|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
বর্ণময় চলচ্চিত্র-ইতিহাসের উজ্জ্বল উদ্ধার |
আশিস পাঠক |
আ ডিরেক্টরি অব বেঙ্গলি সিনেমা, পরিমল রায়, কাজী অনির্বাণ। দ্য কালার্স অব আর্ট, ৪০০০.০০ |
সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ কেন অ-পূর্ব নতুন? উত্তরটা বহু বার বহু ভাবে বহু সমালোচক-পরিচালক দিয়েছেন। যদি সে সব পড়া-শোনা কথায় কেউ বিশ্বাস না করেন? যদি বাংলা সিনেমার বিবর্তনকে নিজে দেখে বুঝতে চান? পুরোপুরি আজ আর সেটা সম্ভব নয়। ১৯৩১-এ মুক্তি পাওয়া ‘জামাইষষ্ঠী’ থেকে আজ পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমার অর্ধেকও সংরক্ষিত হয়েছে কি না সন্দেহ। চূড়ান্ত অবহেলা, অব্যবস্থা আর উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে তাই বাংলা সিনেমা-ইতিহাসের অধিকাংশই আজ আর দৃশ্য নয়, পাঠ্য। |
|
বাংলা সিনেমার এই ডিরেক্টরিটি মূলত পঞ্জিমূলক সেই ইতিহাসকে এক অর্থে দৃশ্য করে তুলেছে। ১৯১৭-২০১১, নির্বাক যুগের শুরু থেকে বাংলা ছবির প্রায় শতবর্ষের ইতিহাসের তথ্য এখানে মুক্তির বছর অনুসারে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। রং, ফিল্ম ফরম্যাট, প্রযোজনা, কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা, ফোটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা, গীতিকার, সঙ্গীতপরিচালনা, অভিনয়, পরিবেশক এবং মুক্তি-সংক্রান্ত তথ্যই তৈরি করেছে এ বইয়ের মূল পাঠ্যবস্তু। এ কাজ এর আগেও একটি সংকলনে হয়েছিল। নন্দন থেকে প্রকাশিত সেই বেঙ্গলি ফিল্ম ডিরেক্টরি-তে ১৯৯৮ পর্যন্ত সিনেমার তথ্য এ ভাবেই সাজানো ছিল। এ বই তার পরবর্তী কাজটুকু করেছে। তবে, নন্দনের ডিরেক্টরিটি দায়সারা ভাবে, বন্ধনীমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। সহায়ক গ্রন্থ-পত্রিকার তালিকাতেও নয়, আখ্যাপত্রের একটি বাক্যে তার নামহীন উল্লেখ: ‘সিন্স আ ডিরেক্টরি অব দিস নেচার হ্যাজ নেভার বিন পাবলিশড বিফোর (এক্সেপ্ট বাই ‘নন্দন’) উই আর অ্যাওয়ার অব দ্য পসিবিলিটি অব হ্যাভিং কমিটেড সেভেরাল এরর্স।’ অথচ ওই ডিরেক্টরি অনুসরণের ছাপ এখানে স্পষ্ট। যেমন, একটি বছরের সিনেমাগুলিকে মুক্তি-তারিখ অনুযায়ী না সাজিয়ে বর্ণানুক্রমে সাজানো হয়েছে এখানেও। তারিখের অনুক্রমে সাজালে ভাল হত। বিশেষ করে, যেখানে নির্ঘণ্ট থেকে সহজেই নির্দিষ্ট সিনেমাটি খুঁজে নেওয়া সম্ভব।
তবু এ বই নতুন। আরও প্রায় চোদ্দো বছরের পঞ্জি পাওয়া যাচ্ছে বলে নয়, পাঠ্যের বাইরে বেরিয়ে অসংখ্য দুর্লভ দৃশ্য-উপাদান সংকলিত হয়েছে বলে। নন্দনের ডিরেক্টরিতে যৎসামান্য সাদা-কালো বিজ্ঞাপনের ছবি ছিল। এই নতুন ডিরেক্টরিতে পাতার পর পাতা রঙিন পোস্টার, বুকলেটের ছবি। সঙ্গে কোলে বিস্কুটে উত্তমকুমার, ব্রিলক্রিমে অশোককুমারের মতো বিশেষ কিছু মজাদার বিজ্ঞাপন। গবেষকদের কাছে অসাধারণ রেফারেন্স এই ডিরেক্টরি। আর যিনি শুধু পাতা উল্টে দেখবেন তাঁর সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে বাংলা সিনেমার বর্ণময় ইতিহাস।
|
|
মূলত সংকলকদ্বয়ের সংগ্রহ থেকে নির্মিত বইটি সেই ইতিহাসের বাঁকগুলিও স্পষ্ট করে তুলেছে। ১৯৫৫-র শুরু পাতাজোড়া ‘পথের পাঁচালী’র পোস্টার দিয়ে। তার পরে সে বছরের অন্যগুলি, যার অধিকাংশ আজ বিস্মৃত। কে জানত, ১৯৫৫-তেই ‘পথের শেষে’ নামে ছবি হয়েছে, যার মুখ্য ভূমিকায় ছবি বিশ্বাস ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়! মৃণাল সেনের প্রথম ছবি ‘রাত-ভোর’ও তো সে বছরই। তাঁর পরিচালনায় উত্তমকুমার-অভিনীত যে একমাত্র ছবিটিকে নিজের বলে স্বীকারই করতে চান না মৃণালবাবু।
বুকলেটগুলির সূত্রে গ্রাফিক শিল্পের ইতিহাসেরও অনবদ্য উপাদান হয়ে উঠতে পারত এ বই। সত্যজিতের পোস্টারগুলি বহুচর্চিত, কিন্তু ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ বা ‘জন্মান্তর’-এর বুদ্ধিদীপ্ত পোস্টারের শিল্পী কারা? খুঁজলে পাওয়া যেত।
তবে এমন দু’একটি পরিকল্পনার ত্রুটি ছাপিয়ে ব্যতিক্রমী শুধু নয়, ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিতব্য এ বই। সব হারিয়ে ফেলাটাই যে দেশের স্বভাব সেখানে এমন উজ্জ্বল উদ্ধার ব্যতিক্রমী বই কী! |
|
|
|
|
|