অনির্বাণ রায় • শিলিগুড়ি |
সকালের দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টির পরে মাঠ ভর্তি জল-কাদা। দুপুর থেকে শুরু হয়েছে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় কাদা মাঠে দাঁড়িয়ে মিড-ডে মিল খাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বৃষ্টির জল মিশছে ডালে-ভাতে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ কিন্তু ‘টিফিন’ সারছেন ঘরের মধ্যে!
বর্ষার সময়ে শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাল্মিকী বিদ্যাপীঠের এটাই পরিচিত দৃশ্য। মিড-ডে মিল রান্নার আলাদা ছাউনি থাকলেও খাওয়ার জন্য পৃথক ছাউনি নেই। সারা বছর খোলা মাঠে বসেই পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খেতে হয়। বর্ষার সময়ে জল-কাদার জন্য দাঁড়িয়ে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিষয়টি একাধিকবার জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। শুক্রবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুল ভবনের মাঝে মাঠের এককোণে যেখানে কাদা নেই সেখানে থালা নিয়ে গোল হয়ে বসে। বাকিরা মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে কাদায় দাঁড়িয়ে হাতে থালা নিয়ে অথবা স্কুল ভবনের কার্নিশে থালা রেখে মিড ডে মিল খাচ্ছে।
স্কুলের বারান্দা বা ক্লাসঘরেও তো খাওয়া যেতে পারে? |
এই প্রশ্নের উত্তর হল, বারান্দা-করিডর দিয়ে অজস্র বার চলাচলের পরে সেগুলিও নোংরা থাকে। বর্ষার সময়ে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে করিডরের মেঝেও। ক্লাস ঘরে খেলে সেখানটা নোংরা হতে পারে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র দাস বলেন, “স্কুলের মাঠের এক পাশে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে খাওয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটি না হওয়ায় মিড ডে মিল খেতে এক রকম দুর্ভোগই পোহাতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। বর্ষার সময় ছাড়াও অন্য সময়ে খোলা মাঠে ধুলোবালির মধ্যেই খেতে হয় ছাত্র ছাত্রীদের।”
যদিও স্কুলের এক শিক্ষিকা মনে করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই কোনও ঘরে পড়ুয়াদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। পরিচালন সমিতিও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অভিভাবকদের মধ্যেই। কয়েকজন অভিভাবক জানান, স্কুলে নানা সময়ে গোলমাল হলে তা মহিলা কমিশন, শিক্ষা দফতর পর্যন্ত পৌঁছেছে। অথচ পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের সমস্যা মেটাতে কেন কেউ উদ্যোগী হচ্ছেন না? কয়েকজন পড়ুয়া বলেন, “আমরা যে ভাবে খোলা আকাশের নীচে খাই, সে ভাবে মাস্টার মশাই-দিদিমনিরা খেতে পারবেন?”
এলাকার কাউন্সিলার পূরবী সেন বলেন, “একাধিকবার ছাত্র ছাত্রীদের খোলা আকাশের নীচে মিড ডে মিল খেতে দেখেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। পুরসভা-প্রশাসন-স্কুল কর্তৃপক্ষ সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।” পুরসভা এলাকার স্কুল হলে মিড ডে মিলের বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষই দেখভাল করেন। শিলিগুড়ি পুরসভার মিড ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র-ইন-কাউন্সিল রুমা নাথ বলেন, “গত মাসে পুর এলাকার সব কটি স্কুল নিয়ে বৈঠক করেছি। মিড ডে মিল খাওয়ার শেড না থাকার বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই শেড তৈরির অর্থ বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসন এবং সর্ব শিক্ষা মিশনকে জানানো হয়েছে।” জলপাইগুড়ি জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক অলক মহাপাত্র বলেন, “স্কুলের অতিরিক্ত ঘরেও ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। স্কুলের পরিকাঠানো নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হবে।” |