সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল ও মঙ্গলকোট থানার ওসিনির্বাচন কমিশনের কাছে আলাদা ভাবে ফ্যাক্স-বার্তায় অভিযোগ করলেন ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের তিন জন সিপিএম প্রার্থী ও ছ’জন নির্দল প্রার্থী। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা আবার নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আলাদা ভাবে মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
গত শুক্রবার ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের তিন সিপিএম প্রার্থী নাম না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ফ্যাক্স পাঠিয়েছেন। তাতে তাঁদের অভিযোগ, শাসকদল অর্থাৎ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এবং মঙ্গলকোটের ওসি যৌথ ভাবে তাঁদের উপরে অত্যাচার করছেন। ওই পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল বেবুচি ও ঠ্যাঙাপাড়া গ্রামের ঘোষপাড়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে। বাকি ৯টি আসনের মধ্যে সিপিএম তিনটি (সাঁকোনা ও বাবলাডিহির দু’টি) ও নির্দল ৬টি (ন’পাড়ায় তিনটি, ভাটপাড়া, বনপাড়া ও ঠ্যাঙাপাড়া গ্রামের মুসলিমপাড়ায় একটি করে) আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
নির্দল প্রার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলকোট থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার ও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যখন-তখন তাঁদের বাড়িতে হাজির হয়ে নির্যাতন চালাচ্ছেন। নানা রকম হুমকি ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাটপাড়ার নির্দল প্রার্থী স্বপ্না খাতুন কাটোয়া মহকুমাশাসকের কাছে বেশ কয়েক দিন আগে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ওই দুষ্কৃতীরা বাড়ির সামনে বোমাবাজি করছে। নির্দল প্রার্থীদের আরও অভিযোগ, বনপাড়া গ্রামে পুলিশ ও তৃণমূলের যৌথ সন্ত্রাসের কারণে ওই গ্রামের নির্দল প্রার্থী শেখ মুজ্জাদের প্রস্তাবক সাহাবুল শেখ-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে।
শেখ মুজ্জাদ জানান, তিনিও বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, “আমি প্রচারে গেলে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” নির্দল প্রার্থীদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী শেখ বাশেদ আলি-সহ তৃণমূলের একাধিক লোকজন অশান্তি পাকাচ্ছে। আর তাতে মদত দিচ্ছেন স্বয়ং ওসি।
নির্দল প্রার্থীদের নেতা কাশেম কাজীর অভিযোগ, “আমাদের দু’জন কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ পাঁচ দিন থানা লক-আপে আটকে রাখে। তার পরে মিথ্যা অস্ত্র পাচারের অভিযোগ দেয়। মঙ্গলকোট থানার ওসি এ ভাবে সন্ত্রাস করছেন।” মঙ্গলকোটে তৃণমূলের দুই নেতা শেখ বাশেদ আলি ও কাশেম কাজীর গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল রয়েছে। আবুল বাশেদের প্রার্থীরা এ বার তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন। কাশেম কাজীর অনুগামীরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নেমেছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশেম কাজীর ‘উদ্যোগে’ ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ তৃণমূলে যোগ দেয়। বাম জমানাতেই সিপিএমের হাতছাড়া হয় ওই পঞ্চায়েত। গোষ্ঠী কোন্দলে জড়িয়ে এখন নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করছেন কাশেম।
সিপিএম এবং নির্দলের অভিযোগ গুরুত্ব দিতে চাননি শেখ আবুল বাশেদ। তাঁর দাবি, “সিপিএমের মদতে নির্দলেরা প্রার্থী হয়েছেন। এ বার তারা একই অভিযোগ তোলায় বিষয়টি প্রমাণ হয়ে গেল। ক’দিন আগে তো আমি পুলিশের হাতে মার খেয়েছি। সেই পুলিশ কী করে আমার কথা শুনবে?” মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্করবাবুও ‘অভিযোগ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
সিপিএমের কেতুগ্রাম ২ লোকাল কমিটির তরফে ভোটের দিন তৃণমূল হামলা চালাতে পারে অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক আর অর্জুন বলেন, “কেতুগ্রামের বিষয়টি এসডিপিও-কে দেখতে বলেছি। মঙ্গলকোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন কিছু জানতে চাইলে খতিয়ে দেখা হবে।” |