আসছে ভোট, বাড়ছে হানাহানি
ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা। শনি ও রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রচারকে ঘিরে যুযুধান দলগুলির মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। রবিবার হলদিয়ার দেভোগ পঞ্চায়েতের বড়বাড়ি এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুলিশে দলীয় পতাকা ও ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ দায়ের করে সিপিএম। এ দিন সকালে ওই গ্রামে সিপিএমের পতাকা, ব্যানার ছিঁড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিপিএমের অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে তৃণমূলের ছ’জন কর্মী ওই কাজ করেছেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালে ভবানীপুর থানার পুলিশ গ্রামে পৌঁছয়। পতাকার পাশাপাশি এলাকায় বেশ কিছু জুতোও পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিপিএম কর্মীদের দাবি, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে তৃণমূল কর্মীরাই ওই জুতো ফেলে পালিয়েছে। পরে এলাকার ১১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম প্রার্থী পদ্মা চাউলিয়া পুলিশে স্থানীয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি অমিয় সামন্ত, নেতা শম্ভু সাঁতরা, রবীন তুঙ্গ-সহ ছ’জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সুদর্শন মান্না বলেন, “মনোনয়নর পর থেকেই সন্ত্রাস চালাচ্ছে ওঁরা। গত রাতেও একইভাবে প্রচারের পতাকা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল কর্মীরা। গ্রামবাসীরা চিৎকার করায় চটি খুলে পালায় ওরা।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের দেভোগ অঞ্চলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ দিন্দা বলেন, “আগে ওই অঞ্চল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল। সেটি হাতছাড়া হওয়ায় সিপিএম পরিকল্পিত ভাবে চক্রান্ত করে নিজেরাই পতাকা ছিঁড়ে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
খেজুরিতে আবার এসইউসি-র এক প্রার্থীকে মারধর করে জরিমানা চাওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খেজুরি ২ ব্লকের হলুদবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের এসইউসি প্রার্থী হয়েছেন অনিমেষ দাস। অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার জন্য তাঁকে বেধড়ক মারধর করার পরে রীতিমতো বৈঠক করে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা চেয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। এসইউসি-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবন দাসের অভিযোগ, “শুক্রবার দুপুরে মুণ্ডমারী প্রাথমিক স্কুলের কাছে অনিমেষ দাস ও দলের কর্মীরা পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। সেই সময় তৃণমূলের জয়দেব মণ্ডল, মহীতোষ জানা, ভবতারণ মণ্ডল-সহ একদল দুষ্কৃতী তাঁদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাপক মারধর করে। আমাদের খেজুরি লোকাল কমিটির সদস্য তরুণ সামন্ত, কৃষ্ণগোপাল কর গুরুতর আহত হন। পরে আবার হলুদবাড়ি অঞ্চলের তৃণমূল প্রার্থী স্নেহাশিস দাস ও তাপস প্রামাণিক আক্রান্ত এসইউসি কর্মীদের উপর চড়াও হয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেয়। জরিমানা চায়।” থানায় আগেই অভিযোগ জানিয়েছিল এসইউসি। রবিবার কাঁথির মহকুমাশাসকের কাছেও স্মারকলিপি জমা দেয় তারা।
তৃণমূূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে ভগবানপুরেও। সিপিএমের ভগবানপুর জোনাল সম্পাদক সত্যরঞ্জন দাসের দাবি, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভগবানপুর পঞ্চায়েত এলাকার সুবুদপুর গ্রাম আমাদের দখলে ছিল। এ বারও ওখানে হার নিশ্চিত জেনে দলীয় কর্মী তপন প্রধান ও তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা প্রধানকে মারধর করে তৃণমূলের কর্মীরা। খাগা ও বাদিয়া বুথে বোমাবাজিও করে ওরা।” আহতদের ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা স্বপন রায়ের পাল্টা দাবি, “ভোট প্রচারের সময় সিপিএমের দুষ্কৃতীরা আমাদের সশস্ত্র আক্রমণ করলে আমরা প্রতিরোধ করি।”
এ দিকে দুই কংগ্রেস কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল পটাশপুর ১ ব্লকের চিস্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বারুইপুরে। কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির নেতা ক্ষিতীন্দ্রমোহন সাবুর অভিযোগ, শনিবার বিকালে ভগবানপুর ১ ব্লকের দ্বারিকাপুরে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে গিয়েছিলেন প্রদেশ নেতৃত্ব মায়া ঘোষ, দীপঙ্কর সাউরা। পরে তাঁরা বারুইপুর গ্রামে পদযাত্রা করেন। সেই পদযাত্রায় যোগ দেওয়ায় ও প্রার্থীর হয়ে প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় দলীয় কর্মী ননীগোপাল মণ্ডলকে শনিবার রাতে মারধর করা হয়। পুলিশ এসে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। কংগ্রেসের প্রচার কাজে মাইক দেওয়ার ‘অপরাধে’ মারধরের পাশাপাশি বারুইপুরের দলীয় কর্মী স্বাধীন সাউয়ের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচারে লাগানো পোস্টারের উপর তৃণমূল সমর্থকরা পাল্টা পোস্টার মেরে দেয়। তবে এই অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাপস মাজি। রবিবার গোকুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাজিপাটনা গ্রামে তৃণমূলের এক সভায় প্রায় তিনশো সমর্থক সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি তৃণমূলের। সভায় উপস্থিত ছিলেন পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর। সিপিএমের সিংদা জোনাল কমিটির সম্পাদক হিতেন্দ্রনাথ প্রধানের দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণেই কেউ কেউ ওই সভায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ ওই ব্লকেরই নৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পদিমা গ্রামে শনিবার রাতে তাদের চার কর্মীকে মারধরে করে সিপিএম কর্মীরা। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের পাল্টা দাবি, পোস্টার লাগানোর সময় তৃণমূল তাতে বাধা দিলে তারা কেবল প্রতিরোধ করে। বরং তৃণমূলই ব্যাপক বোমাবাজি করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.