নাম ভাঁড়িয়ে জেলে অভিযুক্তের কাছে নিগৃহীতা |
ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত বন্দির সঙ্গে দেখা করতে নাম ভাঁড়িয়ে জেলে ঢুকেছিলেন খোদ অভিযোগকারী। কিন্তু ধরা পড়ে গেলেন। শনিবার বিকেলে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এই ঘটনায় ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটির সূত্রপাত মাস পাঁচেক আগে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর রাজীব চক্রবর্তী। চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। এখন আলিপুর জেলে বিচারাধীন বন্দি অবস্থায় রয়েছেন রাজীব। পুলিশ জানায়, এ দিন বিকেলে সেখানেই অভিযোগকারী মহিলা ভুয়ো নাম-পরিচয় ব্যবহার করে রাজীবের সঙ্গে দেখা করতে যান।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিজের পরিচয় গোপন করে নিউ আলিপুরের বাসিন্দা লতা জগওয়ানি নামে এক মহিলার নামে ভুয়ো পাসপোর্টের প্রতিলিপি নিয়ে জেলে ঢুকেছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু বিষয়টি জানতে পারেন জেল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাচক্রে, জেলে তখন হাজির রাজীবের স্ত্রী-ও। জেল কর্তৃপক্ষ ও রাজীবের স্ত্রী-র অভিযোগের ভিত্তিতেই আলিপুর থানা ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরার পরে পুলিশের দাবি, এর আগেও তিনি ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রাজীবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
অভিযোগকারীর আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদারের অবশ্য বক্তব্য, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, রাজীবই ফোন করে অভিযোগকারীকে ফের বিয়ের আশ্বাস দিয়ে জেলে ডেকেছিলেন। তিনিই নাম ভাঁড়িয়ে জেলে আসার পরামর্শ দেন। প্রশান্তবাবুর কথায়, “আমার মক্কেল বুঝতে পারেননি, জেলে ওঁর জন্য রাজীব কী ফাঁদ পেতেছে!”
কিন্তু জেলে বসে রাজীব কী ভাবে ওই মহিলার (অভিযোগকারী) সঙ্গে যোগাযোগ করলেন?
প্রশান্তবাবু জানান, মাস দুয়েক ধরেই রাজীব জেল থেকে ওই মহিলাকে ফোন করতেন। এ ব্যাপারে যাদবপুর থানায় অভিযোগও জানিয়েছিলেন ওই মহিলা। পুলিশের একাংশ বলছে, রাজীবের প্রতি কিছুটা দুর্বলতাবশতই মহিলা শেষ পর্যন্ত তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে জেলে দেখা করতে আসেন। বছরখানেক আগে রাজীব পাটুলি থানায় কর্মরত থাকাকালীন একটি বধূ নির্যাতনের মামলায় অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়েছিলেন সেই মহিলা। পুলিশ সূত্রের খবর, ক্রমশ রাজীবের সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। রাজীবও তখন নিজের বিয়ের খবর গোপন করে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। এর পরে রাজীব মেটিয়াবুরুজ থানার অফিসার থাকাকালীন ওই মহিলা পাটুলি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন বিকেলে আলিপুর জেলে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের সাক্ষাতের মধ্যে অবশ্য জেলের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটি দিকও উঠে আসছে। লালবাজারের কর্তারা বলছেন, জেলের ভিতরে নানা নজরদারি সত্ত্বেও যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার আটকানো যায়নি, এই ঘটনা ফের তা প্রমাণ করে দিল। রাজীবের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, শুধু মোবাইল ফোনে কথা-ই নয়, রাজীব জেলে বসেই দিব্যি ফেসবুক ব্যবহার করেন। আইজি (কারা) রণবীর কুমার অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানা থাকলে তো যে কেউ তাতে লিখতে পারেন। আমি নিশ্চিত রাজীব নিজে ফেসবুক করছেন না।”
ঘটনাচক্রে, অভিযোগকারীকে নিয়ে জলঘোলার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাজীবের ফেসবুকে লেখা হয়েছে, “চুপ করা থাকা মানেই পরাজয় নয়। এটা ঝড়ের আগের নৈঃশব্দ্যও হতে পারে!” এই লেখার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অভিযোগকারীর ধরা পড়ার ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কোনও কোনও পুলিশকর্তা। |