বিভিন্ন ওষুধ সংস্থার সঙ্গে এক শ্রেণির চিকিৎসকের ‘অশুভ আঁতাত’ আটকাতে সরকারি চিকিৎসকদের আউটডোর টিকিট ও ইন্ডোর মেডিক্যাল স্লিপে ওষুধের ‘জেনেরিক নাম’ লেখা বাধ্যতামূলক করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু, নজরদারির অভাবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ওষুধের ‘ব্র্যান্ড’, এমনকী ওষুধ সংস্থার নামও যথেচ্ছ লেখার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মেনে নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও।
সম্প্রতি মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’-এর মর্যাদাপ্রাপ্ত ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র আউটডোর টিকিটে কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওষুধের ব্র্যান্ড ও সংস্থার নাম লেখার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সেই টিকিটের প্রতিলিপি পেয়েও এখনও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকেই অভিযোগ আসছে। ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ শুরু না করলে এই প্রবণতা আটকানো যাবে না।
গত ৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আউটডোর টিকিট ও ইন্ডোর মেডিসিন স্লিপে ওষুধের ব্র্যান্ড বা সংস্থার নাম লিখতে পারবেন না। শুধু জেনেরিক নামই লিখতে হবে।
এর পরে মে মাসের ৩ তারিখ ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’ কর্তৃপক্ষ তাঁদের চিকিৎসকদের নোটিস দিয়ে জানান কিছু চিকিৎসক অকারণে খুব দামি কিছু ওষুধের নাম আউটডোর টিকিটে লিখছেন ও দুঃস্থ রোগীকে তা কিনতে বাধ্য করছেন। এটি সরকারি নির্দেশ-বিরোধী। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের এর থেকে বিরত করতে আমরা প্রেসক্রিপশন অডিট শুরু করতে চাইছি। কী ভাবে তা করা যায়, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ চাইছি। এমনকী, আউটডোরের সময়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের চিকিৎসকদের কাছে যাওয়াও বন্ধ করেন কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এর পরেই ওই হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক স্বাস্থ্যভবনে লিখিত অভিযোগে জানান, হাসপাতালে অধিকাংশ ওষুধ মিলছে না বলেই রোগীদের বাইরের ওষুধ কিনতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে ওষুধের তালিকা পাঠিয়ে পাল্টা জানান, অভিযোগ মিথ্যা। সব ওষুধ আছে। স্বাস্থ্যভবনে জমা পড়া একাধিক আউটডোর টিকিট পরীক্ষা করে সব চেয়ে বেশি করে উঠে এসেছে প্রদীপকুমার সাহা নামে এক চিকিৎসকের নাম। প্রদীপবাবু এ কথা কবুল করে বলেন, “যে ওষুধ হাসপাতালে থাকে না বা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স সরবরাহ করে না, সেগুলির নাম লিখেছি।” কিন্তু সরকারের নিষেধ সত্ত্বেও কেন ওষুধের ব্র্যান্ড ও সংস্থার নাম লিখেছেন? তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দেওয়া মাত্র আমরা জানতে পারি না। জানতে কয়েক দিন সময় লাগে। তত দিন লিখেছি।” তবে দেখা গিয়েছে, প্রদীপবাবু গোটা মে মাস, এমনকী জুনেও আউটডোর টিকিটে ওষুধের ব্র্যান্ড বা সংস্থার নাম লিখেছেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “লিখেছি। হয়তো এটা সরকারি নিয়মের উল্লঙ্ঘন। কিন্তু জেনেরিক নামে ওষুধের দোকানগুলি এখনও সড়গড় হয়নি। বারবার রোগীদের ফেরত পাঠায়। তাই সংস্থার নাম লিখেছি।” তবে তদন্ত কমিটি এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “তদন্তে সময় লাগে। এমন অভিযোগ বহু জায়গা থেকেই আসছে। এই বিশাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রেসক্রিপশন অডিট না-হলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই কঠিন। তা কবে শুরু হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।” |