সম্পাদকীয় ২...
বোধ ক্রমে আসিতেছে
পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ভোটের আগে হইতেই ভারতের সহিত সুসম্পর্কের প্রয়োজনের কথা বলিতেছিলেন। ক্ষমতাসীন হইলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অতীতের তিক্ততা দূর করিতে উদ্যোগী হইবেন, এমন প্রতিশ্রুতিও তাঁহার মুখে শুনা গিয়াছিল। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিবার অল্পকালের মধ্যেই শরিফ তাঁহার বিশেষ দূত শাহরিয়ার খানকে নয়াদিল্লিতে পাঠাইয়াছেন। দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির সরকারি প্রয়াসের সমান্তরালে এই ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগকে সাধারণত ‘ট্র্যাক-টু’ কূটনীতি বলা হয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে শরিফ শপথগ্রহণের সময়েই পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানাইয়াছিলেন। শাহরিয়ার খানের হাত দিয়া তিনি যে চিঠি পাঠাইয়াছেন, তাহাতেও ওই সফরের প্রস্তুতি করিবার আর্জি রহিয়াছে।
সুলক্ষণ। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী সম্ভবত উপলব্ধি করিয়াছে যে, ভারতের সহিত শত্রুতা করিয়া লাভ নাই, বরং বন্ধুত্বেই লাভ। যেমন পাকিস্তানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে যে বিপুল ঘাটতি, তাহা পূরণ করিতে নয়াদিল্লির উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের সাহায্য লওয়া যায়। একই ভাবে যে সকল অত্যাবশ্যক পণ্য বহু দূর দেশ হইতে প্রভূত পরিবহণ-ব্যয়ের বিনিময়ে আনিতে হয়, ভারত হইতে ট্রেন বা ট্রাক যোগে সীমান্ত অতিক্রম করিয়া সে সব পাকিস্তানে আনিতে পারিলে অনেক পয়সা বাঁচানো যায়। পাক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা তাই বহু কাল যাবৎ প্রতিবেশীর সহিত সুসম্পর্কের পক্ষপাতী। কিন্তু শাসক গোষ্টীর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এ ব্যাপারে যুক্তিপূর্ণ আচরণের সহিত সামঞ্জস্যহীন ছিল। বোধ ক্রমে আসিতেছে।
ইহার অর্থ এই নয় যে, রাতারাতি দুই দেশের সম্পর্কে পরিবর্তন আসিবে। ইতিহাসের জের টানিয়া চলিতে উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বই ক্লান্ত হইয়া পড়িলেও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের সংযোগ তাহাতে যে জটিলতা সৃষ্টি করিয়াছে, তাহা দূর হওয়া সময়সাপেক্ষ। পাকিস্তানের মৌলবাদী নেতৃত্ব, বিশেষত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ-সহ আফগানিস্তান সংলগ্ন দুর্গম অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়িয়া থাকা এবং ক্রমশ মূল ভূখণ্ডে প্রসরমাণ পাক তালিবান গোষ্ঠীগুলি (কুখ্যাত হাক্কানি গোষ্ঠীও যাহাদের সহিত সংশ্লিষ্ট) ‘দার-উল-হারাব’ হিন্দুস্তানের সহিত সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী। তাঁহারা এমনকী নওয়াজ শরিফের সরকারকে ভারতের কোনও পণ্যই গ্রহণ করিতে দিবার বিরোধী। সে কথা প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপিতও হইয়াছে। কিন্তু সেই প্রেক্ষিতেই শরিফের ‘শান্তি-প্রয়াস’ দ্বিগুণ তাৎপর্যপূর্ণ। নয়াদিল্লিরও তাই উচিত হইবে, ‘ট্র্যাক-টু’ কূটনীতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিয়া পাকিস্তানের মৈত্রীর আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া। পাকিস্তানে যেমন তালিবান ও হাক্কানিরা রহিয়াছে, ভারতেও তেমনই উগ্র জাত্যভিমানী শক্তিরা আছে, যাহারা পাকিস্তানের সহিত সুসম্পর্কের বিরোধী। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এত দিনে তাহাদের উপেক্ষা করিতে শিখিয়াছেন বলিয়া মনে হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.