শূন্যপ্রায় রাজকোষের ভাবনায় তাড়িত রাজা মন্ত্রণাসভা থেকে পালিয়ে এসেছেন কবির কাছে আর তাঁকে কবি সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘পূর্ণ থেকে রিক্ত, রিক্ত থেকে পূর্ণ’। শীতের কাঠিন্য কাটিয়ে ‘প্রকৃতির রাজকোষ পূর্ণ’ করে যে বসন্ত আসে, সেই নবীনতাকে অভ্যর্থনার জন্য নারী সেবা সংঘ এবং সুনন্দনের নান্দনিক উপস্থাপন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বসন্ত’ নাটকের অংশবিশেষ। আধুনিকতার বন্ধনে প্রকৃতিকে আবদ্ধ করতে ব্যর্থ এই মানবসমাজ অবচেতনে তারই প্রেমে আবৃত। অনুষ্ঠান পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় ভূয়সী প্রশংসা পাবেন এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। পূর্ণিমা ঘোষের নৃত্যের ছন্দ ও সুনন্দনের সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে যাঁর একক সঙ্গীত নিবেদন স্পর্শ করে বসন্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে। সেই এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘সে কি ভাবে গোপন রবে’, ‘মা যেয়ো না কো’ গানগুলির মধ্য দিয়ে মুহূর্তে একাত্ম হয়ে যাওয়া যায় মাধবী, ঝুমকোলতা অথবা বসন্তের অন্যান্য চরিত্রের সঙ্গে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঋতুপর্যায়ের নির্বাচিত কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন নয়, এক নাটকীয় বাতায়নে এণাক্ষীর সফল প্রচেষ্টায় শ্রোতারা ভেসে গেলেন বসন্তের দখিনা বাতাসে, আবিরের রঙে রাঙা হল সেই সন্ধ্যার আকাশ।
|
সঙ্গীত মহল-এর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সন্ধ্যা আয়োজিত হয় রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে। অনুষ্ঠানের সূচনায় দ্বৈত কণ্ঠে খেয়াল শোনান ইন্দ্রাণী বাগচি ও নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়। হংসধ্বনি রাগে তাঁরা দু’টি বন্দিশ শোনান বিলম্বিত একতাল ও মধ্যলয় একতালে। দু’জনার গায়ন শৈলীতে সুন্দর সমঝোতার পরিচয় পাওয়া যায়। তবলায় বিশ্বরঞ্জন নন্দী, হারমোনিয়ামে সনাতন গোস্বামী সুসঙ্গত করেন। পরবর্তী অনুষ্ঠানে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন সুপ্রিয়া দত্ত। তাঁর প্রথম নিবেদন রাগ পুরিয়া কল্যাণ। বিলম্বিত একতাল ও মধ্যলয় তিনতালের দু’টি বন্দিশে বোলতান বিভিন্ন ছন্দযুক্ত তান, সর্বোপরি সঠিক রাগদারিতে শিল্পী রেওয়াজ ও তালিমের নিদর্শন রাখেন। খেয়ালের পর খাম্বাজ ঠুংরি ও ভজনে শিল্পী স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তবলা ও হারমোনিয়ামে সার্থক সহযোগিতা করেন অশোক দত্ত ও এবং সনাতন গোস্বামী। এ দিনের শেষ অনুষ্ঠানে শ্রীখোল ও তবলার যুগলবন্দি শোনান গোপাল বর্মন, মধু বর্মন। বিলম্বিত ও দ্রুত তিনতালে বিভিন্ন কায়দা, রেলা, টুকরা, চক্রদার ও গত অত্যন্ত রেওয়াজের সঙ্গে পেশ করেন। দুই শিল্পীর পারস্পরিক বোঝাপড়া অনুষ্ঠানটিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। হারমোনিয়ামে নগমা রাখেন সনাতন গোস্বামী।
|
সম্প্রতি খেলাত ভবনে অনুষ্ঠিত হল এক সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ’। আয়োজনে বিবেকজ্যোতি। বিশ্বরূপ রুদ্রর পরিবেশনায় স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রীরামকৃষ্ণের পছন্দের কিছু গান উপস্থিত শ্রোতাদের অন্তরে গভীর রেখাপাত করে। ঘটনার কালক্রম অনুযায়ী প্রতিটি গানের শুরুতে অমিত রায়ের ভাষ্যপাঠ অনুষ্ঠানটির মাধুর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। অমিত রায়ের বাচিক অভিনয়ও মনে রাখার মতো। এ দিন বিশ্বরূপের কণ্ঠে ‘যাবে কি হে দিন আমার’, ‘মন চল নিজ নিকেতনে’, ‘জুড়াইতে চাই’ ইত্যাদি গানগুলি মনে গভীর রেখাপাত করে। এ দিনের অনুষ্ঠানে কীবোর্ডে ছিলেন সৌমেন দত্ত, তবলায় মলয় দাস এবং পারকাসনে মুরারী পাত্র।
|
সম্প্রতি ‘ঝুমুর কলাসঙ্গম’ রবীন্দ্রসন্ধ্যায় গান শোনালেন শিখা মিত্র। ‘ওই মহামানব আসে’, ‘ভেঙেছো দুয়ার’ গান দু’টি শ্রোতাদের হৃদয় জয় করে নেয়। কৃষ্ণেন্দু সেন শোনালেন ‘তুমি রবে নীরবে’। এছাড়াও গাইলেন মানসী ভট্টাচার্য, মনোশ্রী লাহিড়ি, বেলা সাধুখাঁ প্রমুখ। আবৃত্তিতে মৌ গুহ, উষসী সেনগুপ্ত ও কৃষ্ণা মজুমদার।
|
সম্প্রতি রবীন্দ্রগান শোনালেন অরূপ চৌধুরী। তার মধ্যে ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে’, ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’, ‘মনে কী দ্বিধা রেখে’ অপূর্ব। প্রতিটি গানের আঙ্গিক ও ভাব ধরা পড়েছে শিল্পীর দক্ষ গায়কীর গুণে। |