কাঁচামালের অভাবে উলুবেড়িয়ার ব্যাডমিন্টন খেলার শাটলককের ব্যবসায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলি ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বড় কারখানাগুলি চালু থাকলেও মালিকেরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে কাঁচামালের জোগান স্বাভাবিক না হলে তাঁদের পক্ষেও ব্যবসা চালানো মুশকিল হবে। সব মিলিয়ে এই শিল্পে যুক্ত অন্তত কুড়ি হাজার মানুষের রুটি-রুজিতে টান পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা।
উলুবেড়িয়ার বাণীবন, যদুরবেড়িয়া, বাণীতবলা প্রভৃতি গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০টি শাটলকক তৈরির কারখানা আছে। রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য শাটলকক যায় উলুবেড়িয়া থেকে। এই এলাকায় প্রায় সত্তর বছর আগে শুরু হয়েছিল শাটলককের ব্যবসা। যা তৈরির মূল কাঁচামাল হল হাঁসের পালক। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে দু’বার হাঁস গা থেকে পালক ঝেড়ে ফেলে। গ্রামগঞ্জের মাঠে-পুকুরে পড়ে থাকা সেই পালক জোগাড় করেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েক হাত ঘুরে সেই পালকই আসে উলুবেড়িয়ায় শাটলকক তৈরির কারখানায়। |
তৈরি হচ্ছে শাটল কক। ছবি: সুব্রত জানা |
কারখানা মালিকেরা জানালেন, গত কয়েক মাস ধরে একশ্রেণির ব্যবসায়ী পালকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০০৬ সালেও যেখানে পালকের দাম ছিল হাজার-প্রতি ৭০০ টাকা, সেটাই ২০১২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১০০০ টাকা। বর্তমান বাজার দর দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ১৬০০ টাকা করে। তা-ও পালক পাওয়া যাচ্ছে না বলে কারখানা মালিকেরা জানান। তাঁদের অভিযোগ, বছরখানেক ধরে এই ব্যবসায় ঢুকে পড়েছে কিছু ফড়ে। তারাই পালক গুদামজাত করে কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে। ফলে পালকের দাম বেড়ে চলেছে। এক কারখানা মালিক জানালেন, এখান থেকে শাটলকক দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্রি হয়। পালকের দাম বাড়ায় তৈরির খরচ বেড়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলি অনেক কম দামে শাটলকক বিক্রি করছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠা যাচ্ছে না।
সমস্যা সমাধানে সরকারি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন কারখানা মালিকেরা। তাঁদেরই এক জন ইনামুর রহমান বলেন, “আমরা চিন থেকে পালক রফতানি করেছিলাম। কিন্তু গুণমানের দিক থেকে তা ভাল নয়। এখন সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে।” ইনামুরের পরামর্শ, “বিভিন্ন জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে পালক সংগ্রহ করে, তা হলে আমরা ওই পালক কিনতে পারি। এতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই বাঁচবে এই শিল্পও।”
জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকার শাটলকক শিল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। উলুবেড়িয়ায় একটি শাটলককের ক্লাস্টার তৈরির পরিকল্পনাও করা হয়েছে। কিন্তু ক্লাস্টার তৈরির ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের ব্যাপারে সমন্বয়ের যে অভাব রয়েছে তা বোঝা গেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে। তাঁরা সাফ জানান, তাঁদের কাছে এই মর্মে সরকারের তরফ থেকে কোনও প্রস্তাব আসেনি।
আর যারা এই পালক দিয়ে তৈরি শাটলকক ব্যবহার করেন, কি বলছেন সেই খেলোয়াড়েরা? কলকাতার প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার হীরক সেনগুপ্ত বলেন, “উলুবেড়িয়া থেকে যে শাটলককগুলি আসে, সেগুলি দামে সস্তা। শিক্ষানবিশ খেলোয়াড়দের খেলা শেখানোর ক্ষেত্রে আমরা এই কর্কগুলি ব্যবহার করি। কিন্তু বর্তমানে জোগান কমে যাওয়ার ফলে অসুবিধা তো হচ্ছেই।” |