুকনো কথায় ভরসা নেই ঘুঘুডাঙার।
|