সম্পাদকীয় ১...
ভাবের ঘরে ডাকাতি
ংসদের বাদল অধিবেশনের আর এক মাসও দেরি নাই। তথাপি কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকার যে সংসদীয় অধিবেশনের জন্য অপেক্ষা না করিয়াই খাদ্য সুরক্ষা বিলটিকে অর্ডিনান্স আকারে জারি করিতে ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে, তাহার পিছনে দৃশ্যত দেশবাসীর অন্নসংস্থান অপেক্ষা অন্য ভাবনা সক্রিয় রহিয়াছে। খাদ্য সুরক্ষার প্রয়োজন নাই, এমন কথা কেহ বলিবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই অভিমত দিয়াছে যে, খাদ্য পাওয়ার অধিকার বাঁচিয়া থাকিবার মৌলিক অধিকারেরই অন্তর্গত। মৌলিক অধিকারের ধারণাটির এই প্রসারিত প্রয়োগ লইয়া তর্ক থাকিতে পারে। কিন্তু অর্ধাহার ও অপুষ্টি জর্জরিত দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জনসাধারণের নাগালে সুলভে খাদ্যশস্য আনিয়া দেওয়ার কাজটি যে গুরুত্বপূর্ণ, তাহা লইয়া প্রশ্ন নাই। উন্নয়নের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেই কাজ সম্পন্ন না হইলে রাষ্ট্রের এ বিষয়ে কিছু দায়বদ্ধতা জন্মায়, এমন যুক্তিও তুচ্ছ করিবার নয়। তাহার পরেও অবশ্য প্রশ্ন থাকিয়া যায়। সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ভারতীয় রাষ্ট্রের আছে কি? খাদ্যশস্য সংগ্রহের দায়িত্বটি তো সেই ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার উপরেই ন্যস্ত থাকিতেছে। তাহা বিলিবণ্টনের দায়িত্বেও থাকিতেছে সেই সরকারি গণবণ্টন ব্যবস্থা। খাদ্যে এত কাল ধরিয়া যে ভর্তুকি দিয়া আসা হইয়াছে, তাহার অধিকাংশই নানা ভাবে বিফলে গিয়াছে। খাদ্য সুরক্ষা বিলের প্রস্তাবে এই ছিদ্রগুলি ভরাট না করিয়াই ব্যাপক পরিমাণে সরকারি ভর্তুকি বিলির আয়োজন রাখা হইয়াছে, যাহা উদ্বেগজনক।
তথাপি যদি জনস্বার্থে এ ধরনের একটি আইন করিতেই হয়, সংসদে সে-সংক্রান্ত বিল আনিয়া তাহার উপর যথাযথ বিতর্ক ও আলোচনার শেষেই সিদ্ধান্ত লওয়া উচিত। বিলটির বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও ছিদ্রগুলি লইয়া আলোচনা সেগুলির সংশোধন ও পরিমার্জনেও সহায়ক হইত। তাহার পরিবর্তে সংসদকে এড়াইয়া তড়িঘড়ি অর্ডিনান্স জারির সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এড়াইয়া যাওয়ার অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা রহিয়াছে, যাহা নিন্দনীয়। ইউ পি এ সরকার সম্ভবত আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে চাহিয়াই তাড়াহুড়া করিতেছেন। শাসকদের আশা, খাদ্য সুরক্ষা আইন নির্বাচকমণ্ডলীকে তুষ্ট করিয়া তাহাদের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করিবে। শাসকের এই আশা দুরাশাও প্রতিপন্ন হইতে পারে। অপদার্থতার শিখরে বসিয়া কেবল সস্তায় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের টোপ দিলেই ভোটের ফসল গোলায় আসিবে, এমন সরল পাটিগণিত কি ভারতীয় রাজনীতিতে চলে? সেই রাজনীতির চরিত্র কি অনেক বেশি জটিল নহে? বিরোধী দল বিজেপি-সহ অন্য অকংগ্রেসি দলগুলি অবশ্য তেমন ভরসা করিতে পারে নাই। কংগ্রেস যে কারণে আশাবাদী, তাহারা সেই কারণেই আশঙ্কিত। আশঙ্কা, পাছে খাদ্যের বিনিময়ে ভোট কর্মসূচি সফল হয়! অতএব এই রাজনৈতিক সুবিধাবাদের জন্য বিরোধীরা কেন্দ্রের নিন্দায় পঞ্চমুখ হইয়াছে। তাহাদের আপত্তি খাদ্য নিরাপত্তার ধারণা লইয়া নহে, অর্ডিনান্সের অ-গণতান্ত্রিক পথ লইয়া।
এই আপত্তি তুলিয়া বিরোধীরা, বিশেষত বিজেপি কিন্তু ভাবের ঘরে ডাকাতি করিতেছে। জাতীয় বিরোধী দল হইয়াও বিজেপি লোকসভার একের পর এক অধিবেশনে বহু জরুরি বিল পেশ হইতে বা তাহা লইয়া আলোচনা হইতে দেয় নাই। তাহার নেতা ও সদস্যরা সংসদের অধিবেশন ভণ্ডুল করার উপরেই তাঁহাদের যাবতীয় মনোযোগ নিবিষ্ট করেন। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিল লইয়া আলোচনা তাঁহারা স্রেফ চিৎকার-চেঁচামেচি করিয়া বানচাল করিয়া দিয়াছেন, একের পর এক সংসদের অধিবেশন কার্যত কোনও কাজকর্ম না করিয়াই মুলতুবি রাখিতে হইয়াছে, শেষ পর্যন্ত মেয়াদ শেষের আগেই স্পিকারকে শেষের ঘণ্টা বাজাইয়া দিতে হইয়াছে। নানা ছুতানাতায় সংসদের অধিবেশন ভণ্ডুল করার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের ঐতিহ্য সৃষ্টির পর সংসদে কেন খাদ্য সুরক্ষা বিল পেশ হইল না, এই প্রশ্ন তোলার মধ্যে এক ধরনের প্রতারণা আছে। বস্তুত এই ভাবে যদি ক্রমাগত সংসদ অচল করিয়া রাখা হয়, কোনও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট আইন সংসদে বিবেচিত, পর্যালোচিত ও অনুমোদিত হইতে না পারে, তবে তো ভারতীয় গণতন্ত্র অর্ডিন্যান্সের গণতন্ত্র হইয়া উঠিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.