ঘুষের জেরে নিয়োগ শিকেয়, মাথাহীন রেলে ভুগছে পরিষেবা
রেলে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই-তদন্তের জেরে রেল বোর্ডে কার্যত নেতৃত্বের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যার জেরে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে দৈনন্দিন পরিষেবাও।
ঘুষ-কাণ্ডে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশল-সহ একের পর এক রেল-কর্তার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সরকার এখন পা ফেলছে মেপে মেপে। তারা নিশ্চিত করতে চাইছে, নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের সামান্য অভিযোগও যাতে না-ওঠে। তাই বোর্ডের বিভিন্ন পদপ্রার্থীর সম্ভাব্য তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কি না, তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর সেই যাচাই-প্রক্রিয়া শেষ না-হওয়ায় মেয়াদ ফুরনোর পরেও চেয়ারম্যান-সহ রেল বোর্ডের শীর্ষ বিভিন্ন পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ওই চেয়ারগুলোয় পাকাপাকি ভাবে কাদের বসানো হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রেল। কিন্তু চেয়ারে লোক না-থাকলেও কাজ তো থেমে থাকবে না!
কাজ চালানোর জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব বর্তেছে চার কর্তার উপরে।
রেল-সূত্রের খবর: বোর্ডের সদস্য (মেকানিক্যাল) অরুণেন্দ্র কুমারকে চেয়ারম্যানের অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেম্বার (ইলেকট্রিক্যাল) কুলভূষণ অস্থায়ী ভাবে মেম্বার (ট্র্যাফিক) হিসেবে কাজ চালাবেন। অতিরিক্ত বোর্ড সদস্য (বাজেট) রাজেন্দ্র কাশ্যপ ফিনান্সিয়াল কমিশনারের বাড়তি দায়িত্ব সামলাবেন। এ ছাড়া মেম্বার (ইঞ্জিনিয়ারিং) সুবোধ জৈনকে আপাতত মেম্বার (স্টাফ) হিসেবে কর্মীসংক্রান্ত দফতরের কাজও দেখতে বলা হয়েছে।
তাতেও অবশ্য সমস্যার হাল হচ্ছে না। বোর্ডের অতিরিক্ত মেম্বার (ট্র্যাফিক)-এর পদে লোক নেই। সাতটি জেনারেল ম্যানেজারের চেয়ার ফাঁকা, ২৬টি ডিভিশনে অস্থায়ী ডিআরএম নেই। এক কর্তার কথায়, “রোজকার কাজ দেখভাল করার নামে অস্থায়ী নিয়োগ আসলে জোড়াতাপ্পি। এমন সব অতি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে দ্বৈত দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি কোনও কাজটাই ঠিকঠাক করে উঠতে পারেন না। এ ভাবে চললে বড় সঙ্কট দেখা দেবে।”
তা হলে স্থায়ী নিয়োগ কবে হবে? বিশেষত চেয়ারম্যানের মতো পদও খালি ফেলে রাখা হচ্ছে কেন?
রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়্গে আশ্বাস দিচ্ছেন, “যত দ্রুত সম্ভব খালি পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করছি।” যদিও মন্ত্রকের একাংশের বক্তব্য: দুর্নীতির অভিযোগ যাচাইয়ের পর্ব কতটা দীর্ঘায়িত হবে, তা কেউ জানে না।
মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা: রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বিনয় মিত্তল গত ৩০ জুন অবসর নিয়েছেন। ঠিক ছিল, বোর্ড মেম্বার কুলভূষণ তাঁর জায়গায় আসবেন, অভিজ্ঞতা ও সিনিয়রিটির নিরিখে পদটি তাঁরই পাওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনা হল, ঘুষ-কাণ্ডের তদন্তে কুলভূষণকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁর ভিজিল্যান্স ছাড়পত্রও আসেনি। ফলে মন্ত্রক এখনই তাঁকে বোর্ড চেয়ারম্যান করার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। অন্য দিকে ঘুষ-তদন্তে বিনয় মিত্তলও সিবিআই-জেরার মুখে পড়ায় চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর মেয়াদ বাড়াতেও চাননি রেলমন্ত্রী।
পরিণামে আপাতত মাথা ছাড়াই চলছে রেল বোর্ড।
অন্যান্য শীর্ষ পদের ক্ষেত্রেও নিয়োগ প্রক্রিয়া তথৈবচ। এমনিতেই রেলের আর্থিক হাল খারাপ, তার উপরে বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের অনুপস্থিতি পরিষেবায় ভাল রকম প্রভাব ফেলেছে। যেমন ট্রেন চলাচল ও পরিষেবা দেখভালের দায়িত্ব যাঁর, বোর্ডের সেই মেম্বার (ট্র্যাফিক) এর চেয়ারে দীর্ঘ দিন স্থায়ী কেউ না-থাকায় দেশ জুড়ে ট্রেন চলাচলের সূচি বিঘ্নিত হচ্ছে।
মন্ত্রকের একাংশের অভিযোগ: কর্তৃত্ব ও নজরদারির অভাবে দূরপাল্লার ট্রেন তো বটেই, বহু লোকাল ট্রেনও দেরিতে চলছে। বিস্তর পরিষেবার বেহাল দশায় যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হলেও প্রতিকারের ইঙ্গিত নেই।
পরিচালনায় ঢিলেমির আঁচ পড়েছে রেলের রাজস্বেও। শেষ পে-কমিশনের বকেয়া মেটাতে গিয়ে এমনিতেই রেলের কোষাগারে ঘাটতি বেড়েছে। উপরন্তু মহার্ঘ হয়েছে ডিজেল, যদিও ভাড়া সেই অনুপাতে বাড়েনি। তাই রেলকে এখন ১০০ টাকা আয় করতে গিয়ে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকারও বেশি। অথচ আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখায় ভার যাঁর, সেই ফিনান্সিয়াল কমিশনারের পদে স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ফিনান্সিয়াল কমিশনারই রেলের আর্থিক অবস্থা বিচার করে সেই মতো খরচের মাত্রা বেঁধে দেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তৈরি করেন। সে সবই এখন প্রায় থমকে। এতে কোষাগারের হাল আরও ভেঙে পড়তে পারে বলে অফিসারদের অনেকের আশঙ্কা। তাঁরা বলছেন, অবিলম্বে রেলের অর্থ-কর্তার চেয়ারে পাকাপাকি ভাবে কাউকে না-আনলে পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও অসুবিধে হতে পারে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে স্থায়ী অফিসার না-থাকাটা অবাঞ্ছিত জানিয়ে রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “আগে এক বার (২০১০-১১) টানা বছরখানেক মেম্বার (ট্র্যাফিক)-এর কাজ চেয়ারম্যানকে দিয়ে চালানো হয়েছিল। পরিষেবার মান পড়তে শুরু করে তখনই।” রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, রেল বোর্ডের শীর্ষ পদে পাকা নিয়োগ না-হলে ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দেবে। তবে তাঁর এ-ও দাবি, “রেলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা রয়েছে। রাতারাতি নিয়োগ না-হলেও রোজকার কাজে বড় একটা প্রভাব পড়ার কথা নয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.