বাড়িতে হামলা, ডাইন অপবাদে গ্রামছাড়া হল আদিবাসী পরিবার
ক্লাবের জন্য জমি দিতে রাজি না হওয়ায় ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে, মারধর করে পোলবার মহানাদ পঞ্চায়েতের রহিমপুর গ্রামের একটি আদিবাসী পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে তাদের বাড়ি। বাড়ির দেওয়ালে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘প্রবেশ নিষেধ’।
গ্রামের আদিবাসীদের একাংশকেই এ ব্যাপারে দায়ী করে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে। নিরাপত্তারও দাবি জানানো হয়েছে।
ঘটনাটি গত ২০ জুনের। ১৮ দিন ধরে বাড়ি ফিরতে পারছে না ওই পরিবার। পোলাবারই অন্য গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে। পরিবারের কর্তা গোপাল মুর্মুও কলকাতা পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের কর্মী। স্ত্রী, দুই ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। বড় ছেলে চাকরি করেন। ছোট ছেলে কলেজ-পড়ুয়া। বছর কয়েক ধরে আড়াই বিঘা জমি কিনে চাষাবাদও করেন গোপালবাবু। কিন্তু ডাইন অপবাদে গ্রাম ছেড়ে থাকার জন্য তাঁরা নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে গোপালবাবু জানিয়েছেন। ছেলের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ।
গ্রামবাসীদের রোষে গোপাল মুর্মুর বাড়ির অবস্থা। ছবি: তাপস ঘোষ।
বিডিও বিশ্বনাথ রক্ষিত অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীঘ্রই ওই গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবারটিকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। এই সব কুসংস্কার মেনে নেওয়া হয় না। বাড়ি ভাঙচুর এবং ওই পরিবারের সদস্যদের মারধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসুও বলেন, “দু’পক্ষকে ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” তিনিও বাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু কেন ‘ডাইন’ অপবাদে গ্রামছাড়া হতে হল গোপালবাবুদের?
গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত। গোপালবাবুরা সেখানকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। এক সময়ে তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। চাকরি পাওয়ার পরে ধীরে ধীরে গোপালবাবু পাকা বাড়ি বানান। জমি কেনেন। বাড়িতে তিনি নানা পুজোও করেন। তাঁর অভিযোগ, “আমার শ্রীবৃদ্ধি আদিবাসীদেরই একাংশ মেনে নিতে পারছিল না। ওরা ক্লাব তৈরির জন্য আমার কাছে জমি চেয়েছিল। দিইনি। সেই রাগ ছিল। গত ২০ জুন রাতে ওরা বাড়ির জানলা-দরজা ভাঙে। বাড়ির সবাইকে মারধর করে ডাইন অপবাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়তে বলে। ভয়ে তাই করি। ওরা তো এখন খুনেরও হুমকি দিচ্ছে। এই যুগে এ সব অপবাদ মানতে পারছি না।”
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, গোপালবাবুর বাড়ির জানলার কাচ ভাঙা। দেওয়ালে লেখা, ‘গোপাল ও স্বজন ব্যক্তির প্রবেশ নিষেধ’। গ্রামের আদিবাসী সমাজের মোড়ল লক্ষ্মণ মুর্মু বলেন, “গোপাল পুজো-পার্বণ করেন। গ্রামবাসীরা বলেছে, ওদের জন্য অসুখ-বিসুখ লেগে থাকে। গোপালকে নিয়ে অনেক বার সালিশি করা হয়েছে। লাভ হয়নি। গ্রামের ছেলেরা একটা ক্লাবঘর করার জন্য সাহায্য চেয়েছিল। গোপাল দেয়নি। তাই গ্রামবাসীরাই ওকে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে।”
রঞ্জিত বাউল দাস নামে আর এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, “গোপাল পুজো-পার্বণ করে গ্রামের সর্বনাশ করছে। ওকে আর গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওরা ডাইন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.