স্থিরতার অভাব এখন সর্বক্ষেত্রে। নিয়মিত ওঠা-পড়া চলছে শেয়ার, সোনা এবং ডলারের দামে। মানুষ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না, কখন কেনা এবং কখন বিক্রি করা সঠিক হবে।
দেশি এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ব্যাপারগুলি এখন এমনই জটিল যে, বাজারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপরেও নির্ভর করা যাচ্ছে না। লগ্নি সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত অনেকেই নিতে পারছেন না এই বাজারে। সোনার দাম অনেকটাই কমেছে ভেবে যখন সোনা কেনা হল, তার পরপরই দাম আরও এক ধাপ কমতে দেখা গেল। বাজার সম্পর্কে হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করার পর অপ্রত্যাশিত ভাবে দর উঠতে দেখে অনেককেই হয়তো হাত কামড়াতে হয় এই অস্থির বাজারে। বারবার ওঠা-পড়ার পর সেনসেক্স, সোনা এবং ডলার এখন ঘোরাফেরা করছে যথাক্রমে ১৯,০০০, ২৭,০০০ এবং ৬০ টাকার আশেপাশে। এই ধরনের বাজারে সাধারণ মানুষের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ শক্ত। ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত বেশি।
পাইকারি মূল্য সূচক (‘হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স’) সম্প্রতি অনেকটা কমলেও তার প্রতিফলন খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধিতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা কমায় ঋণে সুদ কমার আশায় অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করছে শিল্পমহল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিস্থিতি অনুযায়ী কয়েক দফায় সুদ কমানোর রাস্তা দেখালেও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি এই সুবিধা গ্রাহকদের হাতে তুলে দেয়নি। এতে আদৌ খুশি নয় অর্থ মন্ত্রক। খুশি নন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সুব্বারাও-ও। ব্যাঙ্কগুলিকে সম্প্রতি সুদ কমানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এতে সায় দিয়েছেন সুব্বারাও। ফলও ফলতে শুরু করেছে। অল্প হলেও এরই মধ্যে সুদ কমানোর কথা ঘোষণা করেছে কয়েকটি ব্যাঙ্ক। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে বলা হয়েছে ঋণের উপর দেয় সুদের হার স্টেট ব্যাঙ্কের সুদের হারের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আবার তার ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে চলতি মাসের শেষে। রেপো রেট এবং সি আর আর কমতে পারে, এই আশায় বসে আছে শিল্পমহল।
সুদ কমলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। ঋণের উপর সুদ কমাতে হলে জমার উপরেও সুদ কমাবে ব্যাঙ্কগুলি। ফলে এক দিকে যেমন ঋণের চাহিদা বাড়বে, অন্য দিকে তেমন কমতে পারে আমানতের জোগান। ফলে সৃষ্টি হতে পারে ভারসাম্যের অভাব। তা ছাড়া শিল্পের গতি ঝিমিয়ে পড়ায় বেড়ে উঠছে অনুৎপাদক সম্পদের (এন পি এ) পরিমাণ, যা বিশেষ ভাবে চিন্তায় ফেলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে। এই কারণে গত সপ্তাহে শেয়ার বাজারে মেদ খুইয়েছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার ছায়া স্পষ্ট ব্যাঙ্কিং শিল্পেও।
জমানা বদলেছে। চাহিদা পাল্টেছে নতুন প্রজন্মের। এই কথা মাথায় রেখে ভাবা হচ্ছে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি হিসাবের জন্য সংশ্লিষ্ট সূচকের অন্তর্গত পণ্য-তালিকায় রদবদল আনার কথা। বর্তমান পণ্য-তালিকার ভিত্তি বছর ২০০৪-’০৫। গত ৮ বছরে চাহিদার রকমফের হয়েছে। এই কারণে ডবলিউ পি আই বাস্কেটের পণ্যের সংখ্যা ৬৭৬ থেকে বাড়িয়ে ১১৩০-এ নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এই তালিকায় ঢুকতে পারে ন্যুডলস, গিটার, ক্রিকেট-ব্যাট, বল, হারমোনিয়াম, চকোলেট-সহ নতুন প্রজন্মের বিশেষ পছন্দের বহু পণ্য। ডলারের দাম এতটা বেড়ে ওঠায় দাম বাড়তে পারে আমদানি করা যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়, এমন বহু পণ্যের। এই তালিকায় থাকতে পারে গাড়ি, বাইক, ক্যামেরা, কম্পিউটার এবং নানা ধরনের বৈদ্যুতিন পণ্যও। প্রসঙ্গত, আমদানি খরচ বাড়ার কারণেই আবার বাড়তে শুরু করেছে পেট্রোপণ্যের দাম।
পুরোপুরি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত একটি ব্যাঙ্ক খুলতে চলেছে ভারত সরকার। নাম হবে ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক। এই ব্যাঙ্কের মূলধন বাবদ যোজনা কমিশন ১,০০০ কোটি টাকা অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দিল্লিতে হবে ব্যাঙ্কের সদর দফতর। ৬টি শাখা নিয়ে ১ নভেম্বর কাজ শুরু করার কথা ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্কের। গ্রামাঞ্চলে মহিলা ব্যাঙ্ক ভাল কাজ করবে, আশা পি চিদম্বরমের। বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, লোকসভা নির্বাচনের মুখে খাদ্য সুরক্ষা বিলের মতো এটিও একটি চমক। |