গায়ে ধুলোবালি মেখে, মাটি-কাদায় লুটোপুটি খেয়ে খেলাধুলো করার চল এখন প্রায় উঠেই গিয়েছে।
শিশুদের রোজকার খেলা বলতে কম্পিউটারে ভিডিও গেমস বা অনলাইন গেমস। এই খেলায় উত্তেজনা-শিহরণ থাকলেও পরিশ্রম নেই।
এরই সঙ্গে রয়েছে নানা ধরণের প্রসেসড ফুড, নরম পানীয়, চিপস, চকোলেট, কেক-পেস্ট্রি-পিৎজার আকর্ষণ। ফলে অল্প বয়সেই বাড়ছে নানা ধরনের রোগের সম্ভাবনা। কমবয়সী ছেলেমেয়েরাও শিকার হচ্ছে ‘টাইপ ২’ বা বড়দের ডায়াবেটিসের।
সাধারণ ভাবে শিশুদের ‘টাইপ ১’ ডায়াবেটিস হয়। যার চিকিৎসা মূলত ইনসুলিন-নির্ভর। আর বড়দের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের পাশাপাশি নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া আর ব্যায়াম করা জরুরি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইনসুলিনও দরকার হয়।
শিশুদের ‘টাইপ ২’ ডায়াবেটিসে কিডনি, হার্ট, রেটিনা এবং নার্ভের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা মধ্যবয়সী মানুষের সমান নয়। আরও বড় সমস্যা হল, শিশুদেরও যে ডায়াবেটিস হতে পারে, সে কথা আমরা মাথাতেই রাখি না। ফলে বেশি খিদে, ঘন ঘন বাথরুম পাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোকে সাধারণ ব্যাপার বলে ধরে নিই।
তিন দশক আগেও ডায়াবেটিস কিন্তু দেখা যেত ৪০-৪৫ বছর বয়স বা তারও পরে। এখন ১৭ থেকে ২৯, সবাই এর শিকার। বছর আঠেরোর ঋজু, চব্বিশের ঐন্দ্রিলা বা উনিশের অর্ক যেমন। আঁতকে উঠবেন না। এ বছর এপ্রিলে হঠাৎ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে ক্লাস এইটের নাদুসনুদুস রূপমের। বয়স মোটে ১৩। ১১২ কোটির দেশে এ রকম ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ এখন ৫.২ কোটি। ২০০৭-এ সংখ্যাটা ছিল চার কোটি। এ ভাবে চলতে থাকলে ১২ বছর বাদে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে অন্তত ৭ কোটিতে।
ডাক্তারি অভিধানেও ‘জেন ওয়াই ডায়াবেটিস’ বলে একটা নতুন কথা যোগ হয়েছে। কম বয়সের ‘টাইপ ১’ ডায়াবেটিস নয়, অল্প বয়সেই বড়দের ডায়াবেটিস অর্থাৎ ‘টাইপ ২’। যুক্তরাষ্ট্রের ১১ থেকে ১৯ বছরের নব্বই ভাগ ছেলেমেয়ে স্থূলত্বের শিকার। এ দেশে একশোয় ২০ থেকে ৩০ জন। ১৭ থেকে ১৯ বছরের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি ওজন ভারতে ও আমেরিকায়, যথাক্রমে ৭৫ ও ৯০ শতাংশের। ভারত এখন সারা দুনিয়ায় ‘ডায়াবেটিসের রাজধানী!’
কিন্তু বর্তমান জীবনযাপন পদ্ধতিতে যে ভাবে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে শিশু শরীররের পক্ষে সামলানো মুশকিল। সনাতন খাদ্যাভ্যাস ছেড়ে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার বা ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ার ফলে মেদ জমে শরীরে। পাল্লা দিয়ে কমেছে পরিশ্রম। ভ্যান বা পুলকারে স্কুলে যাওয়া-আসা, বারো মাসে তেরো পরীক্ষা। ছেলেমেয়েরা জেরবার টেনশনে। বাবা-মাও। ভবিষ্যত সুন্দর করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শরীরের যত্ন নেওয়া হয় না।
তাই সক্রিয় হওয়া জরুরি। নিয়ম করে শরীরটাকে খাটানো আর সুষম খাবারদাবার খাওয়া, যে কোনও বয়সের ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সুরক্ষা বর্ম বলতে এটাই।
|
প্রতিরোধের উপায় |
• বাচ্চাদের নিয়মিত খেলতে দিন।
• রোজ হাঁটা অভ্যেস রাখুন।
• ভাত, ডাল, সব্জি, ডিম, মাছ, স্যালাডে অভ্যস্ত হোন।
• প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বা নরম পানীয় রোজ নয়, মাঝে-মধ্যে এক-আধ দিন।
• পরিশ্রম অনুযায়ী খাওয়া।
• কম বয়সে মদ খাবার অভ্যাস থেকে সাবধান।
• বাবা-মাকে দেখে ছেলেমেয়েরা শেখে, মাথায় রাখুন।
• গল্প করুন, বই পড়ান, এড়িয়ে চলুন টেনশন। |
|