বালি চাপা ক্ষোভই টেক্কা ভোট যুদ্ধে
ধান খেত চাপা দিয়ে যায় বালি। পাকা রাস্তা মুখ ঢাকে বালিতে।
বালি ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ। ভোটের মুখে ক্ষোভে ফুঁসছেন গলসি ১ ব্লকের লোয়া, রামগোপালপুর, রাইপুর গ্রামের মানুষ। আর পঞ্চায়েত সমিতির ২৪ নম্বর আসনের অন্তর্গত ওই সব গ্রামের সেই ক্ষোভকেই ভোট যুদ্ধে কাজে লাগাতে নেমেছেন কংগ্রেস প্রার্থী ইজাহারুল ইসলাম। বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভই হাতিয়ার, বলছেন তিনি।
পঞ্চায়েত সমিতির এই আসন গত বার গিয়েছিল বামেদের দখলে। জিতেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বজলুর রহমান। এ বার বামেরা সেখানে প্রার্থী দেয়নি। বজলুরের দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরেই তাঁরা এ বার প্রার্থী দিতে পারেননি। ফলে, এ বার ওই আসনে মুখোমুখি লড়াই কংগ্রেস প্রার্থী ইজাহারুল ও তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ মোল্লার। ২০০৯ পর্যন্ত ইজাহারুলও তৃণমূলের কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার পরে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। তাঁর দাদা জাহির আব্বাস মণ্ডল অভিযোগ করেন, তৃণমূলের মদতে ওই সময় থেকে এলাকায় বালি পাচার, তোলাবাজি, মহিলাদের হেনস্থা-সহ নানা দুষ্কর্ম শুরু হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে যাতায়াত, স্মারকলিপি পেশসবই করেছিলেন ইজাহারুল। আর তাতেই নেতাদের রোষে পড়ে দল ছাড়তে হল, দাবি তাঁর। আর এ বার কংগ্রেস টিকিট দেওয়ায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে।
প্রচারে কংগ্রেস প্রার্থী ইজহারুল ইসলাম। —নিজস্ব চিত্র।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা এলাকার যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিবাদী ওই যুবকের কথা শুনে আমি তাঁকে আমাদের প্রার্থী হতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রাজি হয়েছেন।” ইজাহারুলের অভিযোগ, তৃণমূলের দাপটে ঠিক মতো প্রচার চালাতে পারছেন না তিনি। তবু জেতার আশা ছাড়ছেন না। তিনি বলেন, “ভোটে জিতলে আর কিছু যদি না-ও পারি, গ্রাম-গ্রামে এই বালি মাফিয়াদের প্রতাপ ঠেকাব।” বালি পাচার নিয়ে এলা কার ক্ষোভই তাঁকে জেতাবে, দাবি তাঁর।
বালি মাফিয়াদের নিয়ে ক্ষোভের কথা যে মিথ্যা নয়, এলাকা ঘুরলেই মালুম হয়। রাইপুরের বাসিন্দা সঞ্জু আনসারি, একারামুল হকেরা বলেন, “বালি পাচার নিয়ে প্রায়ই নানা গোলমাল হয় এলাকায়। তাতে মহম্মদ মোল্লারও মদত রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে বালি বোঝাই ট্রাক ধান খেতের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়।” কলেজ ছাত্রী পারভিন সুলতানা, আয়েষা বেগমদের কথায়, “বালি পাচারে যুক্ত বহিরাগত লোকজন গ্রামে ঢুকে প্রায়ই মহিলাদের দিকে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে। মহম্মদ মোল্লা ইচ্ছে করলেই এ সব বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু করেন না।” আটপাড়ার প্রবীণ শেখ ইসমাইল, করকোনার গোপাল গঙ্গোপাধ্যায়দের দাবি, “চায়ের দোকানে বসে সরকারের কোনও কাজের নিন্দা করলে বালি পাচারের লোকজন তেড়ে আসে। মারধরও করে।”
এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব টের পাওয়া যায় দলের গলসি-১ ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে। দলীয় প্রার্থী মহম্মদ মোল্লার পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, “মোল্লার সঙ্গে বালি মাফিয়াদের যোগাযোগের অভিযোগ মিথ্যা নয়। ওদের নানা কুকর্মের জন্য গ্রামের পর গ্রাম বিপক্ষে চলে গিয়েছে। লোয়া, রামগোপালপুর পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থীদের হারাতে উনি আম, ইলেকট্রিক ফ্যান চিহ্নে গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। মনে হচ্ছে ইজহারুলই বাজি মেরে দেবে।” মহম্মদ মোল্লা অবশ্য কোনও অভিযোগই মানতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “ও সব বিরোধীদের অপপ্রচার। ভোটে ওদের খুঁজেই পাওয়া যাবে না। বিপুল ব্যবধানে জিতব।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) যুব সভাপতি অভিজিৎ ঘটকেরও দাবি, “আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ও সব অভিযোগ ঠিক নয়। তিনি ওই এলাকায় ভাল কাজ করছেন। জনার্দনবাবু যা বলেছেন তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত মত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.