প্রশ্ন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে
জেলে বন্দি এসআই,
তবু সক্রিয় ফেসবুকে

জেলের মধ্যে মোবাইল পৌঁছে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। জঙ্গি আফতাব আনসারি থেকে তোলাবাজ গুড্ডুর মতো দাগি অপরাধীর কাছে মোবাইল ফোন পৌঁছে যাওয়ার ঘটনার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এ বার জেলের মধ্যে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেল বন্দি পুলিশ অফিসারের কাছেও। সেই মোবাইলের সাহায্যে জেলে বসে ফেসবুক করার অভিযোগও উঠল বন্দি ওই পুলিশ অফিসার রাজীব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। তবে কি সতীর্থ পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে যোগসাজশেই রাজীবের হাতে এল মোবাইল? এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তা নিয়েও।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজীব জেলে যাওয়ার পর থেকে নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করছেন। রবিবার সকাল দশটা নাগাদই একটি ‘স্টেটাস আপডেট’ দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘সত্য সর্বদা জয়ী হয়...’। তার আগে শুক্রবার গভীর রাতে পোস্ট করা হয়েছিল, “চুপ করে থাকা মানেই পরাজয় নয়। এটা ঝড়ের আগের নৈঃশব্দ্যও হতে পারে!” এবং এই দু’টি পোস্ট-এর মাঝে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে জেলে ঢোকার অভিযোগে ধরা পড়েছেন রাজীবের মামলার মূল অভিযোগকারিণী।
তাঁর তরফে অভিযোগ, রাজীবই ফোন করে তাঁকে জেলে ডেকে পাঠান। সেই কারণে ফেসবুকের স্টেটাসে এই দু’টি মন্তব্যকে বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে পুলিশ।
জেলের কর্মীদের একাংশেরও দাবি, জেলে বসে পুলিশ অফিসার নয়, দাগি অপরাধীদের মতোই ব্যবহার করছেন রাজীব। আলিপুর জেলের এক অফিসারের কথায়, “রাজীবকে জেলের মধ্যে আমরা যেমন দেখছি, তাতে ফোন করে ওই মহিলাকে ফাঁদ পেতে ডেকে আনা তাঁর পক্ষে একেবারেই অসম্ভব নয়।”
ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়। সেই ঘটনার অভিযোগকারিণী মহিলা শনিবার বিকেলে পরিচয় ভাঁড়িয়ে জেলে রাজীবের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধরা পড়ে যান। তাঁর আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদারের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে রাজীব জেল থেকে মোবাইল ফোন মারফৎ ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। মহিলাকে পরিচয় ভাঁড়িয়ে জেলে দেখা করতে আসার বুদ্ধি দিয়েছিলেন রাজীবই। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা রাজীবের ফোন করা নিয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার বিস্তারিত তথ্য আনানো হচ্ছে।
খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলা এবং আমেরিকান সেন্টারে হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আফতাব আনসারির বিরুদ্ধেও জেলে বসে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযোগ উঠেছিল। জেল থেকে টেলিফোনে পাকিস্তানে স্ত্রী-র সঙ্গে কথা বলার অভিযোগও রয়েছে আফতাবের বিরুদ্ধে। কলকাতার বিভিন্ন জেলে বসে বাইরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে তোলা আদায়ের একাধিক অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন অপরাধীর বিরুদ্ধে।
জেল দফতর সূত্রের খবর, কলকাতার বিভিন্ন জেলে তল্লাশি চালিয়ে গত এক বছরে অন্তত পাঁচশো মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু তার পরেও যে আলিপুর জেলে বন্দিদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধের কাজে যে কোনও রকম অগ্রগতি হয়নি, রাজীবের ঘটনা তারই প্রমাণ। যদিও জেলের এক অফিসার বলেন, “প্রতি সপ্তাহেই আলিপুর জেলে তল্লাশি চালানো হয়। গত পরশুও তিনটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, কোন অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা জানার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই ফোনগুলির সিমকার্ড বন্দিরা নিজের নামে তোলেন না। সে ক্ষেত্রে সেই বন্দিই যে ফোন করেছেন, তা প্রমাণ করা অনেক সময়ে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
রাজ্য পুলিশের আইজি রণবীর কুমারের বক্তব্য, “রাজীবই যে জেল থেকে ফেসবুক আপডেট করছে, তা এখনই বলে দেওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত
করছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে তবেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব।”


পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.