জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা নিয়ে প্রতিরোধ ছিলই। এ বার সঙ্গে যুক্ত হল ন্যায্য মূল্যের দোকানের ওষুধ ও সরঞ্জামের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা। অভিযোগ, এই ধরনের প্রশ্ন তুলে এক শ্রেণির চিকিৎসক এই উদ্যোগকে পিছু টেনে ধরার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য স্বীকার করেছেন, ওষুধ মজুত রাখার প্রক্রিয়া যাচাই করার ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা তাঁরা গড়ে তুলতে পারেননি। পাশাপাশি তাঁরা এও জানিয়েছেন যে, মান নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দফতরে জমা পড়েনি। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, মান বা মজুতের প্রক্রিয়ায় যদি সমস্যা থাকত, তা হলে গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ ওষুধ বিক্রির পরে রোগীদের উপরে তার ক্ষতিকর প্রভাবের খবরও পৌঁছত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে তৈরি হয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। কিন্তু গোড়া থেকেই সেই দোকান নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কখনও দোকানে ওষুধ মজুত থাকছে না, কখনও আবার মজুত না থাকা ওষুধ বাইরের দোকানে কিনতে গেলে তারা তা দেবে না বলে জানিয়ে দিচ্ছে। কখনও আবার খোদ চিকিৎসকই রোগীকে ন্যায্য মূল্যের দোকানে না গিয়ে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দোকান এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ হয়নি। ওষুধের দোকানগুলির সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশও কার্যত বিফলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি চিকিৎসকদের একটি অংশ এ ভাবে ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তা রোগীদের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। |
কী বলছেন সরকারি চিকিৎসকেরা? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসকদের একটি অংশের বক্তব্য, সর্বোচ্চ প্রায় ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। কিন্তু সেই ওষুধের মান কেমন, আদতে তাতে রোগীর রোগ সারবে কি না, যে ভাবে ওষুধ সংরক্ষিত থাকে, তা যথাযথ কি না সে সব নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা। স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে তাঁদের আর্জি, ওই সব দোকানের ওষুধের মান এবং তা মজুত রাখার পদ্ধতি যাচাই করে দেখা হোক। তা না হলে আদতে সমস্যায় পড়বেন রোগীরা এবং তার দায় বর্তাবে চিকিৎসকদের উপরেই। স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত ভাবে নিজেদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য মনে করছেন, এ সবই জেনেরিক নামে ওষুধ না লেখার ছল। তাই আপাতত এই আর্জিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাঁরা।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র শিখা অধিকারী বলেন, ‘‘ওষুধের মানের সঙ্গে কোনও আপোস হচ্ছে না। সরকারি তরফে নজরদারি কমিটির ব্যবস্থা রয়েছে। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হওয়ায় গরিব রোগীদের চিকিৎসার খরচ এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে। কোনও ভাবেই এই উদ্যোগকে আমরা বিফলে যেতে দেব না।”
এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, “বড় অস্ত্রোপচারের পরে কিংবা অত্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসক সেরা ওষুধটিই দেওয়ার চেষ্টা করেন। রোগীর পরিবারও তখন টাকার তোয়াক্কা না করে সঠিক মানের জিনিসটি চান। সরকার এ ভাবে জেনেরিক নামে ওষুধ লিখে ন্যায্য মূল্যের দোকানে পাঠাতে বাধ্য করলে আমরা সেটাই করব। কিন্তু তার পরে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে দায় কার?” সরকারের এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের মেডিকো-লিগ্যাল সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে তাঁর আশঙ্কা।
একই বক্তব্য মেডিক্যালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের এক চিকিৎসকের। তিনি বলেন, “ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কেনা অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করেনি। তাই বাধ্য হয়েই রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বলেছিলাম। সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মানতে গেলে রোগীর জীবন বাঁচানো কঠিন হবে।” ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন যে তাপমাত্রায় যে ভাবে সংরক্ষিত রাখা উচিত, ন্যায্য মূল্যের দোকানে তা হয় না বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, চিকিৎসকদের একাংশের এই মনোভাব রোগীদের আস্থাকে অনেকটাই ধাক্কা দেবে। পাশাপাশি তাঁরা অবশ্য স্বীকার করেছেন, ওষুধ মজুত রাখার প্রক্রিয়া যাচাই করার ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়াটাও জরুরি।
|