শনিবারের রৌদ্রজ্জ্বল লন্ডনের দুপরে সাবিন লিজিকি কোনও অ্যালার্জি স্পেশ্যালিস্ট চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়েছিলেন কি না তার খবর ব্রিটিশ পাপারাৎজিদের কাছেও আছে কি! থাকলেও হয়তো অবাক হওয়ার নেই।
খুব ছোটবেলায় ঘাসে অ্যালার্জি ছিল স্টেফি গ্রাফের দেশের নতুন টেনিস নায়িকার। যিনি শনিবার ইস্তক আপাতত ট্র্যাজিক নায়িকার আখ্যা পাবেন। সেরেনা, স্তোসুর, শিয়াভোনে, রাডওয়ানস্কা, ভেসনিনাকে হারিয়ে উইম্বলডন ফাইনালে রেড হটফেভারিট হিসেবে উঠে আসার পর যাঁর সম্পর্কে বলা হচ্ছিল, ঘাসের কোর্টের টেনিসের সেরা বিজ্ঞাপন। কিন্তু ফাইনালে দেড় ঘণ্টার মধ্যে আন্ডারডগ বার্তোলির সামনে স্রেফ ‘চোক’ করার পর লিজিকির আবার ঘাসে অ্যালার্জি ফিরে এল কি না সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিন বছর আগে গোড়ালির চোটের পর যাঁকে কার্যত নতুন করে হাঁটতে শিখতে হয়েছিল, সেই মেয়ের এ দিন সেন্টার কোর্টে কিছুই ঠিক না হওয়ায় একটা সময় কাঁদতে কাঁদতে খেলছিলেন লিজিকি! |
স্টেফির উইম্বলডন-স্মৃতি উস্কে দিলেও শেষরক্ষা হল না লিজিকির। |
ঠিক দশ বছর আগে সেন্টার কোর্ট মেয়েদের ফাইনালে বিজিতের এমনই কান্না দেখেছিল। তিরানব্বই ফাইনালে নির্ণায়ক সেটে লিজিকির কিংবদন্তি পূর্বসুরি স্টেফি গ্রাফের বিরুদ্ধে ৫-১ এগিয়ে ম্যাচ পয়েন্ট থেকে ৪-৬ হারার পর রানার আপের পুরস্কার নিতে গিয়ে ডাচেস-এর কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ইয়ানা নভোৎনা। এ দিন নির্মম পেশাদারিত্বের যুগে লিজিকির ম্যাচ চলাকালীন কান্না দেখেও নেটের উল্টো দিকে বার্তোলির শরীরীভাষায় বিন্দুমাত্র আলগা ভাব দেখা যায়নি। টিভি ক্যামেরা কিন্তু ঠিক ওই মুহূর্তে গ্যালারিতে বসা বিলি জিন কিং, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাদের ছেড়ে নভোৎনাকে ‘জুম’ করে! কাকতালীয়। কিন্তু তার পরেই লিজিকি দ্বিতীয় সেটে ১-৫ থেকে ৪-৫ করে ফেলেছিলেন। খেলার সময় তাঁর মুখের ট্রেডমার্ক হাসিটাও ফাইনালে একমাত্র তখনই এ দিন দেখা গেল।
বরিস বেকার, আনন্দবাজারে যিনি জার্মান পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়েও লিজিকিকে ফাইনালে ফেভারিট লিখেছিলেন, এ দিন ম্যাচ শেষে বলেছেন, “বার্তোলির কাছে লিজিকি যত না হারল, তার চেয়ে বেশি হারল নিজের আবেগের কাছে। উইম্বলডন ফাইনাল খেলার আবেগে ও হয়তো ভেসে গিয়েছিল ম্যাচের আগেই। যেখানে বার্তোলি সেমিফাইনালের মতো ফাইনালের আগেও লকাররুমে আধ ঘণ্টা ঘুমিয়ে স্নায়ু আরও ঠান্ডা করে কোর্টে নেমেছিল। লিজিকি যে আসল অস্ত্র বুম বুম সার্ভিস একটার পর একটা হারিয়ে মানসিক চাপে পড়ে গিয়েছিল সেটা একটা জিনিসেই বোঝা গিয়েছে খেলার সময় ওর মুখের হাসিটা ছিল না।”
তা সত্ত্বেও বার্তোলি হয়তো রুপোর ‘ভেনাস রোজওয়াটার ডিস’-এর সঙ্গে ১৪ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার চেক পেয়েছেন। কিন্তু হেরেও আবেগের ট্রফি জিতে নিয়েছেন লিজিকি। নইলে হার নিশ্চিত বুঝেও দ্বিতীয় সেটে তাঁর ১-৫ থেকে ৪-৫ করার সময়ই কেন সেন্টার কোর্টে সবচেয়ে বেশি হাততালি শোনা যাবে? বার্তোলি চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নেওয়ার সময়েও যে শব্দ ওঠেনি! |