একজন অবসরপ্রাপ্ত রিভার পাম্পের কর্মী, আর অন্যজনের দিন চলে চাষবাস করে। একজন প্রায় সাড়ে চার দশকের পোড় খাওয়া বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী, আর অন্যজন দেড় দশক ধরে বিজেপির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২০০৯ সালে একবার জয়ীও হয়েছেন। তবে এখানেই শেষ নয়, ভোট যুদ্ধে প্রতিপক্ষ হওয়ার আগে এঁদের আরও একটা পরিচয় আছে। প্রথমজন,সুকুমার দেবনাথের জামাই হলেন দ্বিতীয়জন,অর্থাৎ বিজেপি প্রার্থী নির্মলকুমার দাস।
সুকুমারবাবু এ বছর জাহান্নগর পঞ্চায়েতের ৩৪ নম্বর বুথ থেকে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন। আর নির্মলবাবু দাঁড়িয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। তবে ভোট-বাক্সকে সংসারের হাঁড়ি-কলসির থেকে দূরেই সরিয়ে রেখেছেন তাঁরা।
ভাণ্ডারটিকুরি স্টেশন লাগোয়া বাড়িতে জামাইকে পাশে বসিয়ে সুকুমারবাবু বলেন, “১৯৭০ সালে রিভার পাম্পে চৌকিদারের চাকরি পাই। সেই থেকেই বাম ট্রেড ইউনিয়ন করছি। সারাজীবন যেভাবে সততার সঙ্গে কাজ করেছি, দলটাও ততটাই নিষ্ঠা নিয়ে করেছি। অবসরের পরে ময়দানে নামর জন্য পার্টির নির্দেশ তাই অমান্য করতে পারিনি। তবে এর সঙ্গে পারিবারিক জীবনের কোনও বিরোধ নেই।” শ্বশুরমশাইয়ের কথার রেশ টেনে নির্মলবাবুও বলেন, “উনি দীর্ঘদিন একটা মতাদর্শে বিশ্বাস করে এসেছেন। আমি অন্য মতাদর্শে। এর সঙ্গে ওঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা, সমীহের কোনও যোগ নেই।” |
চাষবাস করেই দিন কাটানো নির্মলবাবু আরও বলেন, “৯৮-এ বিজেপিতে যোগ দিয়েই ভোটে দাঁড়াই। কিন্তু সিপিএমের কাছে হেরে যাই। ২০০৩ জিতেছিলাম। ২০০৮-এ পঞ্চায়েত সমিতিতে মাত্র ৬ ভোটে হেরে যাই। তবে এ বার নিশ্চিত জিতব।”
কিন্তু শ্বশুরমশাইয়ের বুথে কী হবে? নির্বিকার মুখে জামাই বলেন, “ওখানেও বিজেপি জিতবে। বাবা পারবেন না।”
জামাইয়ের এত স্পষ্ট জবাবের পরেও সুকুমারবাবুর স্ত্রী মালতীদেবী কিন্তু নির্বিকার। শ্বশুর না জামাই, পাল্লা কোন দিকে ভারি জানতে চাওয়া হলে তাঁরও সাফ কথা, “যতদিন বাঁচব কাস্তে-হাতুড়িতেই ভোট দেব। তবে জামাই এলে সবার আগে সবার আগে ওর পছন্দের পদ রান্না করব। আমি নির্মলকে চিনি, বিজেপিকে নয়।”
দলের দু’র্দিনে প্রার্থী হয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন সুকুমারবাবুও। তিনি বলেন, “আসলে অন্য কিছু না, বাকি দলগুলো প্রচারে অনেক খরচ করছে। আমরা তো ততটা পারছি না। আর আমি অবসরপ্রাপ্ত মানুষ। আমার তেমন ক্ষমতা নেই। মানুষের কাছে যাচ্ছি, কথা বলছি। এখন সব তাঁদেরই হাতে।”
তবে ভোটের থেকেও সুকুমারবাবুর বড় চিন্তা, নাতনির স্কুল ড্রেস করিয়ে দিতে হবে। নির্মলবাবুরই ছোট মেয়ে সে। আর গরমের দুপুরে শ্বশুর-শাশুড়িকে ঘামতে দেখে নির্মলবাবুর স্বগতোক্তি, “এই বারান্দায় একটা সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।” |