সাল ১৯৫৪। আমরা কয়েক জন ছাত্র ইউনিয়ন সদস্য একটি বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের অফিসে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের সময় দেন পরের দিন তাঁর ওয়েলিংটন স্কোয়ারের বাসভবনে। আমরা যাই। আলোচনার মধ্যে বিধানবাবুর আপ্ত সহায়ক একটি চিঠি দেখালেন তাঁকে। চিঠি দেখে বিধানবাবু বললেন, “আবার এসেছে? দাও পাঠিয়ে আমার কাছে।” এক মধ্যবয়সি বাঙালি ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন। বিধানবাবু তাঁকে বললেন, “তোমাকে আমি ট্যাক্সির পারমিট দেব না। আজ আমি তোমাকে পারমিট দেব, কাল তুমি এক জন পাঞ্জাবি ড্রাইভারকে চড়া দামে সেটা বিক্রি করে দেবে। যাও গিয়ে ব্যবসা কর। এত লোক বাইরে থেকে কলকাতায় এসে রোজগার করছে, তোমরাও কর।” লোকটি বললেন, “স্যর, আমরা, বাঙালিরা ব্যবসা করতে পারব না। কারণ, ব্যবসা যারা করে, তারা চুরি করে।”
এই শুনে বিধানবাবু খুব রাগান্বিত হয়ে বললেন, ঠিক আছে। তুমি চুরি করেই আমাকে দশ হাজার টাকা দশ দিনের মধ্যে দিয়ে যাও। আর যদি চুরি করার সময় ধরা পড়, তবে তোমাকে তিন বার পুলিশ ছেড়ে দেবে। আমি তাদের বলে দেব। তুমি তোমার দশ কপি ফটো আমাকে দিয়ে যাও। আমি ওই ফটোগুলো থানায় থানায় পাঠিয়ে দেব যেখানে যেখানে তুমি চুরি করবে। একটু আগে আমাকে খবর দিও। তার পর কী হয়েছিল আমার জানা নেই। |
আপনাদের প্রকাশিত খবর ‘অ-মাইক পিজি...’ (২৭-৬) প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা:
(১) এসএসকেএম হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টার অফিসের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমটি কিছু দিন আগের বজ্রবৃষ্টির পর হঠাৎ অকেজো হয়েছে। ‘গত তিন সপ্তাহ’ অকেজো কথাটি ঠিক নয়।
(২) মাইক অকেজো হলে সব ডিপার্টমেন্টেই কর্তব্যরত নার্সরা ফোনে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চিকিৎসকের অনুমতিক্রমে এক জন আত্মীয় রোগীর সঙ্গে থাকতেও পারেন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে রোগীর আত্মীয়দের কাউকে দরকারের সময় পাওয়া না গেলে বা কোনও খবর পৌঁছতে হলে নার্সরা ওয়ার্ড মাস্টার মারফত ফোনে যোগাযোগ করেন।
(৩) খবরে উল্লেখিত রোগী/স্বজনদের কেউই আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি।
(৪) মেন ব্লকে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমই নেই। তাই অকেজো হওয়ার প্রশ্নও অমূলক। |
তমালকান্তি ঘোষ। মেডিকাল সুপারিনটেনডেন্ট, এসএসকেএম হাসপাতাল
|
প্রতিবেদকের উত্তর: যন্ত্র খারাপ হতেই পারে, কিন্তু তা সারানোর ব্যবস্থা কেন করা হয়নি? হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র আমাকে জানিয়েছিলেন, এক সহকারী সুপারের উপরে মেন ব্লকের দায়িত্ব। যন্ত্র মেরামতির দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।
|
ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রসঙ্গে কৌশিক সেন ও শিলাদিত্য সেনের কথোপকথন (‘পৌরুষের ছক ভেঙে কৃষ্ণ...’, ১৩-৬) পড়লাম। এস এল ভৈরাপ্পা তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘পর্ব’য় দেখিয়েছেন, কৃষ্ণের সহায়তায় পাণ্ডব রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সমসময় ঘটোৎকচদের অরণ্যরাজ্য, বৃক্ষ-প্রাণী-মানুষজন সব কিছু পুড়িয়ে ছাই করে, কৃষি জমির বিস্তার ঘটানো হয়েছিল। সে সময় ঘটোৎকচ ও অন্য বীরেরা কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন। যুদ্ধ শেষে ভীম স্ত্রী শালকটমকটিকে ঘটোৎকচের মৃত্যুসংবাদ জানাতে গিয়ে সেই দগ্ধ জনপদ দেখিয়েছিলেন। (পর্ব, সাহিত্য অকাদেমি, ২০০২)
আরণ্যকদের অরণ্যের অধিকার এ ভাবেই রাজশক্তি যুগে যুগে কেড়ে নেয়। কৌশিক সেন শিলাদিত্য সেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্যাধদের ‘ব্রাত্যজন, প্রান্তিক বা নিম্নবর্গ’ বলেছেন। ব্রতপালনকারী আর্যদের শাখা-বিশেষকে শোধিত করে আর্যসমাজ গ্রহণ করত। অনার্য ব্যাধেরা আর্যভাষী এবং ব্রতানুসারী ছিলেন না। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত ব্যাধ কালকেতু তো রাজা ছিলেন। আরণ্যকে সাঁওতাল রাজার কথা আছে। অরণ্যজীবী জনগণেরও রাষ্ট্র বা সমাজ সংগঠন বৃত্তি/শ্রম বিভাগ ছিল। তাই নিম্নবর্গ বা প্রান্তিক শব্দগুলির ব্যবহারে সতর্ক হলে ভাল হয়।
দলবদ্ধ ভাবে ব্যাধেরা কৃষ্ণকে হত্যা করেনি। কৃষ্ণ ক্ষত্রিয় ছিলেন। ক্ষত্রিয়দের দর্শনশাস্ত্রে কর্মফল গুরুত্বপূর্ণ। কর্মফল জন্ম-জন্মান্তরের জীবনের ঘটনাবলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। গান্ধারীর অভিশাপ ছাড়াও কৃষ্ণ-হত্যার অন্য এক কারণ বিবৃত হয়েছে ওড়িশার সরলা দাসের মহাভারতে। রাধা এবং সহজ সুন্দরী গোপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের গুপ্ত এবং অবৈধ যৌন সম্পকর্র্ ছিল এক পাপকর্ম। উক্ত মহাভারতের আদি পর্বে এ নিয়ে স্বয়ং কৃষ্ণের অনুতাপ এবং অনুশোচনা পাই, ‘যে করিব পরদারা প্রাণ তার যায়।’ পঞ্চপাণ্ডব কৃষ্ণের দেহ দাহ করতে ব্যর্থ হলে, তারাও রাধার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের পাপের পরিণাম হিসেবেই এ ঘটনাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
বলাৎকারে হরিথিলে গোপীগণ ধারী
জীব থিবা যাকে যাঙ্কু পাপ ন লাগিলা
মরণের পরে ই পিণ্ডে কলঙ্ক রহিলা (মুষলী পর্ব)
সরলা দাস বা অন্য কেউ কিন্তু ব্যাধকে উগ্রপন্থী সাজাননি। |
শক্তিনাথ ঝা। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
|
স্বাধীনতার সময় থেকেই এই শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। তবে কালক্রেমে তার অর্থ পালটেছে। প্রতিদিনই দেখি, অত্যন্ত ব্যস্ত ভি আই পি রোড পার হওয়ার ক্ষেত্রে লাল আলো থাকা সত্ত্বেও সম্মাননীয় নাগরিকগণ দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। রাস্তার পাশেই ইমারতি দ্রব্য মজুত করা থাকে। যানবাহন চলাচল করা দায়। অফিস ও বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক ও কর্মচারীরা মেনে চলেন না। সর্বত্রই আইন অমান্য করার প্রবণতা। তাই বলি কী, এখন বরং ‘আইন মান্য’ আন্দোলন করলে কেমন হয়? |
সব্যসাচী মজুমদার। কলকাতা-৫৯ |