আমি মাঝে মাঝে নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটটা দেখতে আসতাম। ওখানেই লক্কার সঙ্গে পরিচয়। লক্কা বালি, পাথর সাপ্লাই করত। এখন ওকে আমি লক্কাবাবু বলি। এখন ও নিজেই প্রোমোটার। ২০০৫-এ ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’-এর সময় ওর প্রথম ফ্ল্যাটবাড়ি, নাম দিল ‘আশা অ্যাপার্টমেন্ট’। ২০১২ সালে যেটা শেষ হল, ওটার নাম দিয়েছে ‘নতুন আশা’। আর একটা কাজ চলছে, ভাবি বলব নতুন ফ্ল্যাটটার নাম দাও ‘ধন্য আশা’। কুহকিনী শব্দটা ঊহ্যই থাক। না, কিছু বলিনি। হয়তো দেশপ্রেমমূলক কিছু নাম রাখবে। কারণ, গত এক-দেড় বছরে দেখছি ‘সূর্য সেন আবাসন’, ‘নজরুল অ্যাপার্টমেন্ট’ উঠেছে। আগে কলোনির নাম হত এ রকম। ‘বিষের বাঁশি’, ‘ভারততীর্থ’-ও হয়েছে। ভারততীর্থের তলায় ঠেলায় করে সবজিওয়ালারা পুদিনা, কারিপাতা এ সবও নিয়ে আসে। উপরের দিকে তাকিয়ে হাঁক দেয় ‘লউকি, বায়গন, টমাটর্র্র্...’। জানালা থেকে শোনা যায় ‘আতি হুঁ...’।
পাড়ার মিষ্টির দোকানে একটু রাবড়ি কিনতে গিয়েছিলাম। দোকানদার বলল আর নেই। ইনি দেড় কিলো লিয়ে লিলেন যে...। ইনি, মানে লক্কাবাবু। পাশেই ছিলেন।
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
বললেন, মিসেস একটু বাপের বাড়ি যাবে বলছিল, তাই একটু রাবড়ি...। তার পর দোকানের লোককে বলল আমাকে এক কিলো আড়াইশো, আর দাদাকে আড়াইশো দিয়ে দাও। বলা তো নয়, হুকুম। আমরা কেমন মিনমিন করে বলি তিনটে শিঙাড়া দিন, কিংবা পাঁচটা সন্দেশ। দোকানের লোকই হুকুম করে খুচরো দেবেন কিন্তু...।
লক্কাবাবু আমায় দেখে বলল খুব ভাল হল আপনাকে পেয়ে গেলাম, ভাবছিলাম কার কাছে যাব, সবার কাছে তো যাওয়া যায় না, আর নিজের লোক ছাড়া ফ্যামিলি ম্যাটার ডিসকাশন করা যায়? আমার ছেলেটাকে কার্শিয়াং-এ পড়াই। এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। একটা চিঠি লিখেছে, একটু পড়ে দেন তো...।
একটু ফাঁকায় গিয়ে পকেট থেকে চিঠিটা বের করল। ইংরিজিতে লেখা: মাই ডিয়ার ড্যাড, ইউ উইল বি ভেরি হ্যাপি টু নো...।
লক্কাবাবু বললেন, বাংলায় আসল কথাটা বলেন। আমি বলি, আপনার ছেলে ওদের স্কুলের ভলিবল টিমে চান্স পেয়েছে। গ্যাংটকের একটা স্কুলের সঙ্গে ভলিবল খেলতে ও গ্যাংটক যাবে। ওর খেলা ও ভিডিয়ো করে রাখতে চায়...।
আমাকে থামিয়ে বলে শুয়োরের বাইচ্চাটা আবার টাকা চায়, বুইঝ্যা গেছি।
আমি চুপ করে গেলে বলে থামলেন ক্যান, কন...।
আমি পড়ি খেলাটা ভিডিয়ো হলে তোমরা সবাই আমার খেলা দেখতে পারবে। আমিও আমার খেলাটা দেখে নিজের ভুল-ত্রুটি বুঝতে পারব। আমাদের বন্ধুদের সবারই ভিডিয়ো ক্যামেরা আছে। শুধু আমারই নেই। এ জন্য আমার খুব লজ্জা করে। আমার নামে পঁচিশ হাজার টাকা জমা করে দাও, এখানে অনেক ইলেকট্রনিক দোকান আছে। প্লিজ মানি ডাল দেনা পাপা, ইমিডিয়েটলি, ডোন্ট ফরগেট।
কন দেখি, কী কমু? উত্তেজিত হলে বাঙাল ভাষাটা বেরিয়ে যায় লক্কাবাবুর।
আমিই বা কী কমু? চুপ করে থাকি।
উনি বলেন, একটা ভাল ইস্কুলে দিলাম। গাদা গাদা খরচা। ভাবলাম, ইংলিশটা ভাল করে শিখুক। এখন দেখি ইংলিশ কায়দায় পেছনে বাঁশ দেয়। ক’দিন আগে গেল সিঙ্গাপুর। তিরিশ হাজার টাকা গেল। তার আগে ল্যাপটপ...।
আমি বলি, ও বাংলায় চিঠি লিখতে পারে না?
উনি বলেন, না, পারলেও লিখে না। আমিও ইংরাজিতে লিখতে পারি না, ফোনেই কথা হয়। কেবল বলে, ল্যাপটপ কেনো বাবা, মেল করব তোমায়। শুয়োরের বাচ্চা ভালমতই জানে আমি ওই সব ঢপের ল্যাপটপ জানি না। রগড় করে।
আমি বলি, এই ভিডিয়ো ক্যামেরা কেনার কথাটাও তো ফোনে বললেই পারত, চিঠি লিখতে গেল কেন?
ও বলে, পয়সাকড়ির কথা উঠলেই ম্যাজাজ ঠিক রাখতে পারি না তো, ফোন কাইট্যা দি।
এর পর মাঝে মাঝে লক্কাবাবুর সঙ্গে দেখা হলে ভদ্রতাবশত ওর ছেলের কুশল নিতাম।
ও বলত, আর কইয়েন না, সব রক্ত শুইষ্যা নিল হালায়।
রক্তদান মহৎ দান— প্ল্যাকার্ড পড়েছে পাড়ায় পাড়ায়। মাইকে খুব দেশপ্রেম বাজছে তারস্বরে। লক্কাবাবু একটা হাতি মার্কা খাতা নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এল। বলল, সবার সঙ্গে তো সব কিছু ডিসকাশন করতে পারি না। রক্তদানের ডিম, ল্যাংড়া আম, কাঁচাগোল্লা আমাকেই স্পনসর করতে হবে। শিবির উদ্বোধন করতে আসছেন সব মাননীয়রা। পাকেচক্রে আমিও মাননীয়র মধ্যে পড়ে গেছি। যখন অ্যালাউন্স করে: মাননীয় লক্কা হালদার, কেমন জানি লাগে! ইস্কুলে একটা নাম ছিল লক্ষ্মণ, সেটা বললেও হয়। কিন্তু এই নামে আমায় কেউ চেনে না। যাউক গিয়া, আমার এই খাতায় একটা ছোটমোটো ভাষণ লিখ্খ্যা দেন না কাইন্ডলি। সব দিক কভার করবেন দাদা, নেতাজিও তো বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও...’। আচ্ছা, নজরুল কি রক্তদান করেছিলেন কখনও? বিধান রায়? যদি জানেন, একটু কভার কইরা দিবেন প্লিজ...।’ বিনয়ের সময়েও বাঙাল ভাষা বের হয় দেখছি!

• উত্তরাখণ্ডে গেলেন, দাবি করলেন পাঁচ মিনিটে ছ’হাজার দুর্গতকে বাঁচিয়েছেন। সরকার কোটি
টাকা ক্যাশ পুরস্কার দিল। হঠাৎ ১২টা সাধু এসে কিল-চড় মেরে সব টাকা কেড়ে নিয়ে গেল।
• ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হলেন। ভাবলেন, মিডিয়ার সঙ্গে উদ্ধত
ব্যবহার করবেন, হিন্দি ইন্টারভিউয়ের আগে উঠে চলে যাবেন।
বসে বুঝলেন, চেয়ারে ফেভিকল লাগানো। আপনাকে
বসিয়ে রেখে মিডিয়া প্রশ্নই করল না, বেরিয়ে গেল।
• হাতে এখন বেশি পয়সা নেই, এ দিকে অ্যানিভার্সারি সামনে,
স্ত্রী গয়না চাইবেই। বিবাহবার্ষিকীর তারিখ চেঞ্জ করতে চেয়ে
কোর্টে গেলেন। কোর্ট তারিখ তো বহাল রাখলই, বলল
পাঁচ দফায় উৎসব পালন করতে হবে।

জুলাইয়ের পয়লা দিনটিতে, ডা. বিধান চন্দ্র রায়-এর জন্মদিনে, কলকাতায় বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য ৫০ জন ট্যাক্সি-চালক শপথ নিলেন, আজ থেকে তাঁরা কখনওই কলকাতার রাস্তায় যাত্রীদের ‘রিফিউজ’ করবেন না। শুনে ৭৭৬৭ ডেসিবেল ‘অ্যাঁ!’ ব্যস্ত আপিস-সময়েও যে শহরে ট্যাক্সি মেলে না, চালকেরা যাত্রীর গন্তব্যটি ছাড়া বাকি সব ঠাঁয়ে যেতে রাজি, নাগরিক অভিযোগে আকাশ-বাতাস ফেসবুক ব্যাজার, সেখানে দাঁড়িয়ে এ কী প্রতিজ্ঞা হে ট্যাক্সি-রাজ! কলকাতায়, কাজ-ক্লান্ত সন্ধেয়, পকেটে ঠাসা নোট সত্ত্বেও মুখের ওপর ঠাস ‘যাব না’ শোনার ভয়ে অনেকেই বাসে-মেট্রোয় বাদুড়-ঝুলে ঘরমুখো হন। ট্যাক্সি-ইউনিয়নের কর্তারা টিভি-চ্যানেলে এসে বলে যান, কোনও ট্যাক্সিই প্যাসেঞ্জার-প্রত্যাখ্যান করে না, শুনে দর্শক চোখ এমন গোল্লা করেন যে বাচ্চার জ্যামিতি প্রবলেম সহজ হয়ে আসে। আইনকে লবডঙ্কা দেখাব এবং ভদ্রতাকে কাঁচালংকা খাওয়াব, এই মিশন নিয়েই চালকেরা পথে নেমেছেন, ভাবতে লোভ জাগে। সেই মানচিত্রে কিছু চালক অন্তত যাত্রী-সুবিধায় এগিয়ে এসেছেন, স্যালুট! মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিধান রায় এ রাজ্যের ট্যাক্সি-পরিষেবাকে উন্নত করেছিলেন, নিজেও একটি ট্যাক্সির মালিক ছিলেন। তাঁর জন্মদিনে তাই ট্যাক্সিচালকদের এই সুপ্রয়াস। পুলিশকে নিজেরাই অনুরোধ করেছেন: বিচ্ছু ড্রাইভারদের স্পট ফাইন করুন!

চিন-এ বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়ছে, ২০৫০-এ মোট জনসংখ্যার ৩৫%-ই হবেন ষাটোর্ধ্ব। লক্ষ বৃদ্ধ বাবা-মা’র সুবিধায় নয়া আইন: সাবালক ছেলেমেয়েরা তাঁদের দেখাশোনা করতে বাধ্য, অন্যথায় শাস্তি। চিনেও অর্থনৈতিক সংস্কারের ঢেউয়ে যৌথ পরিবার ভাঙছে। তার ওপর সরকারি ‘এক সন্তান নীতি’র জেরে সব খুদে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাকরি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে দূর দেশে। মা-বাবারা আপন সন্তানের বিরুদ্ধে এত মামলা করেছেন যে আদালতও অস্বস্তিতে। নির্দেশ দিয়েছে, বৃদ্ধ মা-বাবার ‘দৈনন্দিন, আর্থিক ও পারমার্থিক’ সমস্ত প্রয়োজন মেটাতে হবে সন্তানকে, দূরে থাকলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে, দেখতে আসতে হবে। সমস্যাটা তো আমাদের ভয়ানক চেনা, পশ্চিম বঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে বারান্দায় একলা বাবা-মা বসে, সমুদ্দুর পেরিয়ে একটা পাঁচ মিনিটের ফোন আসতে ছ’মাস। কোনও গুণধর আবার আদালতে মা’কে দেখিয়ে বলছেন ‘ভাড়া করা ভিখিরি’, যাতে ভরণপোষণ না করতে হয়। চিনের মতো আইন এখানে করা যায় কি? অবশ্য ঘাড়ে ধরে কখনও মানবিকতা চেনানো যায় না, আর ছেলেমেয়েও বলতে পারে ‘মা-বাপই শিখিয়েছে আত্মকেন্দ্রিক হতে’!
৩৮
পূর্ব রেল আর মেট্রো
রেলের অধীনে যতগুলো
পুলিশ কুকুর আছে
৪১০০০
রেলের প্ল্যাটফর্ম ও সংলগ্ন জনবহুল
এলাকায় যত্রতত্র থুতু ফেলার জন্য মোট
যত টাকা জরিমানা আদায় করল
পূর্ব উপকূল রেল কর্তৃপক্ষ
১৩৯৭
২০১৫ সালে পুরীর জগন্নাথদেব-এর ‘নব
কলেবর উৎসব’-এর জন্য পরিকাঠামো গড়তে
যোজনা কমিশনের কাছে যত কোটি টাকার বিশেষ
অনুদান চাইলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক
১৬০০০০
নিলামে যত মার্কিন ডলারে বিক্রি হল
১৯৬৫ সালের ছবি ‘থান্ডারবল’-এ জেম্স
বন্ড-রূপী শন কনারি-র পরা হাতঘড়ি

কুড়ি বছরের ফুটবল-কেরিয়ারে
যত বার লাল কার্ড দেখেছেন
ডেভিড বেকহ্যাম
১৩০০০০০০
জন্মদিনে যত মার্কিন ডলার (ভারতীয়
মুদ্রায় ৭৮ কোটি টাকা) বকেয়া কর
মেটালেন লিয়োনেল মেসি
৪৭
দেশের যত শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়ে
আদৌ কোনও কাজ করার উপযুক্ত নন বলে
জানাল একটি কর্মসংস্থান সংস্থার সমীক্ষা
২২.২
২০১২ সালে ভারতে কোটিপতি
মানুষের সংখ্যা আগের বছরের
তুলনায় যত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে
৬.৬
তথ্যের অধিকার আইনে তথ্য জানতে চেয়ে
গত এক বছরে যত লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে।
৬৮% ক্ষেত্রে উত্তর দেওয়া হয়েছে,
বাতিল করা হয়েছে ৮.৩%


সী

চৌ
ধু
রী

অন্যের দোষ সবই... এ কথাটা ঠিক স্যর!
তবু জলে ডুবে গেছি। চড়া দর রিকশার।
যারা নিন্দুক তারা করুকগে হইচই
ভায়া লন্ডন চলো ভেনিসেই পৌঁছই।

বিচার করার চাকরি তোমার, করবে সেটাই, তা না।
চার্জশিটে কার নাম রয়েছে, দরকার কী জানা?
চাকরি মানেই ‘ভাই, নে জাস্ট মাসের শেষে মাইনে।’
আইনের শেষ কথাই আমি, যা-ই লেখা থাক আইনে।
লেটারিং বেটারিং
পাহাড়ে বেনিয়ম না বেনিয়মের পাহাড়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.