যাঁরা ফেরেননি ৩
ব্যাগ মিলেছে, খোঁজ নেই দুই পরিবারের কারও
কাশের অবস্থা ভাল নয়। তাই সকাল-সকাল ডুলিতে চেপে কেদার থেকে নীচে নামতে শুরু করেছিলেন মনোজ বর্মা ও পবন জোহরি। সঙ্গে তাঁদের পরিবার, সব মিলিয়ে ছ’জন। কিন্তু নামতে নামতেই কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছেন সবাই। ছবি নিয়ে হৃষীকেশের রেল স্টেশন থেকে হরিদ্বারের বাস স্ট্যান্ড, কাছাকাছি নানা গ্রাম-শহর চষে ফেলেছেন স্বজনরা। এক জনেরও খোঁজ মেলেনি কলকাতা থেকে ৮ জুন উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন লেকটাউন বি ব্লকের বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী মনোজ বর্মা, তাঁর স্ত্রী, কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে দীপক ও পূজা। কলকাতা থেকে প্রথমে দিল্লিতে জামাইবাবু পবন জোহরির বাড়িতে যান তাঁরা। সেখান থেকে সস্ত্রীক পবনবাবুকে নিয়ে গঢ়বাল।
মনোজবাবুর ভাই প্রকাশ বর্মা জানান, ৯ তারিখ দিল্লি থেকে সপরিবার একটি ছোট বাস ভাড়া করে উত্তরাখণ্ড রওনা দেন তাঁরা। গন্তব্য ছিল চার ধাম। গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী দর্শন সেরে গুপ্তকাশীতে গঢ়বাল পর্যটন নিগমের অতিথিশালায় উঠেছিলেন মনোজ-পবনবাবুরা। সেখান থেকে ১৫ জুন কেদারনাথে পৌঁছন মনোজ-পবনেরা। ঠিক ছিল, সেখানেই ফের নেমে এসে বদ্রীনাথের উদ্দেশে রওনা দেবেন তাঁরা।
১৫ জুন রাত থেকেই বিরামহীন বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। তার মধ্যেই চেনা পুরোহিতের সঙ্গে মন্দিরে গিয়ে মাঝরাতে পুজো দিয়েছিলেন সকলে। তার পরে ওই পুরোহিতের ধর্মশালাতেই রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে কেদার ছেড়ে বেরোনোর তোড়জোড় শুরু করেন।
বর্মা ও জোহরি পরিবার। আজ খোঁজ নেই কারও।
প্রকাশবাবু বলেন, “১৬ জুন সকাল পৌনে দশটা নাগাদ দাদা যখন কেদারে, তাঁর সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল। বললেন, রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। গৌরীকুণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছি।” তার পর থেকেই ফোন বন্ধ।
ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক বেড়ে যায় টিভি-র খবরে বিধ্বংসী বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে কেদারনাথে। আর দেরি করেননি মনোজ-পবনের আত্মীয়েরা। পবন জোহরির ভগ্নিপতি কলকাতার যোধপুর পার্কের বাসিন্দা রঞ্জিত সিংহ বলেন, “ওঁদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে প্রকাশ ও চন্দ্রশেখর উত্তরাখণ্ড রওনা হন। হরিদ্বার থেকে দেহরাদূন, গুপ্তকাশী থেকে হৃষিকেশ পরিজনদের ছবি হাতে চষে ফেলেও কোনও সন্ধান মেলেনি।”
গুপ্তকাশীর জিএমভিএন-এর অতিথিশালায় গিয়ে পরিজনদের ব্যাগপত্র খুঁজে পান চন্দ্রশেখর। এখানে সে সব রেখে কেদারে গিয়েছিলেন বর্মা-জোহরিরা। তা নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে হরিদ্বারে। পরিবারের খোঁজে কখনও হৃষীকেশের বাস স্ট্যান্ড, কখনও হরিদ্বার রেল স্টেশনে বসে থেকেছেন। দশ-বারো দিন টানা খোঁজ করেও কারও সন্ধান মেলেনি।
গুপ্তকাশী গিয়ে মনোজবাবুর পুরোহিতের সঙ্গেও কথা বলেছেন প্রকাশ-চন্দ্রশেখরেরা। পুরোহিত জানিয়েছেন, ১৬ জুন বেলা এগারোটা নাগাদ তিনি-ই ডুলিতে তুলে দিয়েছিলেন ছ’জনকে। তার পর কী ঘটেছে, তাঁর জানা নেই। ওই পুরোহিত নিজেও আটকে পড়েছিলেন তছনছ হয়ে যাওয়া কেদারে। পরে সেনাবাহিনী তাঁকে উদ্ধার করে এনেছে।
কেদার থেকে ফেরা তীর্থযাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন প্রকাশরা।
তাঁর কথায়, “দাদাদের ছবি দেখে অনেকেই চিনতে পেরেছেন। কিন্তু তাঁরা ফিরেছেন কি না, কেউ বলতে পারেননি।”
এখনও আশায় বুক বেঁধে পরিজনেরা। যদি ফিরে আসেন। ছ’জনেই এক সঙ্গে নিশ্চয়ই হারিয়ে যাবেন না।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.