বেহাত না হয় উচ্চ বর্ণের ভোট, মায়া আক্রমণ করছেন মোদীকে
যোধ্যা সফরে গিয়ে গত কাল ফের রাম মন্দির প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা অমিত শাহ। তার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। মোদীর তীব্র সমালোচনায় অবতীর্ণ হলেন মায়াবতী। রাম মন্দির প্রসঙ্গ অবশ্য তোলেননি দলিত নেত্রী। তবে উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে মোদী রাজনীতি করছেন বলে অভযোগ তুলে তুলোধোনা করেন তাঁকে। মায়াবতীর কথায়, “বিজেপি-র এই নেতা দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। অথচ উত্তরাখণ্ডে গিয়ে তিনি কেবল দুর্গত গুজরাতিদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন! এমন সংকীর্ণ মনের ব্যক্তিকে দিয়ে সৌভ্রাতৃত্ব ও ধর্মনিরপেক্ষ বাতাবরণ কখনওই মজবুত হতে পারে না। দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বসার যোগ্যতা তাঁর নেই।”
লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই কমবেশি প্রচারে নেমে পড়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেই প্রেক্ষাপটে মায়াবতীর এই মোদী-বিরোধিতার নেপথ্যে জটিল কোনও সমীকরণ অবশ্য দেখছেন না রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, অঙ্কটা সহজ। উত্তরপ্রদেশে শুধু দলিত ভোটের ভরসায় না থেকে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদেরও কাছে টানার কৌশল নিয়ে মায়াবতী এর আগে বড় মাপের সাফল্য পেয়েছেন। ২০০৭-এ সামাজিক কারিগরি (সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)-এর ওই রসায়নই তাঁর বহুজন সমাজ পার্টিকে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা এনে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। লোকসভা ভোটের আগে এ বারও সেই দলিত-ব্রাহ্মণ সমীকরণ মজবুত করতে চাইছেন মায়া। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব সরকার গঠনের পর একাধিক সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় দলিত নেত্রী আশায় বুক বাঁধছিলেন। কিন্তু তার মাঝেই এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটে দল তাঁকে প্রচারের মুখ এবং কার্যত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরাটা ভাবনায় ফেলেছে মায়াবতীকে। কারণ, মোদীর নেতৃত্বে হিন্দি বলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে বিজেপি এখন তার জমি পুনরুদ্ধারে নেমেছে। এ জন্য মোদী নিজের ঘনিষ্ঠ ও সব চেয়ে অনুগত সৈনিক অমিত শাহের হাতে তুলে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে দলের প্রচার ও সংগঠন সামলানোর ভার।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণ তথা উচ্চ বর্ণের মধ্যে সাড়া পড়েছে। তা ছাড়া সামগ্রিক ভাবে বিজেপি কর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। এই উৎসাহের পালে হাওয়া জোগাতে অমিত শাহ ফের উস্কে দিয়েছেন রাম মন্দির গড়ার বিষয়টি। আর তাতেই এখন ব্রাহ্মণ-সহ উচ্চ বর্ণের ভোট হারানোর ব্যাপারে অশনিসঙ্কেত দেখছেন মায়াবতী। তা ছাড়া জাতপাত দীর্ণ উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে একটা বিষয় স্পষ্ট, তা হল, কোনও দলের সঙ্গে যদি দু’টি জাতি থাকে তা হলে তাদের ভোটে ভাল ফল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মায়াবতীর দলিত ভোট মজবুত। কিন্তু লোকসভা ভোটে ভাল ফল করতে গেলে স্থানবিশেষে উচ্চ বর্ণের হিন্দু ভোট ও সংখ্যালঘু ভোটও চাই তাঁর।
মূলত সেই কারণেই এখন উচ্চ বর্ণ অধ্যুষিত এলাকায় বেছে-বেছে সভা করছেন মায়াবতী। লখনউয়ের অম্বেডকর ময়দানে আজ ‘ব্রাহ্মণ ভাইচারা সম্মেলন’-এর আয়োজন করেছিল বহুজন সমাজ পার্টি। ব্রাহ্মণদের সেই সমাবেশে দাঁড়িয়েই আজ মোদীর সমালোচনা করেন মায়াবতী। সেই সঙ্গে দলিত নেত্রী বলেন, “১৯৮৩ সালে বাবাসাহেব অম্বেডকরের মতাদর্শে যখন বহুজন সমাজ পার্টি তৈরি হয়, তখন অন্য রাজনৈতিক দলগুলি মিথ্যা প্রচার চালায় যে এটা কেবল দলিতদেরই পার্টি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। বসপা যেমন দলিতদের রাজনৈতিক মঞ্চ তেমনই উচ্চ বর্ণেরও পার্টি। কারণ, বসপা-র মতাদর্শই হল সমাজের সর্বজনের হিত সাধন করা।”
মায়াবতী এ ভাবে এক দিকে যেমন ব্রাহ্মণদের কাছে পেতে চাইছেন। তেমনই মোদীর সমালোচনা করে মুসলিমদেরও বার্তা দিয়ে রাখলেন। কেননা, উত্তরপ্রদেশে বসপার ২১ জন লোকসভা সাংসদের মধ্যে যেমন ৪ জন ব্রাহ্মণ নেতা রয়েছেন তেমনই রয়েছেন ৪ জন মুসলিম নেতাও। ফলে মুসলিম ভোটও মায়াবতীর কাছে কম জরুরি নয়। কিন্তু মোদীর উত্থানের জেরে যদি ধর্মীয় মেরুকরণ হয় এবং সে ক্ষেত্রে মুলায়ম সিংহ বা কংগ্রেস যাতে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ নিয়ে যেতে না পারে সেটাও এখন সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মায়াবতী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.