কলেজ ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরিজনেরা আগেই শোক পেয়েছিলেন। সেই শোক আরও বাড়িয়ে দিল সদর হাসপাতালেই মৃত ছাত্রীর চোখ খুবলে নেওয়ার ঘটনা।
মৃত ছাত্রীর নাম পরি গঁরাই (২১)। পুরুলিয়া মফস্সল থানার জয়নগর গ্রামে তাঁর বাড়ি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পিছনের একটি ঘরে তাঁর দেহ রাখা ছিল। শুক্রবার মর্গে নিয়ে যাওয়ার আগে পরিজনেরা দেখেন মৃতের ডান চোখ খুবলে নেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে হাসপাতালে হুলস্থুল পড়ে যায়। পরির আত্মীয়েরা ময়নাতদন্তের আগে ঘটনার তদন্তের দাবি তোলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগও জানান। পরে হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “মৃতদেহ রাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মর্গে ছিল না। রাখা হয়েছিল হাসপাতালের একটি ঘরে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ইঁদুরে মৃতের চোখ খুবলেছে। কেন এমন ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিকে ওই তরুণীকে বিষ খাইয়ে খুন করার অভিযোগে পুলিশ স্থানীয় একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালিক এক যুবককে গ্রেফতার করে।
পরিবার সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার নিস্তারিণী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পরির বিয়ে ঠিক হয়েছিল আগামী অগ্রহায়ণ মাসে। তাঁর মা ঝর্ণা গঁরাইয়ের দাবি, “বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়ে বাড়ির কাছে একটি কম্পিউটার সেন্টারে গিয়েছিল। মাঝে মধ্যেই ও সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে যেত। কিছুক্ষণ পরে মেয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফিরে জানায়, ওই সেন্টারের মালিক প্রিয়ব্রত মিশ্র তাকে বিষ খাইয়েছে।” বাড়ির লোকেরা তাঁকে প্রথমে জয়নগর প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক অমানবিক ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। এরপরে দেহটি জরুরি বিভাগের কাছে মৃতদেহ রাখার একটি ঘরে রাখা হয়। |
এ দিন সকালে দেহটি দেখে বাইরে বেরিয়ে মৃতের কাকা শ্রীনন্দ গঁরাই বলেন, “ভাইঝির ডান চোখটা গেল কোথায়? মনে হচ্ছে কেউ খুবলে নিয়েছে। কী করে এই কাণ্ড ঘটল তা তদন্ত করে দেখতে হবে।” পড়শি গোপাল পাঠক, সুশান্ত গঁরাইদের বক্তব্য, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই ওই কাণ্ড হয়েছে।” ঘটনার তদন্তের দাবি তোলেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা কংগ্রেস নেতা সন্দীপ গোস্বামী তদন্তের দাবিতে পুলিশের কাছে যান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদন্তের আশ্বাসে দেহটির ময়নাতদন্ত হয়। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “এই মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”
প্রিয়ব্রত মিশ্র নামের ওই যুবক অবশ্য বৃহস্পতিবার পরির পরিবারের সঙ্গে পুরুলিয়া হাসপাতালে এসেছিলেন। রাতে পুলিশ তাঁকে প্রথমে আটক করে। অভিযোগ পেয়ে পরে তাঁকে গ্রেফতার করে। এ দিন তাঁকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন। তবে পুলিশের কাছে ওই যুবক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। |