পূর্ব কলকাতা
বিপর্যয় মোকাবিলা
ঠুঁটো জগন্নাথ
র্ষার প্রথম ভারী বর্ষণেই বিধাননগর থেকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল কার্যত বানভাসি হয়ে গেল। এর মধ্যে বিধাননগর ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ২১টি থানা এলাকা পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রশাসনের কাছ থেকে বিশেষ সাহায্য মেলেনি। কারণ, এই অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি উপযুক্ত বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা।
দুই কমিশনারেটের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কমিশনারেট তৈরির পরে দু’বছর পেরিয়ে গেলেও তৈরি হয়নি প্রয়োজনীয় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আলাদা বাহিনী রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনই ছোটখাটো সমস্যা মোকাবিলা করে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ডুবুরি, নৌকা, মইয়ের মতো পরিকাঠামো নেই। সব কিছুর জন্য জেলা প্রশাসনের উপরে নির্ভর করতে হয়।
সাম্প্রতিক একটানা বৃষ্টিতে বিধাননগর কমিশনারেটের দত্তাবাদ, নয়াপট্টি, নিউটাউনের একাংশ এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পানিহাটি, সোদপুর, কামারহাটি এলাকায় সব চেয়ে খারাপ অবস্থা হয়। জলবন্দি হয়ে পড়েন অসংখ্য বাসিন্দা। প্রায় সমস্ত পরিষেবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পানিহাটির বাসিন্দা তুষার দাসের কথায়: ‘‘জলবন্দি হয়ে পড়েছিলাম। এতটাই জল জমেছিল যে, রোগীকে নিয়ে এলাকায় কোনও অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে রাজি হচ্ছিল না। স্থানীয় পুর প্রশাসন শুধু জল বার করার চেষ্টা করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলার বাহিনী থাকলে সুবিধা হত।’’
কামারহাটি বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “৪০-৫০ বছর ধরে কামারহাটি পুর-এলাকায় কোনও ভূগর্ভস্থ নিকাশি নেই। নেই ম্যানহোলও। ফলে একটু বৃষ্টিতেই এলাকা প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। ঘরে পাঁচ-ছ’ফুট জল। এলাকার মানুষ অবিলম্বে জল বের করার দাবি জানিয়েছেন।” তাঁর কথায়: “আমরা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘরে বৈঠকে বসি। এলাকার সাংসদ সৌগত রায়, কেএমডিএ-র অফিসারেরা এবং স্থানীয় কাউন্সিলররাও উপস্থিত ছিলেন। ঠিক হয়েছে, জেটিং মেশিন বসিয়ে জল নামাতে হবে। এই মেশিন নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে রয়েছে।”


মদনবাবু জানান, সিএসটিসি থেকে ১৪ কাঠা জমি দেওয়া হয়েছে কেএমডিএ-কে। সেখানে জল ফেলার কাজ হবে। বাগজোলা খাল অনেক দূর। সেখানে জল ফেলা সম্ভব নয়। কামারহাটি-বেলঘরিয়ার পুকুরে জল ফেলা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে।
শুধু বর্ষাই নয়, বিপর্যয় হতে পারে আরও নানা ভাবে। যেমন, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে রয়েছে অনেক বহুতল। সেখানে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কী হবে? এই আশঙ্কার সুস্পষ্ট জবাব মেলেনি। যদিও দমকলের দাবি, আগুন লাগলে কুড়ি-বাইশ তলা পর্যন্ত তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। এই ২১টি থানা এলাকায় বহু পিছিয়ে পড়া এলাকাও রয়েছে। যেমন, সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকার ভেড়ি অঞ্চল। এখানে জল জমলে বন্দি থাকা ছাড়া উপায় নেই বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা রমা মণ্ডলের কথায়: ‘‘এলাকায় অনেক কুয়ো রয়েছে। কেউ কুয়োয় পড়ে গেলে তোলার উপায় নেই।’’
আবার উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সময়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেট থেকে ডুবুরি আনতে হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় নৌকাও বিধাননগর কমিশনারেটের নেই। পাশাপাশি, বাগুইআটি, কেষ্টপুরের মতো জনবহুল এলাকায় অবিলম্বে বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিধাননগর মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়: “ডুবুরি ও নৌকা দ্রুত আনানোর ব্যবস্থা আছে। তবে এখানেও এই ব্যবস্থা চালু করার চিন্তাভাবনা চলছে।” বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, কমিশনারেটের পরিকাঠামোও বাড়ানো হবে।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) কল্লোল গণাই বলেন, ‘‘এই ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলায় সিভিল ডিফেন্সের মতো একটি বাহিনী আমাদের রয়েছে।’’ যদিও বাসিন্দাদের দাবি, এই বাহিনীর কথা তাঁরা জানেন না। বিপর্যয় ঘটলে তাঁরা স্থানীয় থানায় জানান। পুলিশ সূত্রে খবর, থানা থেকে খবর না গেলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কিছু করতে পারে না। পুলিশ মহলের একাংশ জানান, বিপর্যয় মোকাবিলা সম্পর্কে তাঁদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। যদিও জেলা, মহকুমা ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সম্প্রতি এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত দু’ধরনের বাহিনী তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। বন্যা, খরা, সাইক্লোন এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একটি এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আর একটি। যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যবস্থা কার্যকরী হবে। যদিও উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের দাবি: “দু’টি কমিশনারেটেরই বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বড় কোনও দুর্যোগের ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টিতে জল জমার মতো দুর্যোগে স্থানীয় প্রশাসনই ব্যবস্থা নেয়।”

ছবি: শৌভিক দে ও সজল চট্টোপাধ্যায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.