যানজটে নাভিশ্বাস বহরমপুরের
হরমপুর থেকে জলঙ্গি প্রায় ৫৫ কিলোমিটার যেতে বাসে দু’ঘন্টা সময় লাগে। যানজটের ফাঁসে আটকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা প্রায় দু’কিমি রাস্তা পার হতে ঘন্টা খানেক সময় লাগছে! জলঙ্গির মেহেদিপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তথা মুর্শিদাবাদ জেলা বাস নিত্যযাত্রী সমিতির সহ-সম্পাদক তৌসিফুল ইসলাম তুহিন বলেন, “যানজটের কারণে এখন সময়ের মধ্যে স্কুলে পৌঁছানার জন্য সকাল সোয়া ৮টায় বাস ধরতে হচ্ছে। তাও অনেক সময়ে স্কুলে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছি না। বহরমপুর থেকে জলঙ্গি যেতে দু’ঘন্টা সময় লাগে। এখন যানজটের কারণে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা যেতেই ঘন্টা খানেকের বেশি সময় লাগছে।”
কিন্তু ভোট বড় বালাই! পুলিশ -প্রশাসন সকলেই এখন ব্যস্ত ভোট নিয়ে। নাগরিক জীবন নিয়ে এখন তাদের ভাবনার সময় কোথায়? নিত্যযাত্রী সংগঠনের পক্ষ থেকে যানজটের কারণ জানিয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেয়। কিন্তু ফল হয়নি। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভোটের কারণে তাও থমকে রয়েছে।
যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ভরসা ফাঁকফোঁকরই।—নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ব্যস্ততার কথা স্বীকারও করেছেন ট্র্যাফিক পুলিশ প্রশাসন। ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) সাত্তার আলি বলেন, “সম্প্রতি বহরমপুর থেকে পঞ্চাননতলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য বিষ্ণুপুর রোডের উপরে পাথর ফেলে রাখার জন্য রাস্তার এক দিক দিয়ে যান চলাচল করছিল। এতে জনবহুল রাস্তায় যানজট চরম আকার নেয়। তবে যানজট নির্মূল করা যায়নি। যানজট মুক্ত করতে যে সংখ্যক পুলিশের প্রয়োজন, এই মুহূর্তে ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে নেই। যে সংখ্যক পুলিশ রয়েছে, তাঁরাও ব্যস্ত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে।”
সম্প্রতি বহরমপুর-পঞ্চাননতলা যাওয়ার পথে বিষ্ণুপুর রোডের রাস্তা সংস্কারের কারণে এখন রাস্তার এক দিক দিয়ে যান চলাচল করায় যানজট তৈরি হয়। সেই সঙ্গে ট্রেন যাতায়াতের সময়ে পঞ্চাননতলা রেলগেট বন্ধ থাকলে ওই যানজট তীব্র আকার নেয়। বর্ষার শুরুতেই বিষ্ণুপুর রোডের কোনও কোনও জায়গায় পিচের চাদর উঠে গিয়ে বড় আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা সংস্কারের জন্য বিষ্ণুপুর রোডের বাম দিকে বেশ কয়েকটি জায়গায় পাথর ফেলে রাখা হয়েছে। এতেও যানজট তীব্র হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্র্যাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে বেসরকারি বাস-লরি-ছোট গাড়ি থেকে রিকশা চলাচল করায় ওই যানজট মাত্রাতিরিক্ত আকার নিয়েছে।
বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “বহরমপুর বাস টার্মিনাসের সামনের রাস্তা দখল করে বেসরকারি বাস সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে বিষ্ণুপুর রোডের ওই যানজট আরও পাকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুবিসহ হয়ে উঠেছে বহরমপুরের নাগরিক জীবন। বিশেষ করে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল বাসগুলি বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড মোড়ের যানজটে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।” স্কুল বাসের ভেতর আটকে গরমের মধ্যে হাঁসফাঁস করতে থাকা খুদে পড়ুয়ারা কাঁদতে থাকে। কিন্তু ওই কান্না ট্র্যাফিক পুলিশ বা প্রশাসনিক কর্তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না বলেও অভিভাবকদের অভিযোগ।
যানজটের বিষয়টি মানছে বাস মালিক সংগঠনও। বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারি বলেন, “পরিকল্পনা ছাড়াই বেসরকারি বাস টার্মিনাস নির্মাণের জন্যই এই যানজট তৈরি হচ্ছে। দূরপাল্লার বাস রাখার মত কোনও জায়গা বাস টার্মিনাসে নেই। দূরপাল্লার ওই বাসগুলি বাস টার্মিনাসের ভেতরে রাখা হলে রুটের বাসগুলি বের করতে অসুবিধে হয়। তাই যাত্রী তুলে সময়ের মধ্যে বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রুটের বাসগুলি বাসস্ট্যান্ডের বাইরে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও রাস্তার যা হাল হয়েছে, তাতে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতেও যাতায়ান করতে পারছে না। যানজট তৈরি হচ্ছে।”
নীলরতন আঢ্য বলেন, “যানজট কমাতে বাস মালিক সংগঠন ও পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে যানজটের কারণ খুঁজে তার সমাধানসূত্র বের করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.