যুবককে নিগ্রহের নালিশে অসঙ্গতি, বলছে পুলিশ |
পার্ক সার্কাসে এক যুবককে মারধর ও নিগ্রহের ঘটনার অভিযোগে অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করছে লালবাজার। যদিও অভিযুক্ত তিন পুলিশকর্মীকে থানা থেকে সরিয়ে বিভাগীয় ডিসি-র অফিসে পাঠানো হয়েছে।
বেনিয়াপুকুর এলাকার জাননগর রোডের বাসিন্দা মহম্মদ রফিকের বাবা আব্দুল হামিদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ তাঁর ছেলে তপসিয়া এলাকায় একটি কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। পার্ক সার্কাস ময়দানের কাছে রফিকের সঙ্গে কয়েক জন যুবকের গোলমাল বাধে। সেই সময়ে টহলরত তিন পুলিশকর্মীকে দেখে রফিক তাঁদের সাহায্য চান। অভিযোগ, পুলিশকর্মীরা তাঁকে সাহায্য করেননি। কেন পুলিশ তাঁকে সাহায্য করল না, রফিক তা জিজ্ঞাসা করায় ওই পুলিশকর্মীরা তাঁকে মাটিতে ফেলে পেটান। শুধু তা-ই নয়, রফিকের মুখে পুলিশ প্রস্রাব করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ হামিদের। ঘটনার পরে রফিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর এক বোন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে কলেজে ভর্তি করান।
পুলিশের বক্তব্য, এমন ঘটনার কথা রফিক নিজে জানাতে পারেননি। শুক্রবার রাতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও তাঁর বাবার সামনে ঘটনার কথা জানতে চান পুলিশকর্তারা। পুলিশের দাবি, রফিক জানান, বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করেনি।
কিন্তু রফিকের বাবা আব্দুল হামিদের বক্তব্য, তাঁর ছেলে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন। ফলে পুলিশি নিগ্রহের ঘটনা তাঁর মনে না-ও থাকতে পারে। হামিদের দাবি, “অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের সামনে নিয়ে এলে রফিক তাঁদের চিনতে পারবে।” তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেশী মহম্মদ জাভেদ তাঁকে পুলিশি নিগ্রহের ঘটনার খবর দেন। তাঁর কাছ থেকেই পুরো বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। এ বিষয়ে অবশ্য মহম্মদ জাভেদের বক্তব্য, “আমি নিজে পুলিশকে মারতে দেখিনি।”
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, রফিকের দেহে মারধরের চিহ্ন দেখতে পাননি চিকিৎসকেরাও। অতিরিক্ত নেশা করার ফলেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে চিকিৎসকেরা জানান। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও শনিবার বলেন, “অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে এখনও পর্যন্ত পুলিশের মারধরের ঘটনার কোনও প্রমাণ মেলেনি।”
অভিযোগে অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও থানার ওই তিন পুলিশকর্মীকে সরিয়ে বিভাগীয় ডিসি-র অফিসে বহাল করা হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, তা হলে কি অভিযোগ পরোক্ষে মানছেন পুলিশকর্তারা? এমনটা মেনে নিতে নারাজ লালবাজার। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই ওই পুলিশকর্মীদের সরানো হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের দাবি, তদন্তে নেমে অভিযোগের পক্ষে এখনও প্রমাণ মেলেনি। অভিযোগকারী বা পুলিশ, কোনও পক্ষই প্রত্যক্ষদর্শীদের খুঁজে পায়নি। তবে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে লালবাজারের কর্তারা জেনেছেন, ওই দিন রফিকের সঙ্গে কয়েক জন যুবকের মারামারি হচ্ছিল। সে সময়ে ওই তিন পুলিশকর্মী হাজির হন। পুলিশ দেখে অন্য যুবকেরা পালালেও রফিক ধরা পড়ে যান। পুলিশের বক্তব্য, মত্ত অবস্থায় থাকা রফিক পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। তা দেখে স্থানীয় কিছু যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশকর্মীদের দিকে তেড়ে আসে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, স্থানীয় যুবকদের তেড়ে আসতে দেখেই পুলিশকর্মীরা এলাকা ছেড়ে চলে যান। ওই কর্তার কথায়, “পুলিশকর্মীরা এলাকা ছেড়ে না পালালে হয়তো এমন অভিযোগ উঠত না।” ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গুলজার জিয়া। এ দিন অবশ্য তিনি বলেন, “ওই রাতে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার কথা শুনে আমি যা বলার বলেছিলাম। এখন চাই, পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।” |