স্কুল তৈরির জন্য যাঁরা জমি দান করেছিলেন, তাঁরাই যাতায়াতের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় প্রাথমিক স্কুলে ঢুকতে পারছে না পড়ুয়ারা। শিক্ষকেরাও স্কুলে গিয়ে ফিরে আসছেন। মানবাজার থানার ধানাড়া অঞ্চলের শুকাপাতা প্রাথমিক স্কুলে সোমবার থেকে এই অচলাবস্থা চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামশিক্ষা কমিটির সঙ্গে কিছু বিষয়কে ঘিরে ওই স্কুলের জন্য জমিদাতাদের বিবাদ চলছে। তারই জেরে জমিদাতারা গত শনিবার বিকেলে স্কুলে ঢোকার মুখে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেন। ফলে, সোমবার থেকে পড়ুয়া এবং শিক্ষকেরা স্কুলে ঢুকতে পারেননি। শুকাপাতা স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন মিশ্র বলেন, “সোমবার স্কুলে গিয়ে দেখি, সামনে বেড়া দিয়ে যাতায়াতের পথ বন্ধ করা আছে। গ্রামশিক্ষা কমিটিকে বিষয়টি জানাই। তারাও বেড়া খোলাতে পারেননি।” গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি তথা এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বালকচন্দ্র সরেন বলেন, “গ্রামের বাসিন্দা রামেশ্বর বাস্কের পরিবার ওই জমি দান করেছিলেন। তবে, কেন ওই পরিবারের লোকেরা যাতায়াতের পথে বেড়া দিয়েছেন, আমাদের কাছে স্পষ্ট করেননি।”
এ দিকে, দুই পক্ষের বিবাদের জেরে সঙ্ঘাত বেধে যাওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই গ্রামের কিছু বাসিন্দা ঘটনার কথা মানবাজার থানায় জানান। শুক্রবার জমিদাতারা, গ্রামবাসীর একাংশ এবং স্কুলের দুই শিক্ষক থানায় হাজির হন। জমিদাতা রামেশ্বর বাস্কে, জলেশ্বর বাস্কেরা বলেন, “ওই স্কুলে প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন চলার পাশাপাশি ফি রবিবার অলচিকি লিপিতে পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। গ্রামেরই কয়েক জন যুবকের উদ্দ্যোগে বেসরকারিভাবে কয়েক বছর ধরে ওই পড়াশোনা চলছিল। কয়েক মাস আগে হঠাৎ স্কুল কর্তৃপক্ষ রবিবারের পড়াশোনার জন্য স্কুলের চাবি দিতে অস্বীকার করেন। ফলে, রবিবারের পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা বলেছিলাম স্কুল বন্ধ থাকার সময় যদি কেউ অলচিকি নিয়ে পড়তে চায়, তাহলে অসুবিধা কোথায়?” বাস্কে পরিবারের সদস্যদের আরও ক্ষোভ, জমিদাতা হলেও তাঁদের কাউকে গ্রামশিক্ষা কমিটিতে রাখা হয়নি। এরই প্রতিবাদে তাঁরা বেড়া দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকের অবশ্য বক্তব্য, “স্কুলের ঘর এ ভাবে ব্যবহার করার অনুমতি আমি দিতে পারি না। ক্লাসঘর ব্যবহার করতে হলে পরিচালন সমিতির মাধ্যমে স্কুল পরিদর্শকের কাছে আবেদন জানাতে হবে।” তিনি জানান, স্কুলে অচলাবস্থার কথা পরিদর্শকের অফিসে সোমবারই জানানো হয়েছিল। এ দিন পুলিশের উপস্থিতিতে অবশ্য ঠিক হয়েছে, জলেশ্বরবাবুরা ওই বেড়া তুলে দেবেন। ফি রবিবার স্কুলের ঘর ব্যবহার করার অনুমতি চেয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে তাঁরা আবেদনও জানাবেন। আবেদন করার কাজে গ্রামশিক্ষা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক তাঁদের সহযোগিতা করবেন। বেড়া অবিলম্বে না তুলে নিলে অবশ্য জমিদাতা পরিবারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ।
জেলা শিক্ষা দফতরের মানবাজার এক চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক ইরা সুবুদ্ধি বলেন, “এ রকম ঘটনার কথা আমার জানা ছিল না। তবে, ছুটি থেকে আমি সদস্য দায়িত্বে এসেছি। ওই স্কুল কেন বন্ধ, বিশদে খোঁজ নিয়ে খোলার ব্যবস্থা করছি।” |