আট বছরের বালকের ভাঙা হাতের চিকিৎসা করেছিলেন অস্থি বিশেষজ্ঞ। পরে দেখা যায়, হাড় জোড়েনি। ভেল্লোরের এক হাসপাতালে ফের অস্ত্রোপচার করে হাড় জোড়া দিতে হয়।
প্রথমে যিনি অস্ত্রোপচার করেন, সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করে হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন বালকের মা। আদালত চিকিৎসককে ৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গত ৫ জুলাই রায় ঘোষণার দিন থেকে এক মাসের মধ্যে তা মিটিয়ে দিতে হবে।
যাঁর বিরুদ্ধে এই রায়, সেই জগন্নাথ ভট্টাচার্য শুধু অস্থি বিশেষজ্ঞ নন। গত বার হাওড়ার শিবপুরে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়কও ছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “আমি ছেলেটির অস্ত্রোপচার করিনি। শুধু প্লাস্টার করেছিলাম। প্লাস্টার কাটার পরে যা করতে বলেছিলাম, তা ওঁরা করেননি। তার ফলেই বিপত্তি হয়েছে।”
ক্ষতিগ্রস্ত বালকটির নাম অভ্রজিৎ হাজরা। তার বাড়ি হাওড়ারই ব্যাঁটরা থানার ফকিরচাঁদ ঘোষ লেনে। কোনও আইনজীবী ছাড়াই মামলাটি লড়েছিলেন বালকের মা অতসী হাজরা। মামলার আর্জিতে তিনি জানান, ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাইকেল থেকে পড়ে কনুইয়ের হাড় ভাঙে তাঁর ছেলে, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তাঁর ছেলে অভ্রজিতের। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে জগন্নাথবাবুর তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তিনি অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু ৭ ফেব্রুয়ারি প্লাস্টার খোলা হলে দেখা যায়, ভাঙা জায়গাটি উঁচু হয়ে রয়েছে। কিন্তু জগন্নাথবাবু দাবি করেন, ওটা কোনও সমস্যা নয়। হাড় জোড়া লেগে গিয়েছে। ফিজিওথেরাপি করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
অতসীদেবীর অভিযোগ, এর পরেও ছেলের হাতে যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। কিন্তু জগন্নাথবাবু সে কথা শোনেননি। বাধ্য হয়ে তিনি অস্থি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। এসএসকেএম এবং শিশুমঙ্গল হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শও নেন। সকলেই জানান, হাড় জোড়েনি। শেষমেশ ছেলেকে ভেল্লোরের নিয়ে যান তিনি। আদালতের রায় ঘোষণার পরে অতসীদেবী বলেন, “জগন্নাথবাবু বলতে পারতেন, ফের ছেলের হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। আমরা তাঁর কথা শুনতাম। তাঁরই ভুলে আমাদের ১০ বার ভেল্লোরে যেতে হয়েছে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে আমরা চরম অর্থকষ্টে পড়েছি।”
ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলার শুনানিতে হাজির হয়ে জগন্নাথবাবুর আইনজীবী দাবি করেছিলেন, চিকিৎসায় গাফিলতি হয়নি। সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে বিচারক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ও আদালতের দুই সদস্য ঝুমকি সাহা ও প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছেন।
|