পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষ হল ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার বাঁশিয়া গ্রামে। এর জেরে আশিস হাজরা নামে এক তৃণমূল সমর্থকের হাত ভেঙেছে। তাঁকে লাউদোহা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূলের একটি অস্থায়ী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ। বাঁশিয়া গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম দলীয় পতাকা লাগাচ্ছিল। ছিলেন এলাকার সিপিএম নেতা সঞ্জয় পাল এবং প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সিপিএম প্রার্থী বেলি টুডু। তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেও পতাকা লাগানোর চেষ্টা করছিলেন সিপিএমের লোকজন। তাঁরা প্রতিবাদ করলেও শোনেননি। মারধর করা হয় রঞ্জিৎ রায়, অমল রায় ও আশিস হাজরা নামে তিন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে। তাদের একটি অস্থায়ী কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়। আশিসবাবুর হাত ভেঙেছে। যদিও সিপিএমের পাল্টা দাবি, প্রচারে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। মারধর করা হয়েছে সঞ্জয়বাবু ও বেলিদেবীকে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’দলই অভিযোগ জানিয়েছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই ব্লকের লাউদোহা গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল করতে চলেছে তৃণমূল। গৌরবাজার পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের ৪টিতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সিপিএম প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনে আর একটি আসনে জিতলেই ওই পঞ্চায়েতও দখলে চলে আসবে তৃণমূলের। এছাড়াও জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪টি, গোগলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬টি এবং ইছাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬টি আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। ব্লকের মধ্যে একমাত্র প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেই ১৩টি আসনের প্রতিটিতে সিপিএমের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের।
সিপিএমের অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দেওয়া ও প্রত্যাহার পর্বে লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়ে সিপিএম প্রার্থীদের হয়, মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি, অথবা পরে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতাপপুরের সব আসনেই প্রার্থী দিতে পেরেছে সিপিএম। সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, “সে জন্যই প্রচারের সময়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে, যাতে আমরা মানুষের কাছে না পৌঁছতে পারি।” তাঁর দাবি, শান্তিপূর্ণ ভাবেই তাঁরা প্রচারে বেরিয়েছিলেন। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সিপিএমের পতাকা লাগানো হচ্ছিল গ্রামের মোড়ে মোড়ে। হঠাৎ একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এসে তাঁদের উপরে চড়াও হয়। তাঁদের পতাকা লাগাতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি তাঁর। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
তবে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘বিনা প্ররোচনায়’ তাঁদের তিন কর্মী-সমর্থককে মারধর এবং তাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে সিপিএম। তাঁর অভিযোগ, “দিনের পর দিন সন্ত্রাস চালিয়ে এলাকায় বিরোধীদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি সিপিএম। এখনও তাই করছে। আমরা আর বরদাস্ত করব না। নিজেরা প্রার্থী দিতে না পেরে আমাদের ঘাড়ে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে মুখরক্ষার চেষ্টা করছে সিপিএম। পুলিশের কাছে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।” |