অসহ্য গরমের মধ্যে প্রায় ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত নাজেহাল হলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীরা। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জেরে সমস্যা দেখা দেয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাংশেও।
শনিবার রাত ৮টা নাগাদ আচমকা বিদ্যুৎ চলে যায় বর্ধমান মেডিক্যালে। খবর পেয়ে পৌঁছন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা। তাঁরা স্যুইচ-গিয়ার রুমের যান্ত্রিক গোলযোগ সারালে বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু রোগীরা কয়েক মিনিটের বেশি স্বস্তি পাননি। কেননা, তার পরে ফের বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে হাসপাতাল। ফের দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। রবিবার সকাল থেকে ফের মেরামতির কাজ শুরু হয়। দুপুর ১টা নাগাদ বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু টানা প্রায় ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের জরুরি কিছু পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি অপারেশন থিয়েটর (ওটি) অচল হয়ে পড়ে। পাম্প না চলায় জলকষ্ট দেখা দেয়।
হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে শনিবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন আউশগ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আসরাফুদ্দিন। তিনি বলেন, “সারা রাত বিদ্যুৎ না থাকায় আমার শ্বাসকষ্ট আরও বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি।” মহিলা বিভাগে ভর্তি কুড়মুনের বাসিন্দা ঈশিতা দত্তের কথায়, “পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু গরমের চোটে সারারাত ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাফেরা করতে হয়েছে।” বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীরা জানান, রাতে অনেকেই বারান্দায় কাটিয়েছেন। শিশু বিভাগে রাতভর কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘোরাফেরা করতে হয় রোগীর আত্মীয়দেরও। সকালে অনেক রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের জলের সন্ধানেও বেরোতে হয়। ১০টা নাগাদ জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার উদ্যোগে হাসপাতালে পৌঁছয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি ভ্রাম্যমাণ জলশোধন যন্ত্র। তা থেকে প্রায় ১০ হাজার জলের পাউচ বিতরণ করা হয়। বর্ধমান পুরসভার তরফেও জলের গাড়ি পাঠানো হয়। |
হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের সমস্যার সীমা ছিল না। তবে রবিবার বলে পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে।” তিনি জানান, এ দিন বহির্বিভাগ খোলা থাকে না। তা থাকলে কম্পিউটারের মাধ্যমে টিকিট দেওয়া সম্ভব হত না। ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ত। তবে তিনি জানান, জরুরি বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগের ওটি-তে জেনারেটর চালিয়ে কাজ হয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বর্ধমান ডি-সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার পবিত্র মাইতি বলেন, “হাসপাতালের স্যুইচ গিয়ার-রুমে কিছু যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছিল। তার জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছিল। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ওই গিয়ার-বক্স মেরামত করা হলেও কিছু ক্ষণ পরে ফের বিদ্যুৎ চলে যায়।”
কিছু দিন আগেও কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীরা জেরবার হয়েছিলেন এই হাসপাতালে। বারবার কেন এমন বিপত্তি, তা জানতে চাওয়া হলে সুপার বলেন, “বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা জানিয়েছেন, ফিডারে আস্তরণ জমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ থাকছে না। তাঁদের বলেছি, তিন-চার মাস অন্তর যেন এই আস্তরণ পরিষ্কারের কাজ করা হয়।” সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার পবিত্রবাবুও বলেন, “নানা ধরনের যান্ত্রির ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। কর্মীদের হাসপাতালের দিকে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে।” জেলাশাসক বলেন, “হাসপাতালের বিদ্যুতের লাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরও মেরামতিতে হাত লাগিয়েছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।”
বিদ্যুৎবাহী তারে ত্রুটি থাকায় শনিবার সকাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাংশেও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এমনিতেই পরিষেবা সংক্রান্ত নানা সমস্যায় জেরবার এই হাসপাতাল। তার উপরে বিদ্যুৎ না থাকায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বন্ধ সিটি স্ক্যানও। সংক্রমণ ধরা পড়ায় রবিবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রসূতি বিভাগের ওটি। আপাতত সার্জারি বিভাগে টেবিল বাড়িয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। হাসপাতালে স্যালাইনেরও অভাব দেখা দিয়েছে। সুপার যুগল করের আশ্বাস, “বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। ওটি ও স্যালাইনের সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে।” |