পানীয় জল নিয়ে ভোট তরজা
প্রচারের হাতিয়ার পানীয় জল।
পশ্চিম মেদিনীপুরে অন্যতম এই সঙ্কট সমাধানে কোন রাজনৈতিক দল কতটা আন্তরিক হয়েছে সেই তরজাই এ বার পঞ্চায়েত ভোট প্রচারে অন্যতম অস্ত্র হয়েছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজাও। রাজ্যে শাসকদল তৃণমূলের দাবি, বাম সরকার এই সমস্যার সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল। ক্ষমতায় এসে তারাই পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত করেছে।
তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, রাজ্যে পালাবদলের পর প্রচুর নতুন প্রকল্প হয়েছে। তাতে ওই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। সেই দাবি উড়িয়ে বিরোধীদের বক্তব্য, পালাবদলের পর পরিস্থিতি আগের থেকে বরং খারাপ হয়েছে। বহু নলকূপ মেরামতির অভাবে পড়ে রয়েছে। ফলে, গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। আর এই দু’বছরে যে সব প্রকল্প হয়েছে, তার অধিকাংশই অনুমোদন পেয়েছে আগের সরকারের আমলে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়, “সব আসলে ধাপ্পা। নতুন করে একটাও প্রকল্প হয়নি।” তাঁর কটাক্ষ, “আসলে রাজপুত্রকে সবাই নিজের ছেলে আর রাজকন্যাকে নিজের বউ করতে চায়। কে আসলে কার ছেলে বা মেয়ে, তা মানুষ জানেন!” জবাবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের পাল্টা প্রশ্ন, “ওরা কী উন্নয়ন চোখে দেখতে পায় না? না কি হিংসা হচ্ছে! ভাবছে, এমন গতিতে কাজ কী ভাবে সম্ভব!” তাঁর দাবি, “আগে জেলার অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা ছিল। এখন তা নেই।”
এই চাপানউতোর শুধু থেমে নেই বাক্যুদ্ধেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্ননয়ের খতিয়ান তুলে ধরে সিপিএম-তৃণমূল প্রচারপত্র বিলি শুরু করছে। প্রচারে স্থানীয় নেতৃত্ব কৌশল নিয়েছেন, সেখানেও পানীয় জলকে ইস্যু করা হয়েছে। সঙ্গে সাধারণ সভা বা পথসভায় নেতৃত্বের বক্তব্যে একই প্রসঙ্গ উঠে আসছে।
পানীয় জল নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হলেও পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রকৃত চিত্রটা ঠিক কেমন?
জানা গিয়েছে, জেলায় পানীয় জলের সমস্যার যে পুরোপুরি সমাধান হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। বিভিন্ন এলাকায় এখনও এর সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায়। গরম পড়লে সমস্যা আরও বাড়ে। পরিস্থিতি দেখে বৃষ্টির জল ধরে রেখে প্রকল্প রূপায়ণেও উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এর জন্য পুকুর, চেক ড্যাম প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবার জলস্তর কমতে শুরু করেছে। এ জেলায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সাধারণত গড়ে দেড় হাজার মিলিমিটার। জেলার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা। তা-ও জলের জন্য সমস্যায় পড়তে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে পানীয় জলের বন্দোবস্তে নিজেদের সাফল্যের কথা ফলাও করে প্রচার করছে তৃণমূল। বলা হচ্ছে, সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো ৪১টি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের মধ্যে ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। আর, ৭৯টি চাষের জল সরবরাহ প্রকল্পের মধ্যে ৩২টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। কোন প্রকল্পের জন্য কত মানুষ উপকৃত হয়েছেন, তাও জানাচ্ছেন নেতৃত্ব। যেমন, চিচিড়া জল প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৫৩৭ জন উপকৃত হয়েছেন। রাজনগর প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার ৮৯৩ জন, পিঁড়াকাটা প্রকল্পের জন্য ৪ হাজার ৩৫২ জন প্রভৃতি। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ক্ষমতায় এলে জঙ্গলমহল এলাকায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে সেই প্রতিশ্রুতি পালনে তিনি পদক্ষেপও করেন। পাল্টা দাবি করছে সিপিএমও। প্রচারে দলীয় নেতৃত্ব বলছেন, নতুন সরকারের আমলে সমস্ত প্রকল্পের গতিই শ্লথ। সজলধারা প্রকল্পে ২০০৮ সালের মে মাস থেকে পালাবদলের আগে পর্যন্ত এ জেলা অর্থ পেয়েছিল ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার। অথচ, পালাবদলের পর থেকে ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় এই খাতে কোনও অর্থই আসেনি।
সব মিলিয়ে, পঞ্চায়েতের প্রচারে পানীয় জল নিয়েও জোর তরজা চলছে যুযুধান দুই শিবিরে।
তৃণমূলের তরফে প্রচার
জল প্রকল্পের নাম উপকৃত
চিচিড়া
আবাসগড়
নকরাশোলি
ভিকনি নিশ্চিন্তপুর
পিঁড়াকাটা
কলাইমুড়ি
শিমুলপাল
ঢেঙ্গাশোল
মালিয়ারা
বাঁশিয়া


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.