পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
যশোহর রোড
দুর্ভোগের রাজপথ
রাস্তার উপরে যেন ছোটখাটো একটা ডোবা। আর শহরের রাজপথে সেই ডোবার সামনে পড়ে কার্যত দিশেহারা গাড়ি। কোনও গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ার উপক্রম, আবার কোনও গাড়ি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিছু চালক গর্ত পেরিয়ে যাচ্ছেন স্রেফ ভাগ্যের জোরে।
গ্রাম বা মফস্সলের রাস্তা নয়, বিমানবন্দরের পাশে যশোহর রোডের অবস্থা এখন এমনই। এয়ারপোর্ট এক নম্বর মোড় থেকে বিরাটি মোড় পর্যন্ত যশোহর রোডের অবস্থা এমনিতেই বেশ খারাপ ছিল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে রাস্তার হাল আরও খারাপ হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, এত দিন এই গর্তগুলির মধ্যে জল ছিল না। এখন বৃষ্টির জল গর্তে জমে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে।
সকাল থেকেই যশোহর রোডের এই অংশে গাড়ির চাপ খুব বেশি থাকে। কলকাতা-উল্টোডাঙা হয়ে ভিআইপি রোড থেকে আসা বারাসতগামী বাস এবং দমদম থেকে যশোহর রোড ধরে আসা বারাসতগামী বাসগুলি এই রাস্তা দিয়েই যায়। অফিসের সময় সকাল ও সন্ধ্যায় এই রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকে প্রচণ্ড বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, “এমনিতেই এই রাস্তায় যানজট থাকে। তার মধ্যে রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ি খুব আস্তে চলছে। ফলে যানজট আরও বাড়ছে। রাস্তা খারাপ বলে বিপাকে পড়ে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়াটাও এখন নতুন ঘটনা নয়।” বারাসত-ধর্মতলা রুটের একটি বাসের চালক শোভন দাস বললেন, “এই রাস্তায় এলে মনে হয় দুর্গম পথে গাড়ি চালাচ্ছি। সব থেকে খারাপ অবস্থা আড়াই নম্বর গেটের কাছে। বর্ষায় অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মাঝেমধ্যেই বড় ট্রাক খারাপ হয়ে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। তখন যানজট প্রায় কৈখালি পর্যন্ত চলে আসে।”
এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেট থেকে তিন নম্বর গেট পর্যন্ত রাস্তার আশপাশে প্রচুর আবাসন তৈরি হয়েছে। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারের আবাসনগুলোর বাসিন্দারাও এই রাস্তা ব্যবহার করেন। ওই আবাসিকদের অভিযোগ, যশোহর রোড ক্রমশ খানাখন্দে ভরে যাওয়ায় যাতায়াত করাটাই এখন দুঃস্বপ্ন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, যশোহর রোডের ওই অংশ সারানো হয়েছিল গত বছর পুজোর আগেই। আড়াই নম্বর গেটের কাছে এক রেস্তোরাঁর মালিক বললেন, “গত বছর পুজোর আগে এই রাস্তাটা ঠিক করা হল। ভেবেছিলাম ধুলো থেকে নিস্তার মিলল। কিন্তু ফের সেই আগের অবস্থা তৈরি হয়েছে।”
প্রশ্ন উঠছে, মাত্র কয়েক মাসে ফের খানাখন্দে কেন ভরে গেল ওই রাস্তা? রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মনোদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই রাস্তার দু’পাশের নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। জল রাস্তার বিটুমিনের ভিতরে ঢুকে প্রথমে ফাটল তৈরি করে। রাস্তায় ফাটল যখন হয় তখন তা খেয়াল না করলে বড় গর্ত তৈরি হয়ে যায়।” তবে সড়ক-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, নিকাশি নালা ঠিক করা যদি খুব সমস্যার হয় তা হলে, রাস্তার দু’পাশের ফুটপাথ কংক্রিট দিয়ে তৈরি করলে সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব।
যশোহর রোডের এই অংশটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির কৃষ্ণনগর শাখা। ওই দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, বর্তমানে তাঁরা যশোহর রোডের ওই অংশের দেখভাল করলেও বারাসত থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সন্তোষপুর পর্যন্ত ওই রাস্তা বর্তমানে পূর্ত দফতরের হাতে চলে এসেছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির কৃষ্ণনগর শাখার এক প্রজেক্টের ডিরেক্টর জগন্নাথ সামন্ত বলেন, ‘‘ওই জায়গাটি বার বার খারাপ হচ্ছে। গত বছর যে ঠিকাদার কাজ করেছিলেন তাঁর দায় আছে ওই রাস্তাটা ঠিক করার। তাঁকেই সারাই করাতে বলেছি। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি এখন রাস্তার ওই অংশটি দেখভাল করছে। মেরামতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে ওই এলাকার নিকাশির সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা খুবই প্রয়োজন।”

ছবি: শৌভিক দে ও সজল চট্টোপাধ্যায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.