মাঝে আর মাত্র কয়েকটি দিন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার তুঙ্গে। ‘আমাকে ভোটে জেতান’ এই আর্জি নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে ব্যস্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। ভোটে মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীরা বিপক্ষ রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী সম্পর্কে কটু মন্তব্য করতে ছাড়ছেন না, সেখানে দুবরাজপুরের গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা তিন মহিলা প্রার্থীর ভোট প্রচারে অন্য ছবি।
|
মল্লিকা মণ্ডল। |
বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সম্বন্ধে যদি বা এক-আধটা কথা খরচ করা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপক্ষে থাকা প্রার্থী সম্পর্কে একটি কথাও খরচ করছেন না কোনও প্রার্থী। আর করবেনই বা কী করে! তাঁরা যে সম্পর্কে তিন বোন। হ্যাঁ গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের মেটেলা গ্রামে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনাথী মণ্ডল, বন্যা গোপ এবং মল্লিকা মণ্ডল। অনাথী ও বন্যা সহোদরা। আর মল্লিকা ওঁদের পিসতুতো বোন। সকলেরই বিয়ে হয়েছে গ্রামেই।ভিন্ন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা বোনেদের মধ্যে কে জেতে সেটা দেখতে তৈরি এলাকার বাসিন্দারও। বোনেদের প্রত্যেকেই চাইছেন যে, তিনিই জিতুন। কিন্তু কোথাও যেন একটা ধর্ম-সঙ্কট তৈরি
|
বন্যা গোপ। |
হয়েছে। কারণ, দিদিদের বিরুদ্ধে কী প্রচার চালানো যায়? বলছেন, সিপিএমের টিকিটে দাঁড়ানো ছোট বোন আনাথী।
আবার তৃণমূলের প্রার্থী পিসতুতো বোন মল্লিকা বলছেন, “আগের ভোটে পঞ্চায়েতের আসনে জিতেছিলাম। তাই দল এ বার পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু মামাতো বোনেরা আমার বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে জানলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম না।” আরেক বোন বন্যা অবশ্য নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, “শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছেতেই প্রার্থী হয়েছি। হারলে একটু খারাপ লাগবে। কিন্তু বোন ও দিদির বিরুদ্ধে প্রচার করা বা সম্পর্ক খারাপ করার ইচ্ছে নেই।”
|
অনাথী মণ্ডল। |
নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হোক তা চাইছেন না পেশাগত ভাবে চাষআবাদের সঙ্গে যুক্ত তিন বোনের স্বামীরাও। মল্লিকাদেবীর স্বামী সপ্তম মণ্ডল, অনাথীদেবীর স্বামী রতন মণ্ডল এবং বন্যাদেবীর স্বামী তপন গোপেদের কথায়, “গ্রামের মানুষ যাঁকে ভোট দেবেন তিনিই জিতবেন। নিজেদের মধ্যে বিরোধ করার কী আছে।” এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য জানাচ্ছেন তিন প্রার্থীর রক্তে রাজনীতির বীজ ঢুকিয়েছেন ওঁদের দাদুই। গ্রামেরই বাসিন্দা ওঁদের দাদু সদানন্দ মণ্ডল দীর্ঘকাল বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একবার গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান এবং দু’বারের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। তিন নাতনিই ভোটে লড়ার আগে দাদুর আর্শীবাদ নিয়ে এসেছেন। সদানন্দবাবু আবশ্য এ কথা মেনে নিয়েছেন। বলেছেন, “হ্যাঁ তিনজনই আমার কাছে এসে জানিয়েছিল যে তার নির্বাচনে লড়তে চায়। ওদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার আধিকার আমার নেই। ইচ্ছেও নেই। তাই অনুমতি দিয়েছি। আর এটাই তো গণতন্ত্র।” |