পেনশন প্রকল্পে টাকা জমানোর সময়ে সেই লগ্নিতে করছাড় পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু সেই জমে ওঠা তহবিল থেকে মাসে মাসে যে-পেনশন মেলে, করছাড়ের সুবিধা তাতে নেই। পেনশন প্রকল্পকে জনপ্রিয় করতে এ বার তাতেও করছাড়ের জন্য অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কাছে আর্জি জানাল একাধিক জীবনবিমা সংস্থা।
একই সঙ্গে বিমা শিল্পের অভিযোগ, বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ-র নির্দেশ অনুসারে পেনশন প্রকল্পের টাকা শেয়ার বাজারে ঢালার সুযোগ খুবই কম। তাদের দাবি, সেই কারণে তাতে আকর্ষণীয় রিটার্ন দেওয়াও শক্ত। তাই এই প্রকল্প এখনও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি কমবয়সী লগ্নিকারীদের মধ্যে। পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে পেনশন প্রকল্পের টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পথ মসৃণ করা উচিত বলেই তাদের দাবি। বিষয়টি ভেবে দেখতে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদনও জানিয়েছে তারা।
এ প্রসঙ্গে রিলায়্যান্স লাইফ ইনশিওরেন্সের সিইও অনুপ রাউ বলেন, “পেনশন প্রকল্পের টাকা বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ খুবই কম। ফলে সেখানে জমানো টাকা বাড়ে অত্যন্ত ধীর গতিতে। তাই তুলনায় অল্পবয়সী লগ্নিকারীদের মধ্যে এই প্রকল্প কেনার আগ্রহ কম। যে কারণে এর বাজারও সেভাবে বাড়ছে না।”
জীবনবিমা শিল্পের অনেকেই এ বিষয়ে অনুপবাবুর সঙ্গে একমত। তবে শেয়ার বাজারে টাকা ঢালতে না-পারার এই প্রসঙ্গ ছাড়াও সমস্যা হিসেবে তাঁরা তুলে ধরছেন করছাড়ের সুবিধা না-থাকার কথা।
এমনিতে কোনও পেনশন প্রকল্পে টাকা রেখে সেখান থেকে মাসে মাসে পেনশন পাওয়ার ধাপ দু’টি প্রথমে দীর্ঘ মেয়াদে একটি পেনশন প্রকল্পে টাকা জমাতে হবে লগ্নিকারীকে।
তার পর এ ভাবে টাকা জমিয়ে যে-তহবিল গড়ে উঠবে, তা দিয়ে কিনতে হবে একটি অ্যান্যুইটি প্রকল্প। যা থেকে মাসে মাসে পেনশনের টাকা হাতে পাবেন তিনি।
এখন পেনশন প্রকল্পে টাকা রাখার সময়ে ৮০সিসিসি ধারায় করছাড় মেলে। কিন্তু তার পর মাসে মাসে পেনশন বাবদ যে-টাকা হাতে আসে, তা আর করমুক্ত থাকে না। এ বার সেই টাকায় করছাড়ের জন্যই অর্থমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছে বিমা শিল্প।
অনুপবাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, পেনশন প্রকল্পের বাজার বাড়াতে এজেন্ট নির্ভর বিপণন মডেলেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা। কারণ তাঁর মতে, মানুষের দরজায় গিয়ে প্রকল্পের উপযোগিতা বোঝাতে এজেন্টরাই সেরা বাজি।
রিলায়্যান্স লাইফের কর্তার মতে, “ভারতের মতো দেশে পেনশন প্রকল্পকে জনপ্রিয় করে তোলা একান্ত জরুরি। এই সংক্রান্ত নীতি ঢেলে সাজা হলে এ দেশে পেনশনের বাজার ছাপিয়ে যেতে পারে জীবনবিমাকেও।” আর এই কারণেই চলতি আর্থিক বছরে নতুন প্রকল্প ছাড়ার ক্ষেত্রে পেনশন ও স্বাস্থ্যবিমার ওপরেই বেশি জোর দেবে তাঁর সংস্থা। সম্প্রতি একটি পেনশন এবং আর একটি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প বাজারে ছেড়েওছে রিলায়্যান্স লাইফ। অনুপবাবুর দাবি, ‘স্মার্ট পেনশন প্ল্যান’ নামে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কম বয়সে পেনশন প্রকল্পে লগ্নির বিষয়টিকে উত্সাহ দেওয়া হবে। চলতি অর্থবর্ষে দেশের প্রথম পাঁচটি বেসরকারি জীবনবিমা সংস্থার মধ্যে জায়গা করে নেওয়াই আপাতত সংস্থার প্রথম লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। |