উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
পানিহাটি
বিপন্ন উদ্ধার
যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে বাড়িটি। অর্থের অভাবে সংস্কার সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়েছেন ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষ। তাই অবিলম্বে পানিহাটি দমকল কেন্দ্রের বাড়ি খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। তবু বাড়ি ছাড়তে নারাজ কর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, কেন্দ্রটি অন্য কেন্দ্রের সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে মিলিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, অতীতে এমন নজির আছে। খড়দহের সুখচরের রাজা রোডে রয়েছে রাজ্য অগ্নি নির্বাপণ ও জরুরি পরিষেবা দফতরের ‘ডি’ ডিভিশনের পানিহাটি দমকল কেন্দ্র। দমকল-সূত্রের খবর, প্রায় ৪০ বছর এই ভাড়া বাড়িতে কেন্দ্রটি রয়েছে।
বাড়ি ও সংলগ্ন ফাঁকা জায়গা মিলিয়ে প্রায় ১৪ কাঠা জমি। ১৯৮৭-এর পরে এই জমির লিজ আর পুনর্নবীকরণ হয়নি। তাই দীর্ঘ দিন ভাড়া বাকি পড়ে রয়েছে।
বাড়িটি এখন ভগ্নপ্রায়। অফিসঘর থেকে কর্মীদের থাকার জায়গা সর্বত্র পলেস্তরা খসে পড়েছে। কোথাও লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও মাথার উপরে বিপজ্জনক ভাবে চাঙড় ঝুলছে। দমকল দফতরের কর্তারা জানান, বাড়িটির অবস্থা খুব বিপজ্জনক হলেও মালিক তা মেরামত করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। জায়গাটি অবিলম্বে ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য দমকল দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে দমকলমন্ত্রী সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন ওই জমির মালিক মমতা দেবীচৌধুরানি। তাঁর আইনজীবী প্রমথেশ সরকার বলেন, “পাঁচ বছর আগে ওই জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বিকল্প জায়গার সন্ধানও দিয়েছিলাম। কিন্তু দমকল দফতর কোনও সদুত্তর দেয়নি। এখন শুধু জমিটি ফাঁকা করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।” দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “ওই কেন্দ্রটির খুবই খারাপ অবস্থা। সারানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই কর্মীদের সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু ওঁরা রাজি না হলে তো হবে না।”
পানিহাটি দমকল কেন্দ্রের কর্মী এবং আইএনটিটিইউসি পরিচালিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সদস্যেরা ওই দমকল কেন্দ্রটি সরানোর বিরুদ্ধে। যোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁরা জানান, কামারহাটির পর থেকে টিটাগড়, মধ্যমগ্রাম-সহ গঙ্গার পাড়-সংলগ্ন এলাকা এবং সংলগ্ন দু’টি শিল্পাঞ্চলের একমাত্র ভরসা পানিহাটি দমকল কেন্দ্র। বিকল্প জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত এই কেন্দ্র ছাড়তে রাজি নন কর্মীরা। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুভাষইন্দু দাস জানান, পানিহাটির দমকল কেন্দ্রটি কামারহাটি কেন্দ্রের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর আগে দমদম, বজবজ, বরাহনগরের মতো দমকলকেন্দ্রগুলি অন্য কেন্দ্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি নতুন করে আর তৈরি হয়নি।
সুভাষইন্দুবাবু বলেন, “জনস্বার্থের কথা ভেবেই আমরা কামারহাটিতে যেতে আপত্তি জানিয়েছি। বিপজ্জনক হলেও কর্মীরা এখানে থেকেই কাজ করতে রাজি আছেন। সরকারের সঙ্গে আমাদের লড়াই নয়। পানিহাটি দমকল কেন্দ্রের জন্য বিকল্প জায়গা না হওয়া পর্যন্ত বাড়ির মালিক যেন কেন্দ্রটি তুলে না দেন তাই আবেদন করছি।” তবে রাজ্য দমকলের এক কর্তা বলেন, “নতুন জায়গা দেখা হয়েছে। তবে সেখানে কাজ শুরু করতে কিছু সময় লাগবে। কিন্তু যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে।”

ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.